🌹বি.এ সেমিষ্টার-৪::মেজর বাংলা(পেপার-১)সাজেশন(PART-2)🌹

✍️প্রশ্নের মান-৫:

📝 1. “আমার গৌরীরে ল’য়ে যায় হর আসিয়ে”—পদটির বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

✅ উত্তর:
শাক্ত পদাবলীর অন্যতম বিশিষ্ট কবি কমলাকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর এই বিখ্যাত পদে একজন মায়ের হৃদয়ের যন্ত্রণা ও কন্যাবিয়োগের বেদনা অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে তুলে ধরেছেন। “আমার গৌরীরে ল’য়ে যায় হর আসিয়ে”—এই পংক্তিতে কবি পুরাণকাহিনির আড়ালে মানবিক অনুভূতির চিত্র এঁকেছেন।

পদের পটভূমি অনুযায়ী, দেবী পার্বতী বা গৌরী তাঁর স্বামী মহাদেবের সঙ্গে কৈলাসে গমন করছেন। আর তাঁর মা মেনকা কন্যার বিদায়ে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। তিনি শঙ্কিত মনে ভাবছেন, শিবের মতো ভয়ঙ্কর, অপ্রচলিত, ব্যতিক্রমী স্বামীর সংসারে আদুরে মেয়ে গৌরী কেমন থাকবে! তাই মেনকা বলেন, যাঁর পোশাক বাঘছাল, যাঁর অলংকার বিষধর সাপ, সেই হর যদি জামাতা হন, তবে মেয়ের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নিশ্চয়তা কোথায়? মেনকার চোখে এই বরপুত্র এক পাগল সাধক, যে সংসারের সাধারণ আনন্দ-বেদনা বোঝে না।

অন্যদিকে, গিরিরাজ হিমালয় স্ত্রীর এই আশঙ্কা দূর করতে চান। তিনি বলেন, শিব সামান্য মানুষ নন; তিনি মহাশক্তিধর, মহাপ্রেমিক, বিশ্বকল্যাণের প্রতীক। তাঁর মতো স্বামী পেলে গৌরী চিরদিনের জন্য ধন্য হবে। তাঁর সান্নিধ্যে মেয়ের জীবনে সত্যিকারের সুখ ও শান্তি আসবে।

শেষে পদকার কমলাকান্তও গিরিরাজের যুক্তি মেনে নেন এবং মেনকাকে বোঝান—
“পরম আনন্দে গো তনয়া দেহ পাঠায়ে।”
অর্থাৎ, যাঁর হাতে সমগ্র সৃষ্টির দায়িত্ব, তাঁর কাছে কন্যাকে পাঠানো ভয়ের নয়, বরং গৌরবের বিষয়।

এই পদে পৌরাণিক রূপকের আড়ালে কবি এক জননীর মনের গভীর ভালোবাসা, উদ্বেগ, অভিমান ও আত্মসমর্পণকে অনন্য কবিত্বে প্রকাশ করেছেন। মাতৃত্বের এমন বাস্তব ও মানবিক রূপ শাক্ত পদাবলীতে দুর্লভ।

📝 2. “মনরে কৃষিকাজ জান না।” — পদটির মধ্যে দিয়ে পদকার কোন বক্তব্যকে তুলে ধরতে চেয়েছেন? আলোচনা করো।

উত্তর :
শাক্ত কবি রামপ্রসাদ সেন তাঁর এই বিখ্যাত পদের মাধ্যমে সহজ উপমায় গভীর আধ্যাত্মিক সত্য প্রকাশ করেছেন। এখানে কবি নিজের মনকে সম্বোধন করে বলেন, মন যেন কৃষকের মতো হয়ে মাতৃসাধনার চাষ করতে শেখে।

যেমন কৃষক জমিতে ফসল ফলাতে হলে চাষ, বীজ বপন ও জলসেচন করে, তেমনি মানুষকেও মায়ের কৃপা বা পুণ্যলাভের জন্য সাধনা করতে হয়। এই সাধনাই জীবনের ‘কৃষিকাজ’। জমিতে চাষ না করলে ফসল জন্মায় না, তেমনি ভক্তি ও সাধনা না করলে মায়ের কৃপালাভও সম্ভব নয়।

