🌹বি.এ ইতিহাস মেজর(পেপার-২):: সেমিষ্টার-৪:: সাজেশন(PART-1)🌹

 

 

✍️প্রশ্নের মান-২:

1. সুলতানী যুগে ইতিহাস রচনার প্রধান উপাদান কী?
উত্তর: সুলতানী যুগে ইতিহাস রচনার প্রধান উপাদান হল – (১) সরকারী দলিলপত্র, (২) সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের রচনা, (৩) আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্য, (৪) বিদেশী পর্যটক ও বণিকদের বিবরণ, (৫) মুদ্রা ও শিল্প নিদর্শন প্রভৃতি।
2. 'তাজ-উল-মাসির' গ্রন্থের রচয়িতা কে? এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: হাসান নিজামি রচিত ‘তাজ-উল-মাসির’ গ্রন্থে ১১৯২–১২২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ আছে। মহম্মদ ঘুরীর ভারত জয়, কুতুবউদ্দিন আইবকের জীবন ও কার্যাবলী এবং ইলতুৎমিসের রাজত্বকালের প্রথম পর্বের ইতিহাস হিসেবে এই গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম।
3. 'তাবাকাত-ই-নাসিরি' গ্রন্থের লেখক কে? এই গ্রন্থ থেকে আমরা কী জানতে পারি?
উত্তর: মিনহাজ-উস্-সিরাজ রচিত ‘তাবাকাত-ই-নাসিরি’ গ্রন্থে মহম্মদ ঘুরীর রাজ্য জয় থেকে শুরু করে ১২৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লী সুলতানীর বিভিন্ন ঘটনার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি সুলতান নাসিরউদ্দিনের আমলে দিল্লীর প্রধান কাজী পদে নিযুক্ত ছিলেন।
4. ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহী’ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু উল্লেখ কর।
উত্তর: জিয়াউদ্দিন বারণী রচিত ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহী’ গ্রন্থে গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজত্বকাল থেকে ফিরোজ শাহের রাজত্বকালের প্রথম ছ’বছরের বিশ্বস্ত বিবরণ পাওয়া যায়।
5. আমীর খসরু কে ছিলেন? তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম কর।
উত্তর: আমীর খসরু ছিলেন দিল্লী দরবারের সভাকবি ও ঐতিহাসিক। তাঁকে ভারতের তোতাপাখী বলা হত। তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থ হল – কিরান-উস-সাদিন, মুফতা-উল-যাৎ, আসিক, তুঘলকনামা।
6. 'খাজাইন-উল-ফুতুহ' গ্রন্থটির বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: আমীর খসরু রচিত ‘খাজাইন-উল-ফুতুহ’ গ্রন্থে আলাউদ্দিন খলজীর দাক্ষিণাত্য অভিযান, মোঙ্গল আক্রমণ ও প্রশাসনিক সংস্কার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
7. ফিরোজ তুঘলক রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির নাম ও বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: সম্রাট ফিরোজ তুঘলক রচিত ‘ফতোয়াৎ-ই-ফিরোজশাহী’ নামক ৩২ পৃষ্ঠার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে তাঁর ধর্মীয় চিন্তাভাবনা ও শাসনব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
8. শামস-ই-সিরাজ-আফিফ রচিত গ্রন্থের নাম কী? এই গ্রন্থ থেকে কার রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায়?
উত্তর: শামস-ই-সিরাজ-আফিফ রচিত ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহী’ গ্রন্থটি ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকালের মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল।
9. লোদী বংশের ইতিহাসের উপাদানগুলি কী কী?
উত্তর: লোদী বংশের ইতিহাসের প্রধান উপাদানগুলি হল – আব্বাস শেরওয়ানি রচিত ‘তারিখ-ই-শেরশাহি’, নিয়ামউল্লাহ রচিত ‘মাখজান-ই-আফগান’, আবদুল্লা রচিত ‘তারিখ-ই-দাউদি’।
10. ইবন বতুতা কে ছিলেন? তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: ইবন বতুতা ছিলেন মরক্কোর পর্যটক। তিনি ভারতে চোদ্দো বছরের মধ্যে আট বছর দিল্লীতে অবস্থান করেন এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর রচিত ভ্রমণকাহিনী ‘কিতাব-উল-রাহলা’ বা ‘রাহলা’ নামে পরিচিত।
11. নিককালোকটি, পায়েজ, নুনিজ, আব্দুর রজ্জাক – কোন দেশীয় পর্যটক? তাঁরা কোন রাজত্বকালে ভারতে আসেন?
উত্তর: নিককালোকটি: ইটালি, পায়েজ ও নুনিজ: পর্তুগাল, আব্দুর রজ্জাক: পারস্য। তাঁরা বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন।
12. মধ্যযুগের ইতিহাসচর্চার দুটি প্রধান ধারার নাম কী?
উত্তর: মধ্যযুগের ইতিহাসচর্চার দুটি প্রধান ধারা হল – (১) আরবীয় ধারা ও (২) পারসিক ধারা।

13. তুর্কী ও আফগান ইতিহাসচর্চায় কাদের বিষয় প্রাধান্য পেয়েছিল?
উত্তর: তুর্কী ও আফগান ইতিহাসচর্চায় সুলতানদের কার্যকলাপ, অভিজাত ও প্রশাসন শ্রেণীর কৃতিত্ব অধিক প্রাধান্য পেয়েছিল।
14. ‘ফজাইল’ ইতিহাস চর্চা কী?
উত্তর: মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাস রচনায় যখন সুলতান, অভিজাত ও শাসকশ্রেণীর কার্যকলাপকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় সেই ইতিহাস চর্চাকে ‘ফজাইল’ ইতিহাস চর্চা বলা হয়।
15. কয়েকজন ফজাইল ঐতিহাসিকের নাম লেখ।
উত্তর: আমির খসরু, জিয়াউদ্দিন বারণী প্রমুখ হলেন ফজাইল ঐতিহাসিক।
16. পারসিক ঐতিহাসিকরা সুলতানী যুগের ইতিহাসের কোন দিকগুলিতে আলোকপাত করেছেন?
উত্তর: পারসিক ঐতিহাসিকরা খলিফা, সুলতান এবং উচ্চপর্যায়ের অভিজাতদের জীবন ও কার্যাবলীর দিকে আলোকপাত করেছেন।
17. সুলতানী যুগের ইতিহাসের উপাদানকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর: সুলতানী যুগের ইতিহাসের উপাদানকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়— (১) সমসাময়িক ফারসি রচনা, (২) প্রাদেশিক/আঞ্চলিক সাহিত্য, (৩) বিদেশী পর্যটকদের রচনা ও (৪) স্থাপত্য, মুদ্রা, লেখ, দলিল দস্তাবেজ।
18. ইসামি কে?
উত্তর: ইসামি ছিলেন বাহমনী সুলতান আলাউদ্দিন বাহমন শাহের পৃষ্ঠপোষক। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ‘ফুতুহ-উস-সালাতিন’। এই গ্রন্থ থেকে মহম্মদ-বিন-তুঘলকের রাজত্বকালের বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়া গ্রন্থটির বড় গুরুত্ব হল মিনহাজের ‘তাবাকত-ই-নাসিরি’ এবং বারণীর ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহী’ গ্রন্থের সাথে যোগসূত্র স্থাপন।
19. জিয়াউদ্দিন বারণী কে ছিলেন?
উত্তর: সুলতানী যুগের ইতিহাস রচয়িতাদের মধ্যে জিয়াউদ্দিন বারণী ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ। তাঁর অতি মূল্যবান গ্রন্থ ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহী’ থেকে গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজত্বকাল থেকে ফিরোজ তুঘলকের রাজত্বের প্রথম দিকের ঘটনাবলীর বিবরণ পাওয়া যায়। তাঁর অপর গ্রন্থ ‘ফতোয়া-ই-জাহানদারী’-তে রাজ্যশাসন নীতি সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। উদাহরণ হিসেবে ইলতুৎমিস ও বলবনের শাসননীতিকে তুলে ধরেছেন।

20. নাসিরউদ্দিন চিরাগ কে ছিলেন?
উত্তর: নাসিরউদ্দিন চিরাগ ছিলেন একজন সুফী সাধক। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ‘খয়ের-উল-মজলিশ’। এই গ্রন্থে আলাউদ্দিন খলজীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি, মোঙ্গল আক্রমণে দিল্লীর অবস্থা ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ পাওয়া যায়।
21. আব্দুর রেজ্জাক কে ছিলেন?
উত্তর: পারস্যের শাসক শাহরুখ খানের প্রতিনিধি হিসেবে আব্দুর রেজ্জাক ১৪৪২–৪৬ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে দক্ষিণ ভারতে এসেছিলেন। তাঁর রচিত ‘মাতলা-উস-সাদাইন ওয়া মাজমা-উল-বাহরাইন’ (দুটি সৌভাগ্য গ্রহের উত্থান ও দুই মহাসাগরের মিলন) থেকে বিজয়নগরসহ দক্ষিণ ভারতের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।

22. কোন সময়কাল দিল্লির সুলতানী যুগ বা সুলতানী শাসন নামে পরিচিত?
উত্তর: ১২০৬ থেকে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে বাবরের জয়লাভ ও মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত সময়কাল ভারত ইতিহাসে সুলতানী যুগ বা দিল্লির সুলতানী শাসন নামে পরিচিত।

