✍️রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৫):
১. পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলকের মতো - এর প্রত্যক্ষ এবং অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণসমূহ আলোচনা করো।
অথবা - পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতির বা গোলাকার আকৃতির প্রমাণগুলি কী কী?
উত্তর:
[A] পৃথিবীর আকৃতির প্রত্যক্ষ প্রমাণ:
১. বেডফোর্ড লেভেল পরীক্ষা:
১৮৭০ সালে বিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড রাসেল ওয়ালেস ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড খালে একটি পরীক্ষা পরিচালনা করেন। তিনি খালের জলে সমান্তরালভাবে তিনটি খুঁটি স্থাপন করেন এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা যায়, মাঝের খুঁটি অন্য দুটি খুঁটির তুলনায় উঁচু দেখাচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে পৃথিবীর পৃষ্ঠ সমতল নয়, বরং বাঁকানো, যা গোলাকার আকৃতির নির্দেশনা দেয়।
২. মহাকাশ থেকে তোলা ছবি:
মহাকাশযান থেকে পৃথিবীর চেহারা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিন, পরে নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন এবং রাকেশ শর্মার মতো মহাকাশচারীরা স্পষ্টভাবে পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি দেখেছেন এবং এর ছবি ধারণ করেছেন, যা পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ সরবরাহ করে।
[B] অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণ:
১. প্রাচীন জ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ:
গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাস প্রথম গণিতের সাহায্যে পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির ধারণা দেন। অ্যারিস্টটল চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়তে দেখে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী বরাহমিহির এবং আর্যভট্টও পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি সম্পর্কে মত প্রকাশ করেছিলেন।
২. সমুদ্রপথে বিশ্বভ্রমণ:
১৫১৯ সালে ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান এবং ১৫৭৭ সালে ফ্রান্সিস ড্রেক পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। তারা একই দিকে চলতে থাকলেও আবার একই স্থানে ফিরে আসেন, যা পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির শক্তিশালী প্রমাণ।
৩. সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় পার্থক্য:
পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির কারণে, একই সময়ে সব স্থানে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত ঘটে না। পূর্ব দিগন্তে সূর্য আগে উদিত হয়, আর পশ্চিম দিকে পরে সূর্যোদয় হয়।
৪. দিগন্তরেখার উপস্থিতি:
সমুদ্রের ধারে বা খোলা প্রান্তরে দাঁড়ালে দেখা যায় আকাশ ও মাটি বৃত্তাকারভাবে মিলেছে। এটি পৃথিবীর বাঁকানো পৃষ্ঠের কারণে ঘটে, যা তার গোলাকার প্রকৃতিকে নির্দেশ করে।
৫. সমুদ্রযাত্রায় জাহাজের অদৃশ্য হওয়া:
সমুদ্রে জাহাজ যখন দূরে চলে যায়, প্রথমে তার নিম্নাংশ অদৃশ্য হয়, তারপর ধীরে ধীরে পুরো জাহাজ হারিয়ে যায়। একইভাবে, তীরে আসার সময় প্রথমে মাস্তুল দৃশ্যমান হয়। এটি পৃথিবীর গোলাকার পৃষ্ঠের জন্যই ঘটে।
৬. নক্ষত্রের অবস্থানের পরিবর্তন:
উত্তর গোলার্ধ থেকে ধ্রুবতারা একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে দেখা যায়। বিষুবরেখা থেকে এটি শূন্য ডিগ্রিতে, আর মেরু অঞ্চলে ৯০ ডিগ্রিতে দেখা যায়। এটি পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির প্রমাণ বহন করে।
৭. অন্য গ্রহগুলোর আকৃতি:
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলোর আকৃতি দেখা যায় এবং সেগুলো গোলাকার। যেহেতু পৃথিবীও একটি গ্রহ, তাই তার আকৃতিও গোলাকার হওয়া স্বাভাবিক।
৮. চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া:
চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের ওপর পড়া পৃথিবীর ছায়া সবসময় গোলাকার দেখা যায়। এটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে পৃথিবী গোলাকার আকৃতির।
২. পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে কী কী পরিবর্তন ঘটে?
উত্তর:
দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন:
পৃথিবী যখন সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করে, তখন বছরের বিভিন্ন সময়ে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যে তারতম্য ঘটে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই পরিবর্তন তুলনামূলকভাবে কম হলেও মেরু অঞ্চলের দিকে এটি অনেক বেশি স্পষ্ট হয়।
ঋতুর পরিবর্তন:
পৃথিবীর কক্ষপথে পরিক্রমণ এবং তার অক্ষের ২৩.৫° হেলনের কারণে সূর্যের আলো ভিন্ন সময়ে ভিন্নভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পড়ে। ফলে গ্রীষ্ম, শীত, বসন্ত ও শরতের মতো ঋতুগত পরিবর্তন ঘটে।
অপসুর ও অনুসুর অবস্থান:
পৃথিবীর কক্ষপথ সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, বরং উপবৃত্তাকার। তাই এটি কখনো সূর্যের কাছাকাছি (অনুসুর – ১৪৭ মিলিয়ন কিমি) এবং কখনো দূরে (অপসুর – ১৫২ মিলিয়ন কিমি) অবস্থান করে।
৩. পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ কী?
উত্তর:
পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি:
পৃথিবী অভিজ্ঞতাগত গোলকের মতো হওয়ায় সূর্যের রশ্মি নিরক্ষরেখার কাছাকাছি সরাসরি পড়ে, কিন্তু উচ্চ অক্ষাংশের অঞ্চলে তির্যকভাবে পড়ে। এতে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে এবং ঋতু পরিবর্তন হয়।
পৃথিবীর আবর্তন গতি:
পৃথিবী প্রতিনিয়ত তার অক্ষের চারদিকে আবর্তিত হয়, যা দিন-রাতের সৃষ্টি করে এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি:
পৃথিবী এক বছরে সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ সম্পন্ন করে। এর ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের রশ্মি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ভিন্নভাবে পড়ে, যা ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ।
পৃথিবীর অক্ষের হেলন:
পৃথিবীর অক্ষ ২৩.৫° কোণে হেলানো থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গোলার্ধে বেশি সূর্যালোক পড়ে। গ্রীষ্মকালে নির্দিষ্ট গোলার্ধে দিন বড় হয়, আর শীতকালে ছোট হয়।
৪. পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে কী কী পরিবর্তন ঘটে?
উত্তর:
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত:
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তিত হওয়ায় আমরা প্রতিদিন পূর্ব দিগন্তে সূর্যোদয় এবং পশ্চিম দিগন্তে সূর্যাস্ত দেখতে পাই।
দিন ও রাতের সৃষ্টি:
আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের সামনে থাকে, সেখানে দিন হয়, আর বিপরীত অংশে রাত হয়।
বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তন:
আবর্তনের কারণে কোরিওলিস বল সৃষ্টি হয়, যা বাতাস ও সমুদ্রস্রোতের গতিপথকে নির্দিষ্ট দিকে বাঁকিয়ে দেয়।
জোয়ার-ভাটার প্রভাব:
পৃথিবীর আহ্নিক গতি এবং চাঁদের মহাকর্ষ বলের ফলে প্রতিদিন সমুদ্রের পানির স্তরে জোয়ার ও ভাটার পরিবর্তন ঘটে।
সময় নির্ধারণ:
পৃথিবী একবার ঘূর্ণন করতে ২৪ ঘণ্টা নেয়, যা একটি দিন গঠনের ভিত্তি। এই কারণেই আমরা সময় নির্ধারণ করতে পারি।
উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ওপর প্রভাব:
আবর্তনের ফলে দিনের ও রাতের নিয়মিত আবর্তন হয়, যা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ ও প্রাণীদের জীবনচক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত।
৫.পৃথিবীর অপসূর ও অনুসুর অবস্থানের সচিত্র চিত্র অঙ্কন করো।
উত্তর:
<<<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>