🌹বি.এ সেমিষ্টার-৪::মেজর বাংলা(পেপার-২)সাজেশন(PART-2)🌹

✍️প্রশ্নের মান-৫:

📝 1. “কিন্তু নাহি লোভে দাসী বিভব! সেবিবে দাসী ভাবে পা দুখানি—এই লোভ মনে—” উক্তিটি কার? এমন উক্তির তাৎপর্য কী?

---

✅ উত্তর:
উক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’-এর ‘শকুন্তলা পত্রিকা’-র শকুন্তলার মুখনিঃসৃত। শকুন্তলা রাজা দুষ্মন্তের প্রতি নিবেদিত প্রেম ও সতীত্বের প্রকাশ এই উক্তিতে করেছেন। রাজার মৃগয়ায় এসে শকুন্তলাকে দেখে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করার পর তিনি রাজধানীতে ফিরে গেছেন। বনবাসিনী ও পরাশ্রিতা নারী হওয়ায় শকুন্তলা তাঁর পতিকে না পাওয়ার বেদনা অনুভব করছেন এবং পত্রের মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন।

শকুন্তলা এই উক্তিতে স্পষ্ট জানাচ্ছেন যে, তাঁর আকাঙ্ক্ষা লোভ বা ভোগের জন্য নয়। তিনি ধন, রাজসিংহাসন বা মর্যাদা কামনা করছেন না। তাঁর একমাত্র ইচ্ছা পতি দুষ্মন্তের চরণসেবা ও সান্নিধ্য লাভ করা। তিনি চান না, রাজা তাঁকে লোভী বা স্বার্থপর নারী মনে করুন। এটি শুধুমাত্র প্রেমের নয়, বরং সতীত্ব ও আত্মসমর্পণের প্রকাশ।

উক্তি থেকে শকুন্তলার বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে— তিনি লোভহীন, পতিনিষ্ঠ, সতীসাধ্বী ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন। তাঁর প্রেম পবিত্র, নিষ্কলুষ ও পরিপূর্ণ আত্মনিবেদনময়। শকুন্তলা বোঝান যে, প্রকৃত প্রেম মানে আত্মার নিবেদন; অন্যায় বা স্বার্থপর উদ্দেশ্য নয়। পতি দুষ্মন্তের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভক্তি এই উক্তির মূল প্রতিপাদ্য।

এই উক্তি তাই শুধু প্রেমের নয়, নারীর আত্মসম্মান, সতীত্ব ও বীরত্ব এর প্রতীক। শকুন্তলার এই লোভহীন প্রেম ও ন্যায়পরায়ণতা তাঁকে মাইকেলের দৃষ্টিতে সত্যিকারের ‘বীরাঙ্গনা’ রূপে প্রতিপন্ন করে।

---

📝 2. “জনক জননী ত্যাজিলা শৈশবে মোরে, না জানি কি পাপে?” — বক্তা কে? উক্তির মধ্যে কোন্ পৌরাণিক প্রসঙ্গের উত্থাপন করা হয়েছে?

---

✅ উত্তর:
উক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’-এর ‘শকুন্তলা পত্রিকা’ থেকে নেওয়া, এবং বক্তা শকুন্তলা নিজেই।

শকুন্তলার জন্ম প্রসঙ্গটি পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তিনি ছিলেন ঔরসে মেনকা অপ্সরার গর্ভজাত কন্যা। মেনকা দেবরাজ ইন্দ্রের নির্দেশে বিশ্বামিত্রের তপস্যায় বিঘ্ন ঘটানোর জন্য প্রেরিত হন। তাঁর রূপ, সৌন্দর্য ও ছলায় বিশ্বামিত্র মুগ্ধ হয়ে তপস্যা ভঙ্গ করেন। এর ফলে মেনকা বিশ্বামিত্রের আশ্রয়ে জন্ম দেন শকুন্তলাকে।

তবে শকুন্তলার জন্মের পর তিনি তাঁর পিতা ও মাতার স্নেহ-অভিভাব থেকে বঞ্চিত হন। বিশ্বামিত্র তপস্যা ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থান ত্যাগ করেন, এবং মেনকা গর্ভজাত সন্তানের দায়িত্ব পালন শেষে স্বধামে চলে যান। ফলে শকুন্তলাকে লালন-পালন করতে হয় কন্বমুণি এবং পিসি গৌতমী-কে। জন্মকাল থেকেই পিতা-মাতা কর্তৃক পরিত্যক্ত হওয়ায় শকুন্তলা নিজেকে অভাগিনী মনে করেন।