কবি বলেন, মন যদি অলস থাকে, তবে জীবনের ক্ষেত আগাছায় ভরে যাবে—অর্থাৎ, অজ্ঞানতা, লোভ ও অহংকারে মন কলুষিত হবে। তাই মনকে পরিশ্রমী কৃষকের মতো করে সাধনায় নিয়োজিত থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মায়ের নামই সেই বেড়া, যা পুণ্যফলকে রক্ষা করে। অর্থাৎ, যদি মানুষ কালীমার নামস্মরণে নিয়ত থাকে, তবে তার অর্জিত পুণ্য ও আধ্যাত্মিক উন্নতি কখনো নষ্ট হবে না।

এই পদের মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, সত্যিকারের ভক্তি মানে পরিশ্রম, ধৈর্য ও আন্তরিক সাধনা। অলস মন বা মুখের ভক্তি দিয়ে ঈশ্বরলাভ সম্ভব নয়।

অতএব, রামপ্রসাদের এই পদ জীবনের এক গভীর শিক্ষা দেয়—যে মন মাতৃভক্তির চাষ জানে, সেই মনই সত্যিকার মুক্তি ও আনন্দের ফসল লাভ করে।

📝 3. “মোরে হৈয়া শুভোদয়, নাশ দিনমণি বয়, যেন না সহিতে হয় শিবের বচন-বাণ।” — উক্তিটির বক্তা কে? উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

উত্তর :
উদ্ধৃত উক্তিটি শাক্ত কবি কমলাকান্ত ভট্টাচার্য রচিত বিজয়া পর্যায়ের এক মর্মস্পর্শী পদ থেকে গৃহীত। এর বক্তা হলেন মেনকা, দেবী উমার জননী। এই উক্তির মধ্যে দিয়ে তিনি নবমীর নিশিকে উদ্দেশ্য করে আবেদন জানিয়েছেন, যেন সূর্যোদয় না ঘটে, দিন না আসে—কারণ দিন এলেই কন্যা উমাকে বিদায় দিতে হবে।

উমা তিন দিন পিতৃগৃহে এসে ছিলেন—অষ্টমী, নবমী ও দশমী। নবমীর রাত শেষ হলেই আসে দশমী, আর দশমী মানেই বিজয়া—কন্যার বিদায়ের দিন। মেনকার হৃদয় তখন ভরে উঠেছে আশঙ্কা ও শোকে। প্রিয় কন্যাকে হারানোর যন্ত্রণা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। তাই তিনি নবমীর নিশিকে বলেন, “তুমি গত হয়ো না, তোমার সঙ্গে সূর্যকেও নিয়ে যাও, যেন দিন না আসে, শিবের বচন—‘চলো গৌরী’—আমি যেন শুনতে না পাই।”

এই উক্তির মধ্যে দিয়ে কবি মেনকার অস্থির মাতৃমনের গভীর আকুলতা ও মানবিক দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি জানেন, প্রকৃতির নিয়ম কেউ থামাতে পারে না, তবু মাতৃস্নেহের তীব্রতায় তিনি অবাস্তব প্রার্থনাও করেন—দিন না আসুক, সময় থেমে থাকুক।

এই অনুভূতির মধ্যে শুধু এক জননীর আবেগ নয়, বাঙালি সমাজে বিজয়ার করুণ বিদায়বেলার চিরচেনা রূপও ধরা পড়েছে। শারদীয়া দুর্গাপূজার পর মা দুর্গার বিদায়ে যেমন সর্বজনীন বেদনা ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি মেনকার মুখেও সেই সর্বজনীন মাতৃবেদনার প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

অতএব, এই উক্তির মাধ্যমে কবি কমলাকান্ত মানবিক মায়া-মমতা, সময়ের নিষ্ঠুরতা এবং মাতৃস্নেহের চরম প্রকাশকে এক অমর কাব্যিক রূপ দিয়েছেন।