23. পারসিক ঐতিহাসিকরা ১২০৬ থেকে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্বকারী সুলতানদের কোন গোষ্ঠীভুক্ত বলে অভিহিত করেছেন?
উত্তর: পারসিক ঐতিহাসিকরা ১২০৬ থেকে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্বকারী সুলতানদের কুতবি (কুতুবউদ্দিন প্রতিষ্ঠিত), সামসি (ইলতুৎমিস প্রতিষ্ঠিত) এবং বলবনী (বলবন প্রতিষ্ঠিত) গোষ্ঠীভুক্ত বলে অভিহিত করেছেন।

24. সুলতানী যুগে ইতিহাসের কয়েকটি উপাদানের নাম লেখ।
উত্তর: ভারতের মুসলমানদের আগমনের সময় থেকে ঐতিহাসিক উপাদানের প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল–হাসান নিজামী বিরচিত ‘তাজ-উল-মাসির', মিনহাজউদ্দিন সিরাজের ‘তবকৎ-ই-নাসিরী’, আমির খসরুর ‘খাজাইন-উল-ফুতুহা’, জিয়াউদ্দিন বারণীর ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহী' প্রভৃতি গ্রন্থ। সুলতানী যুগের রাজাদের কার্যকলাপ, সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন বিদেশী পর্যটকদের রচনা যেমন ইবন বতুতার ‘তহকিক-ই-হিন্দ’ (ভারতবৃত্তান্ত), মার্কোপোলা, আব্দুর রজ্জাক, নিকোলোকন্টি, প্রমুখের রচনাও আমাদের সাহায্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন মুদ্রা, দলিল দস্তাবেজ, জীবনীমূলক গ্রন্থ সুলতানী যুগের ঐতিহাসিক উপাদান।

২৫. ভারতে দিল্লি সুলতানীর পত্তন কীভাবে হয়েছিল?

উত্তর: রাজপুতদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও ভারতের রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মুহাম্মদ ঘুরি আক্রমণ চালান।
১১৯২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় তারাইনের যুদ্ধে তিনি রাজপুত রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করেন।
এই বিজয়ের ফলে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুসলমানদের দখলে আসে।
১২০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসেন এবং দিল্লি সুলতানীর সূচনা হয়।

📝 ২৬. মিনহাজ-উস্-সিরাজের বর্ণনা থেকে কুতুবউদ্দিনের চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায়?
✅ উত্তর: মিনহাজ-উস্-সিরাজের বর্ণনা থেকে জানা যায়, কুতুবউদ্দিন ছিলেন দানশীল, সাহসী ও সুনিপুণ যোদ্ধা। তিনি দয়ালু শাসক ও মহানুভব চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তাঁর উদারতার জন্যই তিনি ‘লাখবক্স’ নামে খ্যাত হন।

📝 ২৭. সিংহাসনে আরোহণ করার পর কুতুবউদ্দিন কী কী সমস্যার সম্মুখীন হন?
✅ উত্তর: সিংহাসনে আরোহণের পর কুতুবউদ্দিন উত্তরাধিকার ও বৈধতার সংকটে পড়েন। লাহোরের মর্যাদা ও অন্যান্য আমিরদের বিরোধিতাও তাঁকে বিপদে ফেলে। তবুও তিনি দক্ষতার সঙ্গে সব সমস্যা মোকাবিলা করেন।

📝 ২৮. ‘লাখবক্স’ কাকে বলে ও কেন বলা হত?
✅ উত্তর: দাসবংশের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবককে ‘লাখবক্স’ বলা হত। তিনি বিদ্বানদের মুক্তহস্তে দান করতেন। তাঁর উদারতার কারণেই এই উপাধি পান।

📝 ২৯. ভারতে মুসলমানদের জয়লাভের দুটি কারণ উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: ভারতের রাজনৈতিক দুর্বলতা ও বিভক্তিই মুসলমানদের জয়ের প্রধান কারণ। হিন্দু রাজাদের প্রাচীন যুদ্ধপদ্ধতি মুসলমানদের আধুনিক রণকৌশলের সামনে টিকতে পারেনি। ফলে সহজেই মুসলমানরা বিজয় লাভ করে।

📝 ৩০. ‘মামেলুক’ কাদের বলা হত?
✅ উত্তর: ‘মামেলুক’ শব্দের অর্থ স্বীয় অধিকারভুক্ত বা দাস। স্বাধীন পিতামাতার সন্তান যদি দাসে পরিণত হয়, তখন তাকে মামেলুক বলা হত। ঘুরীর ক্রীতদাস অনুচররাই ‘মামেলুক’ নামে পরিচিত ছিলেন।

📝 ৩১. ‘খুতবা’ ও ‘সিক্কা’ অনুষ্ঠান দুটি কী?
✅ উত্তর: ‘খুতবা’ হল সুলতানের নামে প্রকাশ্যে ধর্মোপদেশ পাঠ। ‘সিক্কা’ হল সুলতানের নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন। এই দুটি রীতির মাধ্যমে শাসক তার সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতেন।

📝 ৩২. ইলবারী তুর্কী বংশের প্রথম ও শেষ সুলতান কারা ছিলেন?
✅ উত্তর: ইলবারী তুর্কী বংশের প্রথম সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক। এই বংশের শেষ সুলতান ছিলেন কায়কোবাদ।

📝 ৩৩. দাস বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ও শ্রেষ্ঠ সুলতান কারা ছিলেন?
✅ উত্তর: দাস বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলতুৎমিস। শ্রেষ্ঠ সুলতান হিসেবে গিয়াসউদ্দিন বলবনের নাম ইতিহাসে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য।

📝 ৩৪. দিল্লির প্রথম তুর্কী সুলতান কে ছিলেন? তিনি কবে দিল্লির সিংহাসনে বসেন?
✅ উত্তর: দিল্লির প্রথম তুর্কী সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরীর মৃত্যুর পর তিনি স্বাধীন সুলতান হিসেবে সিংহাসনে বসেন।

📝 ৩৫. কুতুবউদ্দিনের শিল্পকীর্তির কী কী পরিচয় পাওয়া যায়?
✅ উত্তর: কুতুবউদ্দিন ছিলেন শিল্পপ্রেমী শাসক। তিনি দিল্লিতে কুতুবমিনার ও কুতুব মসজিদ (কোয়াত-উল-ইসলাম) নির্মাণ করেন এবং আজমীরেও একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

📝 ৩৬. ভারতের প্রথম সার্বভৌম সুলতান কে ছিলেন?
✅ উত্তর: ভারতের প্রথম সার্বভৌম সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক। তিনি ঘুর রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে ১২০৬ সালে স্বাধীন সুলতান হিসেবে শাসন শুরু করেন।

📝 ৩৭. ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে কোন মোঙ্গল নেতা ভারত সীমান্তে উপস্থিত হন? তাঁর প্রকৃত নাম কী ছিল?
✅ উত্তর: ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে দুর্ধর্ষ মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খাঁ ভারত সীমান্তে উপস্থিত হন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল তেমুচিন।

📝 ৩৮. ইলতুৎমিসকে দিল্লি সুলতানীর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কেন?
✅ উত্তর: ইলতুৎমিস দিল্লি সুলতানীর ভিত্তি সুদৃঢ় করেন এবং অভ্যন্তরীণ অরাজকতা দমন করেন। তিনি খলিফার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুলতান উপাধি লাভ করেন ও চেঙ্গিস খাঁর হাত থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করেন। তাই তাঁকে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

📝 ৩৯. ইলতুৎমিসের খ্যাতির তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: ইলতুৎমিস তাঁর দৃঢ় ব্যক্তিত্বে নবগঠিত সুলতানীকে স্থিতিশীল করেন। তিনি নতুন অঞ্চল জয় করে সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন এবং মোঙ্গল আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করেন।

📝 ৪০. ইলতুৎমিসের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
✅ উত্তর: ইলতুৎমিস ছিলেন দিল্লির তুর্কী সুলতানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিনি কুতুবউদ্দিনের হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করে নতুন রাজ্য জয় করেন ও দিল্লি সুলতানীর ভিত্তি স্থায়ী করেন। এজন্য তাঁকে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

📝 ৪১. ইলতুৎমিস ও বলবনের মধ্যবর্তীকালে কারা দিল্লির সুলতান ছিলেন?
✅ উত্তর: ইলতুৎমিসের পর রাজিয়া (১২৩৬–৪০), বাহরাম শাহ (১২৪০–৪২), মামুদ শাহ (১২৪২–৪৬) ও নাসিরউদ্দিন মামুদ (১২৪৬–৬৫) দিল্লির সিংহাসনে বসেন। এরপর নাসিরউদ্দিনের শ্বশুর গিয়াসউদ্দিন বলবন (১২৬৫–৮৭ খ্রিস্টাব্দ) সুলতান হন।

📝 ৪২. মেওয়াটী কারা ছিল? কে তাদের দমন করেন?
✅ উত্তর: মেওয়াটীরা ছিল রাজপুত দস্যু, যারা দিল্লির নিকটবর্তী বনাঞ্চলে আত্মগোপন করে লুঠতরাজ চালাত। গিয়াসউদ্দিন বলবন বনজঙ্গল পরিষ্কার করে ও সেনাশিবির স্থাপন করে তাদের দমন করেন।

📝 ৪৩. রাজিয়ার শাসনকালে কোন কোন বিদ্রোহ ঘটেছিল?
✅ উত্তর: রাজিয়ার শাসনকালে নূরউদ্দিনের নেতৃত্বে কিরামিতাহ ও মূলাহিদ নামক দুটি বিদ্রোহ ঘটে। প্রথম বিদ্রোহ তিনি শক্তি প্রয়োগে দমন করেন, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে আলতুনিয়াকে বিবাহ করে বিরোধ মেটান।