উক্তিতে শকুন্তলা তার এই অভাব-অনুভূতি, শৈশবের ত্যাগ ও মাতৃ-পিতৃ স্নেহের অভাবে বেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “না জানি কি পাপে?”— যা তাঁর জন্মকাল থেকে অনুভূত আক্ষেপ ও অসহায়তার প্রতিফলন।

সুতরাং, উক্তিটি শকুন্তলার ব্যথিত হৃদয় ও জন্মকাহিনীর পৌরাণিক প্রেক্ষাপট উভয়ই ফুটিয়ে তোলে। এটি তার চরিত্রের মানবিক দিক এবং শৈশবকালীন ত্যাগ ও অনাবৃত অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা প্রদান করে।

📝 3. “পরম অধৰ্ম্মাচারী রঘুকুলপতি।” — 'রঘুকুলপতি' কে? তিনি কী কারণে অধর্মচারী? আলোচনা কর।

---

✅ উত্তর:
উক্তিতে ‘রঘুকুলপতি’ হ’লেন রাজা দশরথ। দশরথ ছিলেন সৎ, সত্যনিষ্ঠ ও ক্ষত্রিয় আদর্শের প্রজ্ঞা সম্পন্ন। যৌবনে তিনি কেকয়ীর প্রেম ও সেবার বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাঁর গর্ভজাত সন্তান ভরতকে রাজ্যলাভ করাবেন। এই প্রতিশ্রুতি ছিল ন্যায় ও কর্তব্যের ভিত্তিতে এবং ক্ষত্রিয় ধর্মের মূলনীতি অনুসারে পালনীয়।

কিন্তু পরে দশরথ সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে যান বা ভঙ্গ করতে উদ্যত হন। তিনি রামচন্দ্রকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন, বিশেষত তখন যখন ভরত রাজধানীতে অনুপস্থিত। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা একজন ক্ষত্রিয় বা রাজা হিসেবে গুরুতর অধর্ম। ক্ষুদ্র স্বার্থ বা অন্য কারো প্ররোচনায় এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তিনি নৈতিক দিক থেকে অধর্মচারী হয়ে যান।

কেকয়ী এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন। তিনি দেখেন যে, যে পিতা ও রাজা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়া উচিত, তিনি তা পালন করছেন না। তাই কেকয়ী দশরথকে পরম অধর্মচারী বলে অভিহিত করেছেন।

উক্তিটি শুধু ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন নয়, বরং রাজকীয় ন্যায় ও ধর্মবোধেরও অবমাননার প্রকাশ। এটি দশরথের চরিত্রে নৈতিক দ্বন্দ্ব এবং স্বার্থপর প্ররোচনার প্রভাবের প্রতিফলন।

অতএব, ‘রঘুকুলপতি’ এখানে দশরথ, এবং তিনি অধর্মচারী বলার কারণ হলো— প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং রাজকীয় ন্যায়বোধের প্রতি অবিচার।

---

📝 4. “পিতৃ-মাতৃহীন পুত্রে পালিবেন পিতা-মাতামহালয়ে পাবে আশ্রয় বাছনি।” — উক্তিটির বক্তা কে? পিতৃ-মাতৃহীন পুত্র কে? উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা কর।

---

✅ উত্তর:
উক্তিটির বক্তা হলেন ‘কেকয়ী পত্রিকা’-র কেকয়ী।
তিনি ‘পিতৃ-মাতৃহীন পুত্র’ বলতে বোঝিয়েছেন নিজ পুত্র ভরতকে। একসময় রাজা দশরথ কেকয়ীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কেকয়ীর গর্ভজাত সন্তানকে রাজ্যলাভ করাবেন। এই প্রতিশ্রুতি ছিল কেকয়ীর প্রেম ও সেবার স্বীকৃতি।

কিন্তু পরে দশরথ রামচন্দ্রকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন, বিশেষত তখন যখন ভরত রাজধানীতে অনুপস্থিত। এতে কেবল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গই হয়নি, বরং কেকয়ী ও ভরতের প্রতি অবজ্ঞা ও অবমাননাও ঘটেছে। কেকয়ী এই অবমাননা সহ্য করতে পারেননি এবং বনবাসে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এই প্রসঙ্গে কেকয়ী ‘পিতৃ-মাতৃহীন পুত্র’ বলার মাধ্যমে বোঝাচ্ছেন যে, যে পিতা পুত্রের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, তাঁর পুত্রের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করেনা। দশরথের এই কর্মকাণ্ড ভরতের প্রতি পিতৃ-স্নেহ ও ন্যায়ের অনুপস্থিতি প্রকাশ করে।

উক্তিটি কেকয়ীর ক্ষোভ, বেদনা ও প্রতিবাদ ফুটিয়ে তোলে। এটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং পিতৃত্বের প্রতি অবহেলার নিন্দার প্রতিফলন। একই সঙ্গে কেকয়ীর চরিত্রে সতীত্ব, ন্যায়পরায়ণতা ও মাতৃস্নেহের দিকও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

অতএব, উক্তির তাৎপর্য হলো— প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও ন্যায়বিরোধী আচরণের প্রতি কেকয়ীর প্রতিবাদ এবং ভরতের প্রতি মাতৃস্নেহ ও পিতৃত্বের ন্যায়পর্যায় রক্ষা করা।

---

📝 5. 'মধ্যাহ্নে' কবিতায় কবির বক্তব্যকে অল্প কথায় ব্যক্ত করো।

---

✅ উত্তর:

কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের ‘মধ্যাহ্নে’ কবিতায় শরতের বৃষ্টিস্নাত মধ্যাহ্নকালীন প্রাকৃতিক পরিবেশকে কেন্দ্র করে মানুষের অন্তর্গত অনুভূতি এবং চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কবির দৃষ্টিতে বৃষ্টির পরের আকাশ, হালকা সাদা মেঘ এবং পরিবেশের নীরবতা এমন এক মুহূর্ত সৃষ্টি করে, যা মনকে পার্থিব জীবন ও বন্ধন থেকে মুক্ত করে। কবি বৃষ্টি-ধোয়া দুপুরে হালকা উড়ন্ত মেঘের দিকে তাকিয়ে নিজেরও সেই অদৃশ্য সীমাহীনতায় মিলিত হওয়ার বাসনা অনুভব করেন।

কবিতায় দেখা যায়, কবির মন ধীরে ধীরে পার্থিব আকাঙ্ক্ষা, দৈনন্দিন চিন্তা এবং বন্ধন থেকে মুক্ত হতে চায়। স্তব্ধ অরণ্যের গাছের ছায়া, পর্বতের নীরব শিখর, নীলাকাশের প্রশান্তি—সব মিলিয়ে কবির মনে এমন এক অনুভূতি জাগায়, যেখানে পৃথিবীর সীমাবদ্ধতা আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। কবির বাসনা হয় সেই চিরন্তন, সীমাহীন শান্তি বা নির্বাণ লাভ করা, যেখানে কোনো পার্থিব টান, বাঁধন বা আকাঙ্ক্ষা থাকবে না।

প্রাকৃতিক দৃশ্যকেই কবি তার অন্তর্গত অনুভূতির প্রতিফলন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নীরব অরণ্য, হালকা মেঘ, বাতাস এবং আকাশ—সবকিছু মিলিয়ে তাকে এমন এক অনুভূতিতে পৌছায়, যেখানে কবি নিজেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে একাকার ভাবতে পারেন। কবিতার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় যে প্রকৃতির প্রশান্তি ও সৌন্দর্য কেবল দৃশ্য নয়, এটি মানুষের মন ও চেতনার অবাধ, নির্বিঘ্ন মুক্তি ও অন্তরীণ শান্তির প্রতীক।

অতএব, ‘মধ্যাহ্নে’ কবিতায় কবির মূল বক্তব্য হলো—শরতের বৃষ্টিস্নাত মধ্যাহ্নের পরিবেশে মানুষের মন পার্থিব বাঁধন ছেড়ে, সীমাহীনতা ও চিরন্তন শান্তির দিকে আকৃষ্ট হয়; কবি সেই নির্বাণে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। প্রকৃতি ও মানুষের অন্তর্গত অনুভূতির মিলনে কবি সর্বোচ্চ ধ্যান ও আত্মশুদ্ধি লাভ করতে চান, যা তাঁর চিরন্তন কাম্য।

---

📝 6. কামিনী রায়ের ‘ডেকে আন’ কবিতার বক্তব্যটি নিজের ভাষায় বুঝিয়ে লেখো।

✅ উত্তর:

কামিনী রায়ের কবিতা ‘ডেকে আন’ মূলত সমাজে মানুষের মধ্যে স্নেহ, সহমর্মিতা ও সংহতির গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলে। কবি মনে করেন, মানুষ যদি পরস্পরের প্রতি স্নেহময় ও সহানুভূতিশীল হয়, বিপদে পাশে দাঁড়ায় এবং একে অপরের সঙ্গে মিলিত থাকে, তাহলে সমাজ শক্তিশালী ও অদম্য হয়। সমাজের মানুষ একে অপরকে কাছে ডাকে, ভালোবাসা দেখায়—এই আচরণ সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোনো শত্রু বা বৈরী শক্তি সহজে সমাজকে দমন করতে পারে না।

কবিতায় কবি তুলে ধরেছেন যে, কখনও কেউ ভুল পথে চলে যেতে পারে, অথবা ভুলবশত দূরে চলে যায়। আবার ফিরে আসলেও লজ্জা বা দ্বিধার কারণে সে কাছে আসে না। এই অবস্থায় কবি পরামর্শ দেন—“ডেকে আনা, হাত ধ'রে কাছে টানো, আলিঙ্গন করা।” অর্থাৎ, বিচ্ছিন্ন বা লজ্জিত মানুষকে উপেক্ষা বা ঘৃণা না করে ক্ষমা ও স্নেহ প্রদর্শন করে কাছে টানতে হবে।

কবিতার মূল বক্তব্য হলো—স্নেহ ও সংহতির মাধ্যমে মানুষকে আবার সমাজে যুক্ত করা যায়। যদি এমন মনোভাব দেখানো না হয়, তবে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি আবার সমাজের জন্য বিপজ্জনক বা হানিকর হয়ে উঠতে পারে। কবিতা তাই ক্ষমা, সহমর্মিতা ও আন্তরিক মিলনের শিক্ষা দেয়। মানবিক সম্পর্ক ও সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করতে এই শিক্ষা অপরিহার্য।

---

📝 7. প্রিয়ম্বদা দেবীর ‘বিরহ’ কবিতায় বিরহ ঘনীভূত পরিবেশকে ফুটিয়ে তুলেছেন, সে সম্পর্কে আলোচনা করো।

✅ উত্তর:

প্রিয়ম্বদা দেবীর ‘বিরহ’ কবিতায় বিরহের অনুভূতি প্রকৃতির বর্ষামুখর পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। কবিতার শুরুতেই বলা হয়েছে, “মেঘ নামিয়েছে আজ ঘেরি চারিপাশ।” ঘন মেঘ, স্নিগ্ধ অন্ধকার এবং সজল বাতাস পাঠকের মনে উদ্বেগ, ব্যাকুলতা ও বিরহবোধ জাগায়। বজ্রপাতের শব্দ, বিদ্যুতের ঝলকানি এবং নদীর তরঙ্গ—সব মিলিয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে একজন ব্যক্তি একা থাকলে প্রিয়জনের অনুপস্থিতি আরও প্রবলভাবে অনুভব হয়।

কবিতায় দেখা যায়, কেউ একা বসে থাকলে তার মনে প্রিয়জনের কথা আসে, কাছে আনা যায় না। তাই চোখে জল আসে, হৃদয়ে ব্যাকুলতা জন্মায়। বর্ষামুখর পরিবেশ এই বিরহকে আরও গভীর ও স্পষ্ট করে তোলে। প্রকৃতির নীরবতা, জলধারার স্পর্শ, বৃক্ষরাজির নীরব আন্দোলন—সব মিলিয়ে মানুষের অন্তরের বিরহ এবং প্রিয়জনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে।

কবিতার মূল ভাব হলো—প্রকৃতি বিরহের অনুভূতিকে ঘনীভূত ও শক্তিশালী করে, যা মানুষের আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে মিলিত হয়। বর্ষা, অন্ধকার, নদী ও বাতাস—সব মিলিয়ে মনকে প্রিয়জনের অনুপস্থিতির বেদনায় নিমজ্জিত করে। কবি প্রিয়ম্বদা দেবী প্রকৃতির এই উপাদানগুলির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে বিরহের অনুভূতি জীবন্তভাবে তুলে আনেছেন।

---

📝 8. “পত্রবাহী ডাকে,—‘চিঠি আছে।’” – চিঠি কার ছিল ও প্রাপকদের অবস্থা নিজের ভাষায় লেখো।

✅ উত্তর:

উক্ত চিঠিটি কবির দূরবর্তী জৈষ্ঠপুত্র অময়ের কাছ থেকে আসে। কবির স্ত্রী সৌদামিনী তখন গুরুতর অসুস্থ ও মরণাপন্ন। ছেলে দূরে থাকায় তার অসুস্থতার খবর জানানো হয়নি। ছেলে যখন জানায়, তিনি বাবা হিসেবে চিন্তিত হন। পত্রে সন্তানের সুস্থতার কথা পড়ে অসুস্থ মা প্রথমে কৌতূহল প্রকাশ করেন: “অময়ের চিঠি?—ভালো আছে?”

চিঠি থেকে জানা যায় যে সন্তান ভালো আছে, পড়াশোনা করছে, বাবা-মাকে প্রণাম জানিয়েছে। এই খবর পেয়ে মায়ের চোখে জল আসে। শ্বাসকষ্ট ও হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়, কিন্তু মন কিছুটা শান্ত হয়। স্ত্রী প্রথমবার সন্তান সম্পর্কে আনন্দ অনুভব করেন। এই সুখ-তৃপ্তি মুহূর্তে তার মুখে অল্প হাসি ফুটে ওঠে।

কিন্তু এটি শেষ হাসি—শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। চিঠি প্রাপ্তির ফলে, স্বামী ও সন্তান সম্পর্কে জানার আনন্দেই মা তার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবি শোকগ্রস্ত হলেও সন্তানের সুস্থতা দেখে স্ত্রীর শান্তি অনুভব করেন। চিঠি প্রাপ্তি মুহূর্তটি তাই একদিকে বেদনা, অন্যদিকে শান্তি ও তৃপ্তির মিলন ঘটায়।

---

📝 9. “নিমেষে নন্দন-বন শ্মশান ভীষণ।” – কবির নাম লেখ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

✅ উত্তর:

উক্ত চরণটি কবি অক্ষয় কুমার বড়ালের ‘এষা’ কাব্যের ‘মৃত্যু’ পর্যায়ের ৭ নম্বর কবিতা থেকে নেওয়া। কবির স্ত্রী সৌদামিনী দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত ছিলেন। পরিবারের আনন্দময় নন্দন-বন অর্থাৎ সুখের সংসার ছিল তার উপস্থিতিতে।

কিন্তু তার মৃত্যু সঙ্গে সঙ্গে সেই সুখময় পরিবেশ শ্মশান হয়ে যায়। পরিবার—স্বামী ও পাঁচ সন্তানসহ—শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। নন্দন-বনের বদলে শোকের অন্ধকার, জীবনের আনন্দ হারিয়ে যায়। কবিরও অবস্থা সহ্য করার মতো নয়; স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি নিজেও মৃত্যু কামনা করেন।

চরণটির তাৎপর্য হলো—কিছু মুহূর্তেই সুখ ও আনন্দ একেবারে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। জীবনের সৌন্দর্য ও আনন্দ অস্থায়ী; মৃত্যু সব কিছু পরিবর্তন করে দেয়। কবি এই সংক্ষিপ্তকালের আনন্দের পরিবর্তনে গভীর শোক ও বেদনার অনুভূতি পাঠকের হৃদয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।

---

📝 10. “জ্বলুক যতই জ্বলে, / পর জ্বালা-মালা গলে, নীল কণ্ঠ-কণ্ঠে জ্বলে হলাহল-দ্যুতি।” – পৌরাণিক অনুষঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

✅ উত্তর:

উক্ত চরণে কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী হিমদ্রা-বিরহের যন্ত্রণাকে শিবের হলাহলপান অনুষঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, দেবতা ও দানবরা সমুদ্র মন্থন করলে অনেক বস্তু উঠতে থাকে। তবে তখন দানবরা কিছুই পায় না। এক পর্যায়ে হলাহল বিষ উঠে আসে, যা পৃথিবী ধ্বংস করতে পারে। দেব-দানব সবাই আতঙ্কিত হয়ে পালায়। তখন শিব এই বিষ নিজের কণ্ঠে গ্রহণ করেন। বিষের তেজে তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে যায়। তাই শিবের আরেক নাম নীলকণ্ঠ।

এখানে কবি বলতে চেয়েছেন—যে মহৎ ও উদার ব্যক্তি অন্যের কল্যাণের জন্য নিজের যন্ত্রণাকে গ্রহণ করতে পারে, তার উদারতা অপরিসীম। শিবের হলাহলপানকাণ্ড থেকে প্রমাণ মেলে, বিপদের মুহূর্তে মহৎ ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম। কবি নিজ জীবনের দুঃখ, বেদনা এবং বিরহের যন্ত্রণাকে শিবের এই মহৎ ত্যাগের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এতে পাঠক বুঝতে পারে, কিভাবে দুঃখকে সহ্য করে ধৈর্য এবং মহত্ত্ব বজায় রাখা যায়।

---

📝11. “হিমাদ্রিই বক্ষ ‘পরে / সহে বজ্র অকাতরে…” – তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

✅ উত্তর:

উক্ত চরণে হিমালয়কে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে কবি মহত্ত্ব ও ধৈর্যের প্রতীক দেখিয়েছেন। হিমালয় যেমন বৃহৎ ও অটল, বজ্রপাতের সময়ও তা অভেদ্য থাকে, তেমনি মহৎ মানুষ অন্যের কল্যাণের জন্য অকাতরে যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে পারে।

কিন্তু তৃণ, লতা ও জঙ্গল অতি ক্ষুদ্র, সংবেদনশীল, তাই বজ্রাঘাতে তা সহজে ক্ষয় হয়। কবি বিহারীলাল নিজ জীবনেও বিরহের যন্ত্রণায় ভেঙে পড়েছিলেন। এই চরণে তিনি পাঠককে বোঝান, যে মহৎ ব্যক্তি ধৈর্য এবং সহিষ্ণুতার মাধ্যমে কষ্টকে সহ্য করতে পারে। এটি মানুষের নৈতিক ও মানসিক শক্তিকে প্রকাশ করে।

এই দুই উদাহরণে কবি মূলত পাঠককে শিখিয়েছেন—মহত্ত্ব ও উদারতার মানে হল, অন্যের কল্যাণে নিজের কষ্ট গ্রহণ করা, এবং প্রকৃত ধৈর্য ধীরে ধীরে মানুষকে অন্তরের শক্তি প্রদান করে।

---

📝 12. “আমার ও বজ্রবুক,/ত্রিশূলেরো তীক্ষ্ণমুখ, দাও দাও বসাইয়ে এড়াই যন্ত্রণা।” কে কাকে এ কথা বলেছে? সে কোন্ যন্ত্রণা এড়াতে চেয়েছে আলোচনা করো।

✅ উত্তর:

উক্তিটি কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী তাঁর প্রিয়প্রণয়িনী সারদা-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। কবি সারদাকে সর্বক্ষণ কাছে পেতে চান, কিন্তু প্রায়ই সারদা তাঁর কাছে স্পষ্টভাবে উপস্থিত হন না। কখনও দূরে থাকেন, কখনও বিষন্ন বা উদাসীন হয়ে বসে থাকেন। এই অনুপস্থিতি এবং উদাসীনতা কবির অন্তরে গভীর বিরহ, কষ্ট ও বেদনা তৈরি করে। কবির প্রেম ও আনুগত্য এতই তীব্র যে, তিনি এই যন্ত্রণার তীব্রতা সহ্য করতে পারছেন না। তাই কবি এখানে দেবীর হাতে মৃত্যু কামনা করেন। কবি শ্মশান ভূমিতে সারদাকে ত্রিশূলধারী কালীমূর্তিরূপে কল্পনা করেছেন, যাতে মৃত্যুর মধ্যেও বিরহের যন্ত্রণা শেষ হয়। এই চরণের মাধ্যমে কবি প্রেমিকের অভিমান, বিরহ-বেদনা, অনুরাগ এবং অন্তরের যন্ত্রণা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। সারদার অনুপস্থিতি ও বিরহ কবিকে এক ধরণের শূন্যতা অনুভব করায়। তিনি চান, এই যন্ত্রণা যেন অবিলম্বে শেষ হয়ে সারদার কাছ থেকে প্রাপ্ত আনন্দ তাঁর মনকে পূর্ণ করে। কবির অন্তরে বিরহের সঙ্গে এক গভীর প্রণয়, প্রিয়সীর প্রতি অবিচল ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। এই চরণে প্রেম ও বিরহের মিলন, যন্ত্রণা ও প্রিয়তার প্রতি আকাঙ্ক্ষা সুন্দরভাবে ফুটিয়েছেন। কবি তার যন্ত্রণার প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়েও প্রেম এবং ব্যথার অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছেন।

---

📝 13.“পুণ্যতোয়া গিরিবালা!/জুড়াও প্রাণের জ্বালা।”---এখানে গিরিবালা কে? সে বক্তার কোন প্রাণের জ্বালা জুড়াবে?

✅ উত্তর:

এখানে গিরিবালা বলতে বোঝানো হয়েছে গঙ্গা নদীকে। গঙ্গা হিমালয়ের বরফ গলনের ফলে গঙ্গাপ্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে। তাই তাকে ‘গিরির সন্তান’ বা গিরিবালা বলা হয়েছে। কবি গঙ্গার কাছে প্রার্থনা করছেন যেন তাঁর প্রাণের জ্বালা—অর্থাৎ বিরহ-বেদনা—উপশম হয়। কবি সারদার প্রতি গভীর প্রণয় অনুভব করেন। কিন্তু প্রেয়সী কখনও স্পষ্টভাবে সাড়া দেন না। অনুপস্থিতি, দ্বন্দ্ব এবং অপ্রাপ্তির কারণে কবি বিরহ-বেদনায় ভোগেন। এই অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে কবি গঙ্গার সাহায্য কামনা করেছেন। গঙ্গার শীতল, নির্মল জলের সঙ্গে মিলিত হয়ে কবির অন্তর শান্তি পাবে। এখানে কবি প্রকৃতি বা দেবতাকে প্রেমের উপশমের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। গঙ্গা, যাকে গিরিবালা বলা হয়েছে, কবির বিরহ-বেদনা প্রশমিত করবে। কবির প্রার্থনা কেবল নিজকেই নয়, পাঠককেও এই প্রাকৃতিক ও ভক্তিমূলক অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত করে। কবির হৃদয়ের যন্ত্রণা এবং প্রেমের তীব্রতা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এই চরণের মধ্যে বিরহ-বেদনা, প্রিয়সীকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং প্রাকৃতিক উপশমের মিলন চিত্রায়িত হয়েছে।

---

📝 14.“এমন আনন্দ আর নাই ত্রিভুবনে।”----এখানে কোন্ আনন্দের কথা বলা হয়েছে? তার তুলনা নাই কেন?

✅ উত্তর:

এই চরণে কবি সারদার সঙ্গে মিলনের আনন্দকে ফুটিয়ে তুলেছেন। সারদা তাঁর প্রিয়সী। সারদার সান্নিধ্য কেবল আনন্দ, শান্তি ও তৃপ্তি দেয়। সারদার উপস্থিতি কবির জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক। এই আনন্দকে কবি তুলনাহীন বা অনন্য হিসেবে দেখিয়েছেন। সারদার অনুপস্থিতিতে কবি বিরহ-বেদনায় ভোগেন, কিন্তু তাঁর সান্নিধ্য লাভের মুহূর্তে অনুভব করেন চূড়ান্ত আনন্দ। সারদা যেমন সুন্দর, ধ্যানমগ্ন, সৌন্দর্যলক্ষ্মী, তেমনি তাঁর সঙ্গে মিলনের আনন্দও অতুলনীয়। কবি সারদার সঙ্গে মিলনের সময় সকল বিরহ, যন্ত্রণার বেদনা দূর হয়ে যায়। কবির অভ্যন্তরে আনন্দ, প্রেম এবং শান্তি একসাথে জাগে। এই চরণে কবি প্রিয়সীর উপস্থিতি, মিলনের আনন্দ এবং বিরহ-বেদনার পরিপূরকতা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। সারদার সঙ্গে মিলনের আনন্দ এমন যে, ত্রিভুবনের অন্য কোনো আনন্দের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কবি প্রেমিকের চোখে প্রিয়সীর সান্নিধ্যই চূড়ান্ত সুখ, যা পৃথিবীর সকল আনন্দের চেয়েও বড়। এই চরণের মাধ্যমে পাঠকও প্রিয়সী এবং প্রেমিকের আবেগের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারে।

---

<<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>> 

👉For pdf whatsapp-8250978714