📝 4. “খলের প্রধান যত কে আছে তোমার মত— আপনি হইয়ে হত বধরে পরেরি প্রাণ।” — কে কাকে ‘খল’ বলেছেন? কেন? উক্তিটির মধ্যে দিয়ে বক্তার কোন মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে? আলোচনা করো।

উত্তর :
উদ্ধৃত উক্তিটি শাক্ত কবি কমলাকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘বিজয়া’ পর্যায়ের একটি বিখ্যাত পদ থেকে গৃহীত। এখানে বক্তা মেনকা, আর যাকে তিনি ‘খল’ বলেছেন সে হল নবমীর নিশি।

‘খল’ শব্দের অর্থ—যে নিজে ধ্বংস হয়ে অপরের সর্বনাশ ঘটায়। মেনকা নবমীর নিশিকে খল বলেছেন কারণ নবমীর নিশি অতিবাহিত হলেই আসে দশমী, আর দশমী মানেই কন্যা উমার বিদায়ের দিন। উমাকে বিদায় দিতে হবে—এই চিন্তায় মেনকার মন ভরে উঠেছে উদ্বেগ, ভয় ও শোকে। তিনি চান না নিশি শেষ হোক, চান না দশমী আসুক। কিন্তু তিনি জানেন, প্রকৃতির নিয়ম কেউ আটকাতে পারে না। নবমীর নিশি নিজে বিলীন হয়ে দশমীর আগমনের পথ করে দেবে—এই কারণেই মেনকা তাকে খল বলেছেন, কারণ তার গতিই আনবে মায়ের অশ্রু ও কন্যাবিরহের যন্ত্রণা।

এই উক্তির মধ্যে দিয়ে একজন কন্যাস্নেহে উন্মত্ত মায়ের অস্থির মানসিকতা ও আত্মকেন্দ্রিক ভালোবাসা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। মেনকার দুঃখের কেন্দ্রে কেবল নিজের কষ্টই রয়েছে; তিনি ভাবতে পারেন না, উমার নিজের ইচ্ছা কী, বা শিবেরও যে স্নেহ ও ভালোবাসা আছে, তা-ও তাঁর মনে আসে না।

অতএব, এই উক্তি একদিকে যেমন মাতৃস্নেহের অন্তহীন গভীরতা ও আবেগের প্রকাশ, অন্যদিকে তেমনি মেনকার অচেতন আত্মকেন্দ্রিকতার পরিচয়ও বহন করে। কমলাকান্ত এই পদের মাধ্যমে বাঙালি মায়ের চিরন্তন কন্যাবিরহ-ব্যথাকে কাব্যিক রূপে অমর করেছেন।

📝 5. “কামিনী করিল বিধি, তেঁই হে তোমারে সাধি, নারীর জনম কেবল যন্ত্রণা সহিতে।” — কোন্ পর্যায়ের পদের অংশ? পদটি কার রচনা? বক্তার এমন উক্তির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর :
উদ্ধৃত অংশটি ‘আগমনী পর্যায়ের’ পদ থেকে গৃহীত, যার রচয়িতা কমলাকান্ত ভট্টাচার্য। এখানে বক্তা মেনকা, যিনি কন্যা উমার জন্য গভীর মমতায় উদ্বেল।

স্বামীর প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও বেদনা থেকেই মেনকা এই উক্তিটি করেছেন। কন্যা উমাকে তিনি পতিগৃহে পাঠিয়েছেন, কিন্তু জামাতা শিবের কঠোর, নির্লিপ্ত জীবনযাপন ও সংসারের অভাব-অনটনের কথা জেনে তাঁর মনের শান্তি নষ্ট হয়েছে। উমার কষ্টের কথা ভেবে তাঁর মাতৃহৃদয় ব্যথিত হয়েছে। মেয়েকে দেখতে চাইলেও সমাজ-নিয়ম তাঁকে বাঁধা দেয়; নিজে জামাতা গৃহে যাওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব।

এই অসহায়তা ও সামাজিক বঞ্চনার ফলেই মেনকা বলেন—বিধাতা তাঁকে নারী ক’রে সৃষ্টি করেছেন, তাই তাঁর জীবনের লক্ষ্য যেন কেবল যন্ত্রণা সহ্য করা। এখানে নারীজীবনের বেদনাভরা বাস্তবতা ও সমাজের নারীবিদ্বেষী রীতি-নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।

উক্তিটির মধ্যে দিয়ে মেনকার মাতৃত্বের বেদনা, স্বামীর প্রতি অভিমান ও নারীমনের প্রতিবাদী চেতনা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি শুধু এক কন্যাবিরহিণী মা নন, তিনি সেই যুগের নারীর মুখপাত্র, যিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজের যন্ত্রণা বিধাতার উপরই ন্যস্ত করেছেন।

অতএব, এই উক্তিতে নারীর চিরন্তন বেদনা ও প্রতিবাদের সুর প্রতিফলিত হয়েছে।।

📝 6. “সতিনী সরলা নহে, স্বামী সে শ্মশানে রহে, তুমি হে পাষাণ, তাতে না কর মনেতে।” — উক্তিটি কার? কাকে উদ্দেশ্য ক’রে এই উক্তি করা হয়েছে? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর :
উদ্ধৃত উক্তিটি মেনকার, এবং তিনি এটি স্বামী গিরিরাজকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। এখানে মেনকার কণ্ঠে ফুটে উঠেছে এক অসহায়, কন্যাবিরহিণী মায়ের গভীর বেদনা ও ক্ষোভ।

এই পদের প্রেক্ষাপট ‘বিজয়া পর্যায়ের’—যখন উমা শ্বশুরালয় থেকে বিদায় নিয়ে কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন। সেই মুহূর্তে মেনকার মনের অবস্থাই এই কথার মধ্যে ধরা পড়েছে। তিনি উমার সতিনী গঙ্গার কথা উল্লেখ করে বলেন—গঙ্গা সরল নয়, স্বামী শ্মশানে থাকেন, অথচ গিরিরাজের মনে কোনো দুঃখ নেই। এখানে ‘স্বামী শ্মশানে রহে’ বলতে তিনি শিবের কঠিন, নির্জন জীবনযাপনকে বোঝাতে চেয়েছেন।

মেনকার বক্তব্যে একদিকে গিরিরাজের শীতল মনোভাবের প্রতি অভিমান, অন্যদিকে উমার দুঃখে মাতৃত্বের হাহাকার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বিস্মিত—কীভাবে গিরিরাজ এত পাষাণ হতে পারেন, যখন তাঁদের কন্যা এমন তপস্যাময় জীবনে দিন কাটাচ্ছেন!

এই উক্তির মাধ্যমে মেনকার মাতৃত্ববোধ, স্বামী-সংবেদনশূন্যতার প্রতি বিদ্রূপ এবং সমাজে নারীর সংবেদনশীল অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর কণ্ঠে যে প্রতিবাদ ও করুণার মিশেল তা বাঙালি মায়ের চিরন্তন মমতা ও কন্যাবিরহের বেদনাকে এক অবিনশ্বর রূপ দিয়েছে।।

📝 7. ভাঁড়ু দত্তের পিতা ও পিতামহের নাম কী? কালকেতুর সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের দিন নিজের পরিবারের পরিচয় কতটা দিয়েছে? নিজের ভাষায় আলোচনা কর।

উত্তর :
ভাঁড়ু দত্তের পিতার নাম হরিদত্ত, পিতামহের নাম জয়দত্ত। ভাঁড় দত্ত গরিব হলেও দাম্পত্য ও বংশগৌরব নিয়ে বড়োই দাম্ভিক। সে নিজের পরিবার, কুলবংশ, বিবাহ-সম্পর্ক এবং সামাজিক মর্যাদা সবই ফলাও করে রাজা কালকেতু বা যে কারো কাছে তুলে ধরে। প্রথম পরিচয়ের দিন ভাঁড় দত্ত পুরোপরি নিজের পরিবারের পরিচয় দিয়েছে। সে উল্লেখ করেছে, তার দুই স্ত্রী, চার শালা, ছয় জামাই, নয় মেয়ে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সাতটি বাড়ি। এছাড়াও পুত্র-পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিরাও আছে।

ভাঁড়ু নিজেকে কায়স্থ প্রধান ও প্রজাদের উপর রাজস্ব আদায়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থাপন করে। সে দাবি করে, প্রজাদের ওপর কর্তৃত্ব চালাতে এবং তাদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে রাজা বা অন্য কারোর সাহায্য প্রয়োজন। একই সঙ্গে নিজের বিশাল পরিবার রক্ষা করতে খাদ্য, পশু এবং অন্যান্য সামগ্রী চাইছে। ভাঁড়ুর এই আচরণ প্রতারক ও স্বার্থপরতার পরিচয় দেয়, যদিও বাইরের চোখে সে ক্ষমতাবান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে হতে চায়।

ভাঁড়ু দত্তের এমন প্রথিত পরিচয় প্রদর্শন মূলত রাজা কালকেতুর কাছে ক্ষমতা ও সম্পদের আকাঙ্ক্ষা দেখানোর জন্য। সে প্রমাণ করতে চায় যে, তার পরিবার বিশাল এবং সবই সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রিত। এভাবে সে নিজের অসামর্থ্য লুকিয়ে দিচ্ছে এবং কথার জাদুতে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তার লক্ষ্য, বিরাট পরিবারের ভরণপোষণ ও সুবিধা নিশ্চিত করা। এর ফলে পাঠক তার অকর্মণ্য, প্রতারক এবং আত্মমুগ্ধ মানসিকতা উপলব্ধি করতে পারেন।

📝 8. “হাটুয়ার বোল শুনি রোষযুত নৃপমণি আজ্ঞা দিল ভাত্তুরে আনিতে।” — নৃপমণি কে? হাটুয়ারা তাঁকে কী বোল শুনিয়েছে?

উত্তর :
উক্তির নৃপমণি হলেন রাজা কালকেতু। হাটুয়ারা, যারা হাটে বেচা-কেনা করে, তাঁকে ভাঁড় দত্তের অত্যাচারের খবর জানিয়েছে। ভাঁড় নিজেকে হাটের মণ্ডলের প্রধান প্রমাণ করতে ও প্রজাদের ওপর শাসন চালাতে বিভিন্ন কৌশল চালায়।

হাটুয়ারা জানান, ভাঁড় দত্ত মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক ভ্যাট, শাক-বেগুন, ধান-চাল, হাঁড়ি, গবাদি পশু ইত্যাদি আদায় করে। যারা দিতে অস্বীকার করে বা দাম কম দেয়, তাদের মারধর করা হয়। তার ছেলেরা ও বেটারা এই লুটপাটের অংশীদার। এমন আচরণে সাধারণ প্রজাদের ক্ষতি হয়, শাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

এই কারণে হাটুয়ারা ক্ষুব্ধ হয়ে রাজা কালকেতুকে বিষয়টি জানায়। উক্তি থেকে বোঝা যায়, রাজা হাটুয়ারাদের বোল শুনে রোষার্ত হন এবং ভাঁড় দত্তের অব্যবস্থাপনা ও অত্যাচার নিন্দনীয় বলে গণ্য করেন। এটি ভাঁড়ের প্রহেলিকাময় চরিত্র এবং সমাজে তার প্রভাব সম্পর্কে পাঠককে সচেতন করে।

ভাঁড় দত্তের এই আচরণ প্রজাদের প্রতি স্বার্থপরতা, লোভ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে।

📝 9. কালকেতু দেবী চণ্ডীর কাছ থেকে কী ধন এবং কী উপদেশ লাভ করেন? সেই ধন ও উপদেশ প্রাপ্তির বৃত্তান্ত আলোচনা কর।

উত্তর :
কালকেতু দেবী চণ্ডীর কাছ থেকে একটি বহুমূল্য অঙ্গুরী এবং সাত ঘড়া ধন লাভ করেন। দেবীর প্রদত্ত এই ধন ও অঙ্গুরীর সাহায্যে কালকেতু বন কেটে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পান। দেবী তাকে প্রজা পালন, প্রাণী হিংসা এবং অযথা প্রাণী হত্যা না করার উপদেশও দেন। দেবী শুনে ছিলেন, যেভাবে কালকেতুর হাতে প্রজা ও পশুর ক্ষতি হয়, তা হ্রাস করতে দেবী এই উপদেশ ও ধন প্রদান করেছেন।

প্রথমে দেবী কালকেতুর কাছে স্বর্ণ গোধিকা, মায়ামৃগ এবং পরে ষোড়শী নারীর রূপে ছলনা করে অঙ্গুরী প্রদান করেন। এই অঙ্গুরী ভাঙিয়ে কালকেতুকে বন কাটার মাধ্যমে নগর স্থাপন করার নির্দেশ দেন। যদিও স্বামী বা অন্য কেউ এ কাজ বাধা দেয়, দেবী তাকে সাত ঘড়া ধনের সন্ধান দেন, যা সে খুঁড়ে বের করে ঘরে পুঁতে রাখে। পরদিন, মুরারি শীলের কাছে অঙ্গুরী ভাঙতে গেলে, মুরারি প্রথমে ন্যায্য মূল্য প্রদান না করে সামান্য ধার্য করতে চায়। কালকেতু অসন্তুষ্ট হয় এবং দেবীর নির্দেশে মুরারি অঙ্গুরীর সঠিক মূল্য, সাতকোটি টাকা, দিতে বাধ্য হয়।

কালকেতু সেই ধন বলদ ভাড়া করে ঘরে পুঁতে, নগর প্রতিষ্ঠা ও প্রজার কল্যাণে উদ্যোগী হন। এই প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, দেবী চণ্ডী কেবল ধন দেননি, বরং নৈতিক ও ধর্মমাফিক শাসনের উপদেশও প্রদান করেছেন। ধন ও উপদেশ একসাথে প্রাপ্তি কালকেতুকে শক্তিশালী, দায়িত্বশীল এবং ন্যায়পরায়ণ রাজা হিসেবে গড়ে তোলে।

📝 10. “শুনিয়া বীরের বাণী বলে আসি বান্যানী ঘরেতে নাহিক পোদার।” — কোন বীরের কথা বলা হয়েছে? পোদার কে? পোদারের চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য কাব্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, আলোচনা কর।

উত্তর :
উক্তিতে বীর হলেন কালকেতু, আর পোদার হলেন মুরারি শীল। মুরারি স্বার্থপর, মুনাফাখোর এবং অর্থ-লোভী বণিক। তার কাছে মানুষের উপকারে কোনো অনুভূতি নেই। মানুষের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে অর্থ আদায় করতে সে দ্বিধা করেনা। ফাঁকি দিয়ে লাভবান হওয়া তার নেশা।

কালকেতু অঙ্গুরী ভাঙতে গেলে মুরারি প্রথমে অঙ্গুরীর মূল্য কম ধার্য করে মানুষকে ঠকাতে চায়। কিন্তু কালকেতু এবং দেবীর নির্দেশে মুরারি বাধ্য হয়ে ন্যায্য মূল্য দিতে বাধ্য হয়। এখানে কাব্যে মুরারি শীলের চরিত্রে স্বার্থপরতা, কৌশল, নৈতিকহীনতা এবং মুনাফালোভী বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

“বান্যানী” বলতে বোঝানো হয়েছে কালকেতুর সহধর্মিনী বা সহযোগী, যিনি কালকেতুর পক্ষে সত্যি বলতে চেয়ে মিথ্যা রূপে সঞ্চালনা করেন। কাব্যটি মুরারি শীলের চরিত্রের মাধ্যমে মানুষের লোভ, কৌশল এবং অসাধু মনোভাবের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে।

📝 11. দক্ষ প্রথমবার শিবনিন্দা করেন কোথায়? কেন? তাঁর নিন্দার ধরণটি আলোচনা কর।

উত্তর :
দক্ষ প্রথমবার শিবনিন্দা করেন ভৃগুর যজ্ঞস্থলে। এখানে উপস্থিত ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ছাড়া সকল দেবতা দক্ষকে সম্মান দেখিয়ে প্রণাম করেন। কিন্তু শিব, যিনি দক্ষের জামাতা, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেননি। এজন্য রুষ্ট হয়ে দক্ষ জনসমক্ষে শিবকে নিন্দা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, শিব আমার জামাতা হলেও কন্যাদান করতে আমি ভুল করেছি। তিনি শিবকে ‘ভিখারী, অভব্য, বিষধর, চিতাভস্মধারী’ ইত্যাদি ভাষায় প্রকাশ করেন এবং তার অবজ্ঞা ও অপাত্রতা নিয়ে সমবেত সভায় ক্রোধ প্রকাশ করেন।

দক্ষের নিন্দার ধরণ প্রকাশ্য ও সরাসরি। তিনি শুধুমাত্র শিবকে ব্যক্তিগতভাবে ভাঙড় বলে অভিযুক্ত করেননি, বরং যজ্ঞে উপস্থিত সকল দেবতার সামনে শিবকে অপমানিত ও অযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছেন। দক্ষের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, শিবের গুণাবলী এবং সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে তার গভীর অসম্মান রয়েছে। তিনি শিবকে কেবল অযোগ্য বলে মন্তব্য করেন না, বরং সতীর মতো গুণনিধিকে শিবের ঘরে দেওয়ায় নিজের অপযশের শেষ না হওয়ার দুঃখও প্রকাশ করেন।

এই নিন্দা মানসিক ও সামাজিক দু’ভাবেই প্রভাবশালী। এটি শুধুমাত্র শিবের বিরুদ্ধে নয়, সতীর স্বামীর প্রতি সামাজিক ও পারিবারিক অসন্তুষ্টি ও অসহমতের প্রতিফলন। দক্ষের ধরণে বক্তৃতার তীব্রতা, অবজ্ঞা ও রুষ্টি প্রকাশিত হয়েছে, যা কাব্য ও পুরাণে শিব-দক্ষ দ্বন্দ্বের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

📝 12. শিব কর্তৃক সতীকে পিতৃগৃহে যাবার অনুমতি না দেবার কারণ কী? অনুমতি না পাওয়ায় সতীর প্রতিক্রিয়া আলোচনা কর।

উত্তর :
ভৃগুর যজ্ঞে উপস্থিত দক্ষ শিবকে সম্মান না করায় শিব সতীকে পিতৃগৃহে যেতে অনুমতি দেননি, কারণ সতী সেখানে গেলে দেবতার সম্মানে আঘাত লাগবে। শিব চাননি সতী তাঁর অপমান সহ্য করুক। তবে সতী পিতৃগৃহের আকর্ষণ ও মাতৃগৃহের স্পর্শে অনির্বাণ হয়ে শিবের নিষেধ অমান্য করে একাই রওনা হন। কোপে উন্মত্ত সতী সাজ-গোজ ছাড়াই, চুল না বেঁধে যাত্রা করেন। শিব বাধ্য হয়ে সতীর সঙ্গী নন্দীকে সঙ্গে পাঠান। সতী আনন্দে বৃষে চেপে পিতৃগৃহে পৌঁছান। যজ্ঞে গিয়ে শিবের পূজা না দেখে তিনি অবগত হন, পরবর্তীতে শিবের মহিমা ও ন্যায় বুঝতে পেরে যোগে সতী দেহত্যাগ করেন।

সতীর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে প্রেম, ধৈর্য এবং স্বামীর প্রতি আনুগত্য, পাশাপাশি পিতৃগৃহের আকর্ষণ ও সামাজিক বাধা অমান্য করার সাহসিকতা।

<<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>> 

👉For pdf whatsapp-8250978714