📝 ৪৪. ইক্‌তা ব্যবস্থা কী?
✅ উত্তর: ইক্‌তা অর্থ ‘এক অংশ’। এটি ছিল বিদেশ থেকে আগত একটি ভূমিদান ব্যবস্থা। ইলতুৎমিসের আমল থেকে আমির ও ওমরাহরা নিষ্কর ভূসম্পত্তি ভোগ করতেন, যাকে ইক্‌তা বলা হত এবং প্রাপককে বলা হত ইক্‌তাদার বা মুক্তি।

📝 ৪৫. ইক্‌তা ব্যবস্থার রাজনৈতিক গুরুত্ব কী?
✅ উত্তর: ইক্‌তা ব্যবস্থার মাধ্যমে সুলতান দূরবর্তী অঞ্চলগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতেন। এতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিজাতরা দিল্লি সুলতানীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অংশ হয়ে ওঠেন।

📝 ৪৬. তাজ-উল-মাসির গ্রন্থ সম্পর্কে যা জান লেখ।
✅ উত্তর: তাজ-উল-মাসির গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন হাসান নিজামি। তিনি মহম্মদ ঘোরীর সাথে ভারতে এসে বসবাস শুরু করেন। কুতুবউদ্দিন আইবক ও ইলতুৎমিসের রাজত্বকালের ইতিহাস জানতে এই গ্রন্থটি প্রামাণ্য হিসেবে স্বীকৃত।

📝 ৪৭. খাজাইন-উল-ফুতুহা গ্রন্থটি থেকে আমরা কী জানতে পারি?
✅ উত্তর: এই গ্রন্থটি দিল্লি দরবারের সভাকবি আমীর খসরুর রচনা। খাজাইন-উল-ফুতুহা থেকে খলজী ও তুঘলক রাজত্বের ইতিহাস জানা যায়; তাঁর আরও বিখ্যাত গ্রন্থ হলো মসনবী, তুঘলকনামা ও কিরাণ-উস্-সাদাইন।

📝 ৪৮. কুতুবউদ্দিনের স্থাপত্য কীর্তি আলোচনা কর।
✅ উত্তর: কুতুবউদ্দিন দিল্লিতে কোয়াত-উল-ইসলাম মসজিদ ও আজমীরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকীর্তি কুতুবমিনার, যা সুফী সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামে নামকরণ করা হয়।

📝 ৪৯. ইলতুৎমিসের উদ্যোগে দিল্লি কীভাবে ‘হজরত-ই-দিল্লিতে’ পরিণত হয়?
✅ উত্তর: ইলতুৎমিস দিল্লিতে মসজিদ, মাদ্রাসা, মিনার, অট্টালিকা ও জলাশয় নির্মাণ করে নগরটিকে সমৃদ্ধ করেন। মধ্য এশিয়ার বহু কবি, শিল্পী ও বিদ্বানকে আশ্রয় দিয়ে তিনি দিল্লিকে ইসলামীয় সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেন।

📝 ৫০. রাজিয়ার সিংহাসন আরোহণের গুরুত্ব কী ছিল?
✅ উত্তর: রাজিয়া প্রথম মহিলা হিসাবে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। উলেমাদের সমর্থন ছাড়াই দিল্লিবাসীর সমর্থনের দ্বারা উত্তরাধিকার সমস্যার সমাধান করেন এবং দিল্লি সুলতানীতে তিনি প্রথম ও একমাত্র মহিলা সুলতান হিসেবে ইতিহাসে অমর হন।

📝 ৫১. বলবন কত খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নিজেকে কার বংশধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন?
✅ উত্তর: ১২৬৬ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি নিজেকে পারস্যের পৌরাণিক বীর আফ্রসিয়ারের বংশধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

📝 ৫২. গিয়াসউদ্দিন বলবন সিংহাসন আরোহণকালে কোন সমস্যার সম্মুখীন হন?
✅ উত্তর: বলবন সিংহাসনে বসার সময় মেওয়াটি দস্যুদের দমন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির সমস্যা দেখা দেয়। তুর্কান-ই-চাহেলগানি গোষ্ঠীর প্রভাব এবং মঙ্গোলদের আক্রমণ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিপন্ন করে তোলে।

📝 ৫৩. গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজতান্ত্রিক আদর্শ কী ছিল?
✅ উত্তর: বলবন স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন এবং নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করতেন। তিনি দরবারে কঠোর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন ও রাজকীয় মর্যাদাকে সর্বোচ্চ স্থানে উন্নীত করেন।

📝 ৫৪. কোন সুলতান ‘লাল বস্ত্র’ ও ‘লাল জুতো’ নামে পরিচিত ছিলেন? কোন সুলতান নিজেকে ‘নিয়ামৎ-ই-খুদাই’ বলতেন?
✅ উত্তর: সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক ‘লাল জুতো’ ও ‘লাল বস্ত্র’ নামে পরিচিত ছিলেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন নিজেকে ‘নিয়ামৎ-ই-খুদাই’ বলতেন।

📝 ৫৫. সুলতান হলেন ‘জিল-ইল্লাহ’—মুদ্রায় এই কথা কে উৎকীর্ণ করেছিলেন? ‘জিল-ইল্লাহ’ শব্দের অর্থ কী?
✅ উত্তর: সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন মুদ্রায় উৎকীর্ণ করেছিলেন যে সুলতান হলেন ‘জিল-ইল্লাহ’। ‘জিল-ইল্লাহ’ শব্দের অর্থ হলো ‘ঈশ্বরের ছায়া’।

📝 ৫৬. ‘পাইবস’ ও ‘সিজদা’ কী?
✅ উত্তর: ‘পাইবস’ মানে সম্রাটের পদযুগল চুম্বন করা। ‘সিজদা’ মানে সিংহাসনের সামনে নতজানু হওয়া—এই দুটি পারসিক প্রথা গিয়াসউদ্দিন বলবন তাঁর দরবারে প্রচলন করেছিলেন।

📝 ৫৭. খলজী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও শ্রেষ্ঠ সুলতানদের নাম লেখ।
✅ উত্তর: খলজী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জালালউদ্দিন খলজী (১২৯০–৯৬ খ্রিস্টাব্দ) এবং এই বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান ছিলেন আলাউদ্দিন খলজী (১২৯৬–১৩১৬ খ্রিস্টাব্দ)।

📝 ৫৮. খলজী বিপ্লব বলতে কী বোঝ?
✅ উত্তর: দিল্লির ইলবারি তুর্কীবংশের শেষ সুলতান কায়কোবাদের (১২৮৭–৯০ খ্রিস্টাব্দ) আমলে অ-তুর্কী অভিজাতরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। অসুস্থ কায়কোবাদকে যমুনার জলে ফেলে দিয়ে এবং তাঁর পুত্র কায়ুমার্সকে সরিয়ে দিয়ে মালিক ফিরোজ নিজেকে ‘জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজী’ নামে দিল্লির সুলতান ঘোষণা করেন। এই ঘটনাই ইতিহাসে ‘খলজী বিপ্লব’ নামে পরিচিত।

📝 ৫৯. খলজী বিপ্লবের গুরুত্ব কী?
✅ উত্তর: খলজী বিপ্লব প্রমাণ করে যে দিল্লির সিংহাসনে বংশানুক্রমিক অধিকারই শেষ কথা নয়—অস্ত্রশক্তি ও সংগঠনের বলেও সুলতান হওয়া যায়। মামলুক রাজবংশের অবসান ঘটে। জাতিগত স্বেচ্ছাচারিতার শাসনের অবসান হয় এবং এই বিপ্লব মধ্যযুগীয় রাজনীতিতে গণ-ইচ্ছার গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

📝 ৬০. ‘নব মুসলমান’ কাদের বলা হত?
✅ উত্তর: ১২৯২ খ্রিস্টাব্দে খলজী সুলতান জালালউদ্দিনের সময় মোঙ্গল নেতা হলাগুর পৌত্র আবদুল্লা দেড় লক্ষ মোঙ্গল সৈন্যসহ ভারত আক্রমণ করেন এবং পরাজিত হন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হলে সেই মোঙ্গল সৈন্যরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এদেরই বলা হত ‘নব মুসলমান’।

📝 ৬১. আলাউদ্দিন কোন সময় দক্ষিণ ভারতের কোন কোন অঞ্চল জয় করেন এবং তখন সেইসব অঞ্চলের শাসক কারা ছিলেন?
✅ উত্তর: মালিক কাফুরের নেতৃত্বে আলাউদ্দিন ১৩০৬–০৭ খ্রিস্টাব্দে দেবগিরির যাদব রাজ্য, ১৩০৯-এ তেলেঙ্গানার কাকতীয় রাজ্য, ১৩১০-এ দ্বারসমুদ্র ও পাণ্ড্যরাজ্য এবং ১৩১৩-এ পুনরায় দেবগিরি জয় করেন। তখন দেবগিরির রাজা ছিলেন রামচন্দ্র দেব, তেলেঙ্গানার রাজা প্রতাপ রুদ্র এবং পাণ্ড্য রাজ্যের শাসক ছিলেন বীর ও সুন্দর পাণ্ড্য।

📝 ৬২. আলাউদ্দিন খলজীর দাক্ষিণাত্য অভিযানের গুরুত্ব কী ছিল?
✅ উত্তর: মুসলমান শাসন পূর্বে কেবল উত্তর ভারতে সীমাবদ্ধ থাকলেও আলাউদ্দিন প্রথম দক্ষিণ ভারতে তার বিস্তার ঘটান। মালিক কাফুরের নেতৃত্বে দেবগিরি, বরঙ্গল, দ্বারসমুদ্র ও পাণ্ড্যরাজ্য জয় করে দক্ষিণ ভারতে মুসলমান প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তিনি এই রাজ্যগুলোকে দিল্লি সুলতানীর অন্তর্ভুক্ত না করে কেবল আনুগত্য ও বার্ষিক কর গ্রহণে সন্তুষ্ট হন।

📝 ৬৩. আলাউদ্দিন খলজীর উত্তর ও দক্ষিণ ভারত অভিযানের পার্থক্য কী ছিল?
✅ উত্তর: আলাউদ্দিনের উত্তর ভারত অভিযান ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে স্থায়ী সাফল্যমণ্ডিত, কারণ তিনি সেগুলোকে সরাসরি দিল্লি সুলতানীর অন্তর্ভুক্ত করেন। অপরদিকে দক্ষিণ ভারত অভিযান মূলত সামরিক ও মর্যাদাগত ছিল; তিনি সেখানকার রাজাদের স্বাধীনতা বজায় রেখে কেবল কর গ্রহণ করেন। অর্থাৎ উত্তর অভিযান ছিল সংযুক্তিকরণমূলক, আর দক্ষিণ অভিযান ছিল আনুগত্যমূলক।

📝 ৬৪. আলাউদ্দিন উত্তর ভারতের কোন কোন রাজ্য জয় করেন?
✅ উত্তর: আলাউদ্দিন উত্তর ভারতে গুজরাট রাজ্যের রাজপুত রাজা কর্ণদেব (১২৯৮ খ্রি.), রণথম্ভোরের চৌহান রাজা হামিরদেব (১২৯৯–১৩০১ খ্রি.), চিতোরের রাজা রতনসিংহ (১৩০৩ খ্রি.) এবং মালওয়ার রাজা মহলক দেব (১৩০৫ খ্রি.)-কে পরাজিত করেন। এইসব জয়ের ফলে উত্তর ভারতে দিল্লি সুলতানীর কর্তৃত্ব সুদৃঢ় হয়।

📝 ৬৫. আলাউদ্দিনের চিতোর অভিযানের তাৎপর্য কী ছিল?
✅ উত্তর: ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে আলাউদ্দিন চিতোর অভিযানে বের হন। চিতোর দুর্গ স্বাধীনতা ও শক্তির প্রতীক হিসেবে রণথম্ভরের পথে রণথঞ্জোরের অধীনে অবস্থান করেছিল। তাই এটি দিল্লির মুসলমান শক্তির জন্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হয়। ইতিহাসবিদরা এটিকে উত্তর ভারতের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে মনে করেন।

📝 ৬৬. 'পদ্মিনী কাহিনী' কী? এটি কতখানি ইতিহাসভিত্তিক?
✅ উত্তর: পদ্মিনী ছিলেন মেবারের রাণা রতন সিংহের স্ত্রী, যিনি অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। আলাউদ্দিনের মেবার আক্রমণের সঙ্গে তার নাম যুক্ত করা হয়। মালিক মুহম্মদ জয়সী রচিত ‘পদ্মাবৎ’ গ্রন্থে এটি বর্ণিত হয়েছে। তবে আধুনিক গবেষকরা এটিকে ইতিহাসভিত্তিক মনে করেন না, কারণ সমসাময়িক ঐতিহাসিক খসরু, ইসামী, বারণীর রচনায় পদ্মিনীর কোনো উল্লেখ নেই এবং ‘পদ্মাবৎ’ রচিত হয় আলাউদ্দিনের মেবার জয়ের ২৫০ বছর পরে।

📝 ৬৭. আলাউদ্দিন খলজীর কোন সেনাপতি দাক্ষিণাত্য জয় করেন? আলাউদ্দিন কোথা থেকে তাকে সংগ্রহ করেন?
✅ উত্তর: দাক্ষিণাত্য অভিযান প্রধানত মালিক কাফুরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। আলাউদ্দিন তাকে গুজরাট বিজয়ের সময় ক্যাম্বে বন্দরের কাছ থেকে ক্রীতদাস হিসেবে সংগ্রহ করে দিল্লিতে নিয়ে আসেন। কাফুর দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে আলাউদ্দিনের অন্যতম প্রধান সেনাপতি হন এবং শেষ জীবনে সুলতানীর প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।

📝 ৬৮. আলাউদ্দিনের চারজন প্রধান সহযোগীর নাম লেখ।
✅ উত্তর: আলাউদ্দিনের চারজন প্রধান সহযোগী ছিলেন—উলুখ বা জাফর খাঁ, নুসরাত, আলপ এবং মালিক কাফুর। আলাউদ্দিন বলতেন, এই চারজনের সহায়তায় তিনি সাম্রাজ্য স্থাপন ও নিজের শাসন শক্তিশালী করতে সক্ষম হন।

📝 ৬৯. আলাউদ্দিনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ফলাফল আলোচনা কর।
✅ উত্তর: আলাউদ্দিন খাদ্যদ্রব্যের দাম অত্যন্ত কম স্থির করেছিলেন। এর ফলে বণিক ও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ইতিহাসবিদ বারণীর মতে সাধারণ জনগণ ও সেনাদল উপকৃত হয়। মধ্যযুগের প্রেক্ষাপটে এটি অভিনব ব্যবস্থা ছিল। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। ধনীকে বঞ্চিত করে দরিদ্রকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগে ব্যবস্থা ভেঙে যায়।

📝 ৭০. আলাউদ্দিন খলজীর রাজত্বকালে কোন্ কোন্ বিদ্রোহ ঘটেছিল এবং বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার প্রধান ত্রুটিগুলি কী ছিল?
✅ উত্তর: শাসনের প্রথম দিকে আকৎ খাঁ, আমীর উমর, মুঙ্গ খাঁ, হাজি মৌলা ও নবমুসলমানদের বিদ্রোহ ঘটে। বিদ্রোহের মূল ত্রুটি ছিল সুলতানের জনসাধারণের প্রতি অজ্ঞতা, অভিজাতদের একত্রিত হওয়া ও মদ্যপান, সম্পদের অধিকার, পারস্পরিক বিবাহ প্রভৃতি সম্পর্কের মাধ্যমে শক্তি সংহতি এবং সুলতানের বিরুদ্ধে চক্রান্তের সুযোগ সৃষ্টি।

📝 ৭১. আলাউদ্দিনের বিদ্রোহের ত্রুটিগুলি দূর করার জন্য কোন্ কোন্ নির্দেশনামা জারি করেছিলেন?
✅ উত্তর: আলাউদ্দিন প্রথম নির্দেশনায় সমস্ত দান ও অবসরগ্রহণ সংক্রান্ত জমি রাষ্ট্রায়ত্ত করেন। দ্বিতীয় নির্দেশনায় গুপ্তচর বাহিনী পুনর্গঠন করা হয়। তৃতীয় নির্দেশ অনুযায়ী দেশে মাদক দ্রব্য নিষিদ্ধ করা হয়। চতুর্থ নির্দেশে অভিজাতদের অনুমতি ছাড়া পারস্পরিক বিবাহ বা মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়।

📝 ৭২. আলাউদ্দিন কীভাবে তাঁর ক্ষমতার সুদৃঢ়করণ করেছিলেন?
✅ উত্তর: আলাউদ্দিন স্বার্থপর অভিজাতদের দুর্বল করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি সুলতান-বিরোধী শক্তি দূর করেন। উলেমাদের প্রভাব সীমিত করেন। ফলে অভিজাতদের কোনো চক্রান্ত ক্ষমতা থাকে না এবং সুলতানের ক্ষমতা সুদৃঢ় হয়।

📝 ৭৩. আলাউদ্দিন কর্তৃক দেবগিরি বিজয়ের গুরুত্ব কী?
✅ উত্তর: দেবগিরি বিজয়ের মাধ্যমে আলাউদ্দিন দক্ষিণ ভারতে মুসলমান শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেন। এর ফলে দিল্লি সুলতানাতের প্রভাব উত্তরভারতের বাইরে বিস্তৃত হয়। এই বিজয় দক্ষিণ ভারতের সম্পদ আহরণের পথও উন্মুক্ত করে।

📝 ৭৪. আলাউদ্দিন বিদ্রোহের কী কী কারণ নির্ণয় করেছিলেন?
✅ উত্তর: তিনি বিদ্রোহের কারণ হিসেবে গুপ্তচর ব্যবস্থার দুর্বলতা, অভিজাতদের মদ্যপান ও ষড়যন্ত্র, পারস্পরিক বিবাহ ও আর্থিক স্বচ্ছলতা নির্ণয় করেন। এসব কারণ অভিজাতদের সুলতান-বিরোধী করে তোলে।

📝 ৭৫. আলাউদ্দিনের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা কী ছিল?
✅ উত্তর: তাঁর শাসন সামরিক শক্তিনির্ভর ছিল, যা স্থায়ী হতে পারেনি। কৃষক ও হিন্দু রাজপুতদের অসন্তোষও শাসনকে দুর্বল করে দেয়।

📝 ৭৬. ‘দেবলরানী খিজির খাঁ’ গ্রন্থ কার রচনা? এর বিষয়বস্তু কী?
✅ উত্তর: এটি আমীর খসরুর রচনা। এতে দেবলাদেবী ও খিজির খাঁর প্রেমকাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

📝 ৭৭. আলাউদ্দিনের শাসনকালে ‘দাগ’ ও ‘হুলিয়া’ বলতে কী বোঝায়?
✅ উত্তর: ‘দাগ’ ছিল ঘোড়ার শরীরে মালিকানার চিহ্ন। ‘হুলিয়া’ ছিল সৈন্যদের বর্ণনা-নথি, যাতে সেনাদলের দুর্নীতি রোধ করা যায়।

📝 ৭৮. খলজী কারা?
✅ উত্তর: খলজীরা মূলত তুর্কি জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু দীর্ঘকাল ভারতে বসবাস করে হিন্দুস্থানী মুসলিম হিসেবে পরিচিত হন। আফগানিস্তানের ‘খলজ’ অঞ্চলে বসবাস করায় তাদের খলজী বলা হয়। জালালউদ্দিন খলজী অযোগ্য কাইকোবাদকে হত্যা করে এই বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।

📝 ৭৯. ‘সার-ই-জান্দার’ কী?
✅ উত্তর: এটি তুর্কি সুলতানদের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ ছিল। জালালউদ্দিন খলজী এই পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন।

📝 ৮০. জিজিয়া কর কী? কে তা প্রবর্তন করেন?
✅ উত্তর: জিজিয়া ছিল অ-মুসলিম প্রজাদের উপর ধার্য বিশেষ কর। সুলতান আলাউদ্দিন খলজী এই কর প্রবর্তন করেন।

📝 ৮১. জালালি অভিজাত কাদের বলা হয়?
✅ উত্তর: যারা জালালউদ্দিন খলজীর অধীনে উচ্চপদে আসীন ও তাঁর অনুগত ছিলেন, তাদের জালালি অভিজাত বলা হত। এদের মধ্যে আহম্মদ চাগ উল্লেখযোগ্য।

📝 ৮২. আলাউদ্দিন ‘সাহানা-ই-মাণ্ডি’ পদে কাকে নিয়োগ করেছিলেন? ‘সরা-ই-আদল’ কী?
✅ উত্তর: আলাউদ্দিন ‘সাহানা-ই-মাণ্ডি’ পদে উলুঘ খাঁ-কে নিয়োগ করেছিলেন। ‘সরা-ই-আদল’ ছিল তাঁর নির্দেশে স্থাপিত নিয়ন্ত্রিত বাজার, যেখানে বস্ত্র, ঘি, চিনি ও জ্বালানি তেল বিক্রি হত।

📝 ৮৩. নাসিরউদ্দিন খসরু শাহ কে ছিলেন?
✅ উত্তর: নাসিরউদ্দিন খসরু শাহ ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তিনি মুবারক খলজীর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং পরে তাঁকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেন।

📝 ৮৪. ‘সহাদ আমীর’ কাদের বলা হত?
✅ উত্তর: ‘সহাদ আমীর’ ছিলেন দক্ষিণ ভারতের সুলতানি সাম্রাজ্যের তত্ত্বাবধায়ক আধা-সামরিক কর্মকর্তা। আলাউদ্দিন খলজী দক্ষিণ ভারত বিজয়ের পর এই পদ প্রবর্তন করেন।

📝 ৮৫. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? তিনি কীভাবে নিহত হন?
✅ উত্তর: তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গিয়াসউদ্দিন তুঘলক। বাংলাদেশ জয় শেষে দিল্লি ফেরার পথে আফগানপুরে সংবর্ধনার জন্য নির্মিত তোরণ চাপা পড়ে তিনি নিহত হন। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি মহম্মদ-বিন-তুঘলকের ষড়যন্ত্রের ফল ছিল।

📝 ৮৬. তুঘলকদের প্রথম জীবন সম্পর্কে কী জানা যায়?
✅ উত্তর: তুঘলক বংশের আদি ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। মহম্মদ-বিন-তুঘলকের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, বলবনের রাজত্বশেষে তাঁর পিতা গাজি মালিক ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে অচেনা অবস্থায় ভারতে আগমন করেন।

📝 ৮৭. গিয়াসউদ্দিনের রাজস্ব সংস্কার সম্পর্কে কী জানা যায়?
✅ উত্তর: গিয়াসউদ্দিন তুঘলক রাজস্ব ব্যবস্থায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করেছিলেন। বন্যা বা খরার কারণে জমির উৎপাদন ব্যাহত হলে কৃষকদের খাজনা মকুবের নির্দেশ দেন, যা তাঁর প্রজাহিতৈষী মনোভাবের প্রমাণ।

📝 ৮৮. গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে কী জানা যায়?
✅ উত্তর: সিংহাসনে আরোহণের পর গিয়াসউদ্দিন রাজকোষ পুনরুদ্ধারে মনোযোগ দেন। রাজস্ব সংস্কারের মাধ্যমে তিনি আলাউদ্দিনের নীতি ও নিজের চিন্তাধারার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক স্থিতি আনতে সচেষ্ট হন।

📝 ৮৯. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের রাজস্ব ব্যবস্থার ফল কী হয়েছিল?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলক দোয়াব অঞ্চলে করের হার বাড়ালে কৃষকরা চরমভাবে নির্যাতিত হয়। ফলে উৎপাদন কমে যায় ও খাদ্যাভাব দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত কৃষকদের সাহায্য দেরিতে পৌঁছানোয় বহু মানুষ মারা যায়।

📝 ৯০. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের খোরাসান অভিযান কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
✅ উত্তর: খোরাসান অভিযানের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল। কিন্তু পারস্য ও মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অভিযান স্থগিত করতে হয়। ফলে বিপুল রাজকোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং সেনাদল ভেঙে দিতে বাধ্য হন।

📝 ৯১. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের কারাজল অভিযান কেন ব্যর্থ হয়?
✅ উত্তর: খোরাসান জয়ের প্রথম ধাপ হিসেবে কারাজল অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু বর্ষার সময়ে সেনাদের মধ্যে বিপর্যয় দেখা দেয়, খাদ্যাভাব ও রোগব্যাধিতে সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হয়।

📝 ৯২. কেন মহম্মদ-বিন-তুঘলক উত্তর ও দক্ষিণ ভারতকে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলকের মূল লক্ষ্য ছিল সমগ্র ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক ফারাক দূর করে একক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

📝 ৯৩. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলক অর্থনীতি, প্রশাসন ও কূটনীতিতে একাধারে প্রগতিশীল ও দূরদর্শী ছিলেন। তিনি ভারতের ঐক্য, দক্ষ প্রশাসন ও বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যসম্পর্ক স্থাপনের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।

📝 ৯৪. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমলে কোন সময় মোঙ্গল আক্রমণ ঘটেছিল?
✅ উত্তর: ১৩২৭ খ্রিস্টাব্দে তরমাসিরিন নামে এক মোঙ্গল নেতা বিশাল বাহিনী নিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। লামঘান ও মুলতান জয় করে তিনি দিল্লির দিকে অগ্রসর হন, কিন্তু সুলতান যুদ্ধ না করে প্রচুর ধনরত্ন দিয়ে তাঁকে শান্ত করেন।

📝 ৯৫. ইসামীর বর্ণনায় মোঙ্গল আক্রমণ সম্পর্কে কী জানা যায়?
✅ উত্তর: ইসামীর মতে, মুলতান অঞ্চলে মোঙ্গল আক্রমণের খবর পেয়ে সুলতান মহম্মদ-বিন-তুঘলক সৈন্য সমাবেশ করেন। প্রথমে মোঙ্গলরা সুবিধা পেলেও পরে সুলতানের বাহিনী বিজয়ী হয় এবং আক্রমণকারীরা পিছু হটে।

📝 ৯৬. মহম্মদ-বিন-তুঘলককে ‘পাগলা রাজা’ বলা কি যুক্তিসঙ্গত?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলকের পরিকল্পনাগুলি ছিল দূরদর্শী ও বাস্তবভিত্তিক, তবে তাড়াহুড়ো ও প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে ব্যর্থ হয়। দর্শন ও বিজ্ঞানে তিনি অগ্রগামী ছিলেন, তাই তাঁকে ‘পাগলা রাজা’ বলা অন্যায়।

📝 ৯৭. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমলে কোন বিদেশি পর্যটক ভারতে আসেন এবং তাঁর গ্রন্থের নাম কী?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমলে আফ্রিকার বিখ্যাত পর্যটক ইবন বতুতা ভারতে আসেন। তাঁর রচিত ভ্রমণবৃত্তান্তের নাম ‘রেহালা’, যেখানে তিনি তুঘলকের চরিত্র ও রাজত্বের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।

📝 ৯৮. সুলতানীর পতনে মহম্মদ-বিন-তুঘলক কতখানি দায়ী ছিলেন?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলকের বিভিন্ন পরিকল্পনা মৌলিক ও যুক্তিপূর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেননি। দক্ষিণী আমীরদের বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হন। তাঁর অস্থির মেজাজ ও অবাস্তব সিদ্ধান্তের ফলে সাম্রাজ্যের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সুলতানীর পতনের পথ প্রশস্ত হয়।

📝 ৯৯. দিল্লির কোন শাসককে ‘সুলতানী যুগের আকবর’ বলা হয় এবং কেন?
✅ উত্তর: ফিরোজ তুঘলককে ‘সুলতানী যুগের আকবর’ বলা হয়। কারণ তাঁর আমলে কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটে। তিনি কর হ্রাস, খাল খনন, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল নির্মাণের মতো জনহিতকর কাজ করেন। যেমন আকবর মুঘল যুগে উন্নয়নের প্রতীক, তেমনি ফিরোজ তুঘলক সুলতানী যুগে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

📝 ১০০. আফ্রিকার কোন পর্যটক মহম্মদ-বিন-তুঘলকের রাজত্বকালে ভারত ভ্রমণে আসেন? তাঁকে কোন রাজ্যে দূত হিসেবে পাঠানো হয়?
✅ উত্তর: আফ্রিকার বিখ্যাত পর্যটক ইবন বতুতা মহম্মদ-বিন-তুঘলকের রাজত্বকালে ভারত ভ্রমণে আসেন। তাঁকে প্রচুর উপঢৌকনসহ ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দে চীন সম্রাট তোঘান তিমুরের দরবারে দূত হিসেবে পাঠানো হয়।

📝 ১০১. সুলতানী যুগের কোন কোন স্থাপত্য নিদর্শন বঙ্গদেশে পাওয়া গেছে?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে বঙ্গদেশে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য গড়ে ওঠে। এর মধ্যে প্রধান হলো পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ, গৌড়ের বড় সোনা মসজিদ, ছোট সোনা মসজিদ এবং কদমরসুল দরগাহ। এসব স্থাপত্য সুলতানী আমলের শিল্প-ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন।

📝 ১০২. ফিরোজ তুঘলককে ‘সুলতানী যুগের আকবর’ বলা কী যুক্তিযুক্ত?
✅ উত্তর: ফিরোজ তুঘলকের জনহিতকর কাজের জন্য কেউ কেউ তাঁকে ‘সুলতানী যুগের আকবর’ বলেছেন। তবে এই আখ্যা পুরোপুরি সঠিক নয়। আকবরের মতো উদারনৈতিক চিন্তা বা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা তাঁর মধ্যে ছিল না। তাই বলা যায়, ফিরোজ তুঘলক সমাজকল্যাণমূলক কাজ করলেও আকবরের সমতুল্য ছিলেন না।

📝 ১০৩. ফিরোজ তুঘলকের কয়েকটি জনকল্যাণমূলক কাজের বিবরণ দাও।
✅ উত্তর: ফিরোজ তুঘলক প্রজাদের কল্যাণে বহু সংস্কারমূলক কাজ করেন। তিনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য দপ্তর স্থাপন করেন। দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তায় ‘দেওয়ান-ই-খয়রাত’ নামে একটি তহবিল গঠন করেন। কৃষি উন্নতির জন্য খাল খনন, সেচব্যবস্থা, এবং করছাড়ের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রেও তিনি বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

📝 ১০৪. কোন গ্রন্থে গাজী মালিককে 'তুঘলক গাজী' নামে অভিহিত করা হয়েছে? গিয়াসউদ্দিন কোন বংশজাত ছিলেন?
✅ উত্তর: আমীর খসরুর ‘তুঘলকনামা’ গ্রন্থে গাজী মালিককে ‘তুঘলক গাজী’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। গিয়াসউদ্দিন ছিলেন কোরানা তুর্কী বংশজাত।

📝 ১০৫. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের প্রকৃত নাম এবং প্রথম জীবনে তাঁর নাম কী ছিল?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলকের প্রকৃত নাম ছিল জুনা বা জৌনা খাঁ। প্রথম জীবনে তাঁর নাম ছিল মালিক ফকরউদ্দিন জুনা।

📝 ১০৬. উলুখ খাঁ উপাধি কে কাকে দিয়েছিলেন? কোরানা তুর্কী বংশের দু’জন শাসকের নাম লেখ।
✅ উত্তর: গিয়াসউদ্দিন তুঘলক তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র জুনা খাঁ-কে উলুখ খাঁ উপাধি দেন। কোরানা তুর্কী বংশের দুইজন শাসক হলেন মহম্মদ-বিন-তুঘলক ও ফিরোজ তুঘলক।

📝 ১০৭. মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমলে কোথায় কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল এবং কেন?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমলে দোয়াব অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল। সুলতান ওই অঞ্চলের কৃষকদের উপর অত্যধিক ভূমিরাজস্ব আরোপ করেন এবং তা কঠোরভাবে আদায়ের ব্যবস্থা করেন। কর দিতে অপারগ কৃষকরা এ নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

📝 ১০৮. কে প্রথম নিজেকে ‘খলিফার প্রতিনিধি’ বা ‘খলিফার নায়েব’ বলে ঘোষণা করেন? দিল্লি সুলতানীর কোন শাসক কৃষিসংস্কার করেন?
✅ উত্তর: মুসলমান শাসকদের মধ্যে ফিরোজ তুঘলক প্রথম নিজেকে ‘খলিফার প্রতিনিধি’ বা ‘খলিফার নায়েব’ বলে ঘোষণা করেন। তিনিই দিল্লি সুলতানীর একজন কৃষিসংস্কারক শাসক হিসেবে পরিচিত।

📝 ১০৯. শাসনতন্ত্রকে ফিরোজ কী বলে গণ্য করতেন? তিনি কোন দুই বিবরণীকারের পৃষ্ঠপোষকতা করেন?
✅ উত্তর: ফিরোজ তুঘলক শাসনতন্ত্রকে একটি ‘প্রজাহিতকর কার্যব্যবস্থা’ বলে গণ্য করতেন। তিনি বিখ্যাত দুই ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারণী ও শামস্-ই-সিরাজ আফিফ-এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।

📝 ১১০. দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে ফিরোজ তুঘলক কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন?
✅ উত্তর: ফিরোজ তুঘলক দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে ত্রাণ ব্যবস্থার প্রসার ঘটান। তিনি বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, কূপ ও খাল খনন, এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। এসব ব্যবস্থার ফলে দুর্ভিক্ষের প্রভাব কিছুটা লাঘব হয়েছিল।

📝 ১১১. ‘দার-উল-সাফা’ কী?
✅ উত্তর: ফিরোজ তুঘলক দিল্লিতে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন, যার নাম ছিল ‘দার-উল-সাফা’। এই প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণের ব্যবস্থা ছিল।

📝 ১১২. ‘দেওয়ান-ই-খয়রাত’ কী?
✅ উত্তর: দেশে দরিদ্র মুসলমান পরিবারের মেয়েদের বিবাহ ও অসহায় জনগণের সাহায্যের জন্য ফিরোজ তুঘলক যে দপ্তর স্থাপন করেন, তার নাম ‘দেওয়ান-ই-খয়রাত’। এটি ছিল এক প্রকার সামাজিক কল্যাণ দপ্তর।

📝 ১১৩. ‘দেওয়ান-ই-কোহী’ কী?
✅ উত্তর: রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও অর্থ সহায়তায় অবিকশিত জমিকে কৃষিযোগ্য জমিতে রূপান্তর করার জন্য মহম্মদ-বিন-তুঘলক ‘দেওয়ান-ই-কোহী’ নামে একটি বিভাগ স্থাপন করেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল কৃষি উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি।

📝 ১১৪. দিল্লীর সুলতানী শাসনের অবসানের কয়েকটি অভ্যন্তরীণ কারণ উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: দিল্লীর সুলতানীর পতনের মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো—(১) জনগণের আনুগত্যের অভাব, (২) সামাজিক শক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, (৩) আমীর ওমরাহ ও প্রাদেশিক শাসকদের ষড়যন্ত্র, (৪) সুলতানদের অত্যধিক বিলাসব্যসন, (৫) ক্রমান্বয়ে সুযোগ্য সুলতানের অভাব।

📝 ১১৫. সুলতানী সাম্রাজ্যের ভাঙনের মুখে উদ্ভুত স্বাধীন রাজ্যগুলি কী কী?
✅ উত্তর: উত্তর ও পশ্চিম ভারতের মুসলমান শাসিত স্বাধীন রাজ্যগুলো—জৌনপুর, মালব, গুজরাট, কাশ্মীর। দক্ষিণ ভারতের মুসলমান রাজ্যগুলো—খান্দেশ, বেরার, গোলকুন্ডা, আহম্মদনগর, বিজাপুর। হিন্দু শাসিত স্বাধীন রাজ্যগুলো—বিজয়নগর, ওড়িশা, মেবার, কামরূপ, আসাম, নেপাল।

📝 ১১৬. তৈমুর লঙ কে ছিলেন?
✅ উত্তর: তৈমুর লঙ চাঘতাই তুর্কী গোষ্ঠীর লোক। তিনি ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে সমরখন্দে জন্মগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালে পায়ে আঘাত পাওয়ার কারণে তাকে তৈমুর লঙ নামে ডাকা হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে তিনি মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।

📝 ১১৭. তৈমুর লঙ কত খ্রিস্টাব্দে এবং কোন সুলতানের আমলে ভারত আক্রমণ করেন? তাঁর আত্মকথার নাম কী?
✅ উত্তর: তৈমুর লঙ তুঘলক বংশের শেষ সুলতান নাসিরউদ্দিন মামুদের আমলে ভারত আক্রমণ করেন। তাঁর আত্মকথার নাম মালফুজৎ-ই-তৈমুরী, যা তাঁর সৈন্যবাহিনী ও তাদের কীর্তি সুবিস্তারে বর্ণনা করে।

📝 ১১৮. তৈমুর লঙের আক্রমণের ফলে দিল্লীর অবস্থা কী হয়েছিল?
✅ উত্তর: তৈমুর লঙ নাসিরউদ্দিন মামুদকে পরাজিত করে দিল্লীতে প্রবেশ করেন। তাঁর সেনারা অবাধে লুঠতরাজ চালায়, হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে এবং বহু শহর ও গ্রাম ধ্বংস করে। দিল্লী নগরী শ্বশানে পরিণত হয়, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়।

📝 ১১৯. দিল্লীতে সৈয়দ ও লোদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠার সন উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙের অনুচর খিজির খাঁ সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের ‘লোদী’ জাতির নেতা বহলুল লোদী লোদী বংশের সূচনা করেন।

📝 ১২০. সুলতানী আমলের কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম কর।
✅ উত্তর: সুলতানী আমলের বিখ্যাত ঐতিহাসিকরা হলেন—মিনহাজ-উস-সিরাজ, আইন-উল-মূলক, জিয়াউদ্দিন বারণী প্রমুখ।

📝 ১২১. খিজির খাঁ কোন্ বিদেশী শাসকের অধীনস্থ ছিলেন? মুবারক শাহ কে?
✅ উত্তর: খিজির খাঁ তৈমুর লঙের পুত্র শাহরুখ খাঁ-এর অধীনস্থ ছিলেন। খিজির খাঁর পুত্র হলেন মুবারক শাহ।

📝 ১২২. লোদীরা কারা? কে কত খ্রীস্টাব্দে লোদী শাসনের সূচনা করেন?
✅ উত্তর: লোদীরা ছিলেন আফগানের অধিবাসী। বহলুল লোদী ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসনে বসে ‘লোদী বংশের’ সূচনা করেন।

📝 ১২৩. সিকন্দর লোদী কত খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন? লোদী বংশের শেষ সুলতান কে ছিলেন?
✅ উত্তর: বহলুল লোদীর পুত্র নিজাম খাঁ ‘সিকন্দর শাহ’ উপাধি নিয়ে (১৪৮৯–১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ) সিংহাসনে আরোহণ করেন। লোদী বংশের শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদী (১৫১৭-২৬ খ্রিস্টাব্দ)।

📝 ১২৪. লোদী বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন? ইব্রাহিম লোদী কত খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসন আরোহণ করেন?
✅ উত্তর: লোদী বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন সিকন্দর লোদী। ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে সিকন্দর লোদীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইব্রাহিম লোদী দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।

📝 ১২৫. ইব্রাহিম লোদীর সময় পাঞ্জাবের শাসনকর্তা কে ছিলেন? লোদী বংশের বিশ্বাসঘাতক কে ছিলেন?
✅ উত্তর: ইব্রাহিম লোদীর সময় পাঞ্জাবের শাসনকর্তা ছিলেন দৌলত খাঁ লোদী। দৌলত খাঁ লোদী কাবুলের নৃপতি বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান, যার ফলে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে লোদী বংশ ধ্বংস হয়। তাই তাকে লোদী বংশের বিশ্বাসঘাতক বলা হয়।

📝 ১২৬. ইব্রাহিম লোদীর আমলের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা কী?
✅ উত্তর: ইব্রাহিম লোদীর সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল পাণিপথের প্রথম যুদ্ধ, যা ভারতের ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।

📝 ১২৭. মহম্মদ হাবিবের মতে নগর বিপ্লব ও গ্রামীণ বিপ্লব কী?
✅ উত্তর: ডঃ মহম্মদ হাবিব মনে করেন সুলতানী যুগে নগর ও গ্রামীণ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছিল। ১. নতুন শাসকরা শিল্পপণ্যের উৎপাদনে প্রবল আগ্রহী ছিলেন, শিল্পীর জাতপাত বিবেচনা করতেন না। ২. সুলতানরা গ্রাম থেকে অধিক রাজস্ব আদায়ে আগ্রহী ছিলেন, যার ফলে আলাউদ্দিন খলজী মধ্যস্বত্বভোগীদের অপসারণ করেছিলেন। এই দুটি পরিবর্তনকে তিনি যথাক্রমে ‘নগর বিপ্লব’ ও ‘গ্রামীণ বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন।

📝 ১২৮. মহম্মদ-বিন-তুঘলক কৃষির উন্নতিকল্পে কী করেছিলেন?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলক কৃষির উন্নতির জন্য কূপ খনন করান। তিনি কৃষকদের জন্য ‘সৌন্ধর’ বা কৃষিঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া একটি রাষ্ট্রীয় নির্দেশনামা প্রণয়ন করা হয়েছিল, যা সুলতানী যুগে কৃষির জন্য অভিনব উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত।

📝 ১২৯. Persian Wheel বা জলচক্র কী?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে বলদ ও ঘোড়ার সাহায্যে চাকা ঘুরিয়ে জলসেচের পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়। একে ‘জলচক্র’ বা ‘Persian Wheel’ বলা হত। এর ফলে কৃষিজমিতে জল সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত।

📝 ১৩০. 'খুৎ' ও 'বলাহার' কাদের বলে?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে ‘খুৎ’ বলতে গ্রামের প্রধান বা সম্পন্ন কৃষককে বোঝানো হত, যাদের জমির আয়তন বড়। প্রান্তিক বা দরিদ্র চাষীকে বলা হত ‘বলাহার’, যাদের জমির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে সামান্য।

📝 ১৩১. সুলতানী যুগের সকল আবাদি জমিকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগের সকল আবাদি জমি চারভাগে বিভক্ত করা হতো—(১) খালিসা জমি, (২) ইকতা, (৩) হিন্দু-প্রধানদের অধীনস্থ জমি, এবং (৪) ওয়াকফ সম্পত্তি। এই বিভাজনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ সহজতর করা হতো।

📝 ১৩২. 'খালিসা' জমি বলতে কী বোঝ?
✅ উত্তর: ‘খালিসা’ জমি হল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা খাস জমি। কেন্দ্রীয় সরকারের উজিরের দপ্তর থেকে সরাসরি এই জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হত। খুৎ, মুকাদ্দম, চৌধুরী, আমিল প্রভৃতি কর্মচারীরা এখান থেকে রাজস্ব আদায় করতেন।

📝 ১৩৩. 'ইকতা' কী?
✅ উত্তর: ইকতা একটি সামরিক ও প্রশাসনিক একক। ইকতার প্রাপককে ইক্তাদার বলা হত। ইক্তাদার সুলতান কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট ভূখন্ডের প্রশাসন চালাতেন এবং রাজস্ব আদায়ের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা দিতেন।

📝 ১৩৪. ওয়াকফ বলতে কী বোঝ?
✅ উত্তর: ওয়াকফ বা ইনাম ছিল ধর্মীয় বা পুরস্কার স্বরূপ নিষ্কর সম্পত্তি। মুসলিম পণ্ডিত, ধর্মজ্ঞানী ও সাধু-সন্তদের ধর্মীয় কারণে বিনা খাজনায় কিছু জমি ভোগের অধিকার দেওয়া হতো।

📝 ১৩৫. সুলতানী যুগের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার দুটি ত্রুটি উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার দুটি প্রধান ত্রুটি—(১) আলাউদ্দিন খলজী ও মহম্মদ-বিন-তুঘলক ব্যতীত অন্য কোন সুলতান জমি জরিপ করে রাজস্ব ধার্য করেননি, যার ফলে রাষ্ট্রের আয় কমে যেত। (২) খুৎ, মুকাদ্দম প্রভৃতিকে জমি ইজারা দেওয়ায় সরকারের রাজস্ব হ্রাস পেত।

📝 ১৩৬. ইকতা কয় প্রকার ও কী কী?
✅ উত্তর: একাদশ শতকের মুসলিম পণ্ডিত আবুল হাসান মাওয়ারদি ইকতাকে দুই প্রকারে ভাগ করেছেন—(১) ইকতা-ই-তমলিক এবং (২) ইকতা-ই-ইস্তিঘলাল।

📝 ১৩৭. “ইকতা-ই-তমলিক” ও “ইকতা-ই-ইস্তিঘলাল” বলতে কী বোঝ?
✅ উত্তর: ইকতা-ই-তমলিক সরকারী প্রশাসন ও রাজত্ব বন্টন এবং রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ইকতা-ই-ইস্তিঘলাল ছিল সরকারী অনুদান, যা প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রদত্ত এবং সরাসরি রাজস্ব সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।

📝 ১৩৮. কোন শাসক 'খোয়াজা' নিযুক্ত করেন? খোয়াজের কাজ কী?
✅ উত্তর: গিয়াসউদ্দিন বলবন ইক্তাদারদের ফাঁকি রোধের জন্য প্রত্যেক ইকতায় ‘খোয়াজা’ নামে একশ্রেণীর হিসাব-পরীক্ষক নিয়োগ করেছিলেন। খোয়াজাদের কাজ ছিল ইকতার আয়, ব্যয় ও উদ্বৃত্ত অর্থের দিকে নজর রাখা।

📝 ১৩৯. কোন সময়কালে তৃতীয় পর্বের নগরায়ন হয়েছিল?
✅ উত্তর: খ্রীষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকের সূচনায় মুসলিম আক্রমণের ফলে ভারতে পুনরায় নগরায়নের সূচনা হয়। ডঃ রামশরণ শর্মা ও ডঃ বি.এন.এস. যাদব এই পর্যায়কে তৃতীয় পর্বের নগরায়ন বলে উল্লেখ করেছেন।

📝 ১৪০. তৃতীয় নগরায়নের দুটি কারণ উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: (১) মুসলিম শাসকবর্গ প্রশাসনকে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করতেন, ফলে প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলো শহরে রূপান্তরিত হয়। (২) তুর্কি শাসক ও অভিজাতবর্গ উন্নতমানের জীবনযাত্রায় আগ্রহী ছিলেন এবং শহরে বসবাসকে পছন্দ করতেন।

📝 ১৪১. সুলতানী যুগে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে গড়ে ওঠা কয়েকটি নগরের উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে গড়ে ওঠা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নগর হল—দীপালপুর, হাসি, হিসার ফিরোজা নগর, সিরহিন্দ, ফতেবাদ।

📝 ১৪২. রাজস্থানের কয়েকটি দুর্গকেন্দ্রিক শহরের উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: রাজস্থানের উল্লেখযোগ্য দুর্গকেন্দ্রিক শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে—যোধপুর, নাগোর, জারে, পোখরান।

📝 ১৪৩. সুলতানী যুগে গড়ে ওঠা কয়েকটি তীর্থনগরীর নাম কর।
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে গড়ে ওঠা তীর্থ নগরীগুলো হল—আজমীর, বারাণসী, মথুরা।

📝 ১৪৪. সুলতানী যুগে গড়ে ওঠা আজমীর শহরটি কেন বিখ্যাত?
✅ উত্তর: আজমীর তীর্থ নগরী হিসেবে বিখ্যাত, কারণ এখানে সুফী সাধক শেখ মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা অবস্থিত। এটি আজও হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।

📝 ১৪৫. দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ-এর কাজ কী ছিল?
✅ উত্তর: দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ-এর কাজ ছিল বাণিজ্য সামগ্রীর ওজন ও দাম পরীক্ষা করা এবং আইনভঙ্গকারীকে শাস্তি প্রদান করা।

📝 ১৪৬. সুলতানী যুগে আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কীভাবে পরিচালিত হত?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে গ্রামীণ স্তরে বানিয়ান শ্রেণী গঞ্জ, কাটরা, মান্ডি প্রভৃতির মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পরিচালিত হত।

📝 ১৪৭. দস্তুরী প্রথা কী ছিল?
✅ উত্তর: দস্তুরী হল দালালী প্রথা। বোহরা বা মুসলিম ব্যবসায়ীরা বিদেশী ব্যবসায়ীর সঙ্গে ব্যবসা করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় কাছ থেকে দস্তুরীর অর্থ আদায় করত।

📝 ১৪৮. কারাভনি ও বানজার কাদের বলা হত?
✅ উত্তর: বড় পাইকারি ব্যবসায়ী বা কৃষিক্ষেত্রে অবস্থানরত ভ্রাম্যমাণ বণিককে কারাভনি বলা হত। ‘বানজারা’ হল যারা ঘুরে ঘুরে গ্রাম বা শহরে পণ্য ফেরি করত।

📝 ১৪৯. 'জাঙ্ক' ও 'ধাও' কী?
✅ উত্তর: জাঙ্ক ও ধাও ছিল দু’ধরনের জাহাজ। চীনের বণিকরা জাঙ্ক ব্যবহার করত, পশ্চিমী এশিয়ার বণিকরা ধাও। এই জাহাজের মাধ্যমে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমুদ্র বাণিজ্য সম্পন্ন হত।

📝 ১৫০. 'জাহানপনাহ' শহরের পত্তন কে, কীভাবে করেন?
✅ উত্তর: মহম্মদ-বিন-তুঘলক দিল্লী, তুঘলকাবাদ ও সিরি নগরকে একত্রিত করে দীর্ঘ পাঁচিল দ্বারা ঘিরে শহরকে বৃহত্তর আকার দেন। এভাবে গড়ে ওঠে ‘জাহানপনাহ’ শহর।

📝 ১৫১. চতুর্দশ শতকে ভারতে সর্ববৃহৎ দুটি শহরের নাম কর। সমকালীন আরো চারটি প্রাদেশিক শহরের নাম কর।
✅ উত্তর: চতুর্দশ শতকে সর্ববৃহৎ শহর ছিল দিল্লী ও দৌলতাবাদ। উল্লেখযোগ্য প্রাদেশিক শহর ছিল মুলতান, গৌড়, গুলবর্গা ও যোধপুর।

📝 ১৫২. ‘দেওয়ান-ই-আর্জ’ সম্পর্কে কী জানা যায়?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে সামরিক বিভাগের নাম ছিল ‘দেওয়ান-ই-আর্জ’। এই বিভাগের প্রধানকে বলা হত ‘আরিজ-ই-মামালিক’। সুলতানী সেনাবাহিনী সংগঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব ছিল এই বিভাগের উপর।

📝 ১৫৩. ‘আরিজ-ই-মামালিক’ কে ছিলেন?
✅ উত্তর: ‘দেওয়ান-ই-আর্জ’-এর প্রধানকে বলা হত ‘আরিজ-ই-মামালিক’। তিনি সেনা সংগ্রহ, সেনাদের বেতন নির্ধারণ ও প্রদান, যুদ্ধসরঞ্জাম সংগ্রহ, সেনাদের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা বজায় রাখা এবং দুর্নীতি দমন প্রভৃতির দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

📝 ১৫৪. ‘দেওয়ান-ই-রিসালত’ সম্পর্কে কী জানা যায়?
✅ উত্তর: ‘দেওয়ান-ই-রিসালত’ ধর্মীয় বিষয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং যোগ্য পণ্ডিত ও সাধু-সন্তদের বৃত্তিদান প্রভৃতি বিষয় তদারকি করত। এই বিভাগের প্রধান ছিলেন ‘সদর-উস্-সুদূর’।

📝 ১৫৫. সুলতানী যুগে ‘দেওয়ান-ই-ইনসা’-র কাজ কী ছিল?
✅ উত্তর: সরকারী চিঠিপত্র, দলিল দস্তাবেজ ও যোগাযোগের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর ছিল ‘দেওয়ান-ই-ইনসা’। সুলতানের অতি বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ এই পদে নিযুক্ত হতে পারতেন না। তাঁর অধীনে বহু করণিক নিযুক্ত ছিল। এই দপ্তরের মাধ্যমে অন্যান্য রাষ্ট্র, প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও বিভিন্ন সরকারী কর্মচারীদের সঙ্গে সুলতানের গোপন ও সাধারণ চিঠিপত্র আদান-প্রদান চলত।

📝 ১৫৬. সুলতানী আমলে গুপ্তচর ব্যবস্থা কেমন ছিল?
✅ উত্তর: সুলতানী আমলে সাম্রাজ্যের কোথায় কী ঘটছে তা জানার জন্য সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ‘বারিদ’ বা গুপ্তচর নিয়োগ করা হত। এই দপ্তরের নাম ছিল ‘বারিদ-ই-মামালিক’ এবং দপ্তরের প্রধানকে বলা হত ‘বারিদ-ই-খাস’।

📝 ১৫৭. ‘ওয়াকিল্-ই-দার’ কে ছিলেন?
✅ উত্তর: সুলতানের ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং রাজপ্রাসাদ ও রাজপরিবারের বিভিন্ন বিষয় তদারক করার জন্য একটি দপ্তর ছিল। এই দপ্তরের অধীনে বহু কর্মচারী নিযুক্ত থাকত, এবং এই দপ্তরের প্রধান ছিলেন ‘ওয়াকিল্-ই-দার’।

📝 ১৫৮. ‘কাজি-উল-কাজাৎ’ কে ছিলেন?
✅ উত্তর: ‘কাজি-উল-কাজাৎ’ ছিলেন প্রধান বিচারক। প্রধান কাজির পরামর্শ অনুসারে সুলতান অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ করতেন। প্রধান কাজি দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচার করতেন এবং বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব তাঁর হাতে ন্যস্ত ছিল।

📝 ১৫৯. সুলতানী আমলে পুলিশি ব্যবস্থা কেমন ছিল?
✅ উত্তর: শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল ‘কোতোয়াল’ নামক কর্মচারীর হাতে। তাঁকে সাহায্য করত ‘মুহতাসিব’ নামের কর্মচারী। ‘কোতোয়াল’-এর অধীনে পুলিশ বাহিনী ছিল, যারা অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা ও বাজার তদারকির কাজ করত। গ্রামাঞ্চলে ‘গ্রামসভা’ ও ‘গ্রাম্য চৌকিদার’ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করত।

📝 ১৬০. ‘ওয়ালি’ কাদের বলা হত?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে নববিজিত রাজ্যগুলিকে বৃহৎ বৃহৎ প্রদেশে পরিণত করা হয়। যেমন—গুজরাট, বাংলা, জৌনপুর ও খান্দেশ। এই প্রদেশগুলিতে নিযুক্ত সামরিক শাসনকর্তাদের বলা হত ‘ওয়ালি’। তাঁরা প্রশাসন, কর আদায় ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন।

📝 ১৬১. প্রাক্-সুলতানী ও সুলতানী শাসনব্যবস্থার দুটি সাদৃশ্য আলোচনা কর।
✅ উত্তর: প্রাক্-সুলতানী ও সুলতানী যুগের শাসনব্যবস্থার দুটি সাদৃশ্য হল—
১. উভয়ক্ষেত্রেই শাসক তথা সুলতান বা রাজা ছিলেন শাসন, বিচার ও সেনাবাহিনীর প্রধান।
২. শাসনকার্য পরিচালনায় উভয় যুগেই শাসককে সাহায্য করার জন্য একদল মন্ত্রী বা কর্মকর্তা নিযুক্ত ছিল।

📝 ১৬২. নামদেব কে ছিলেন?
✅ উত্তর: নামদেব ছিলেন একজন মারাঠী সন্ত ও ভক্ত কবি। তিনি বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন এবং ভগবানের একক অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন। তাঁর মতে, হিন্দু ও মুসলমান এক—উভয় ধর্মই ঈশ্বরলাভের দুটি পথমাত্র।

📝 ১৬৩. বল্লভাচার্য কীজন্য বিখ্যাত?
✅ উত্তর: বল্লভাচার্য ছিলেন ভক্তিবাদের একজন প্রধান প্রচারক। তিনি ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং কৃষ্ণভক্ত ছিলেন। তাঁর রচিত প্রধান গ্রন্থ ‘ভগবদ্গীতা’ ও ‘ব্রহ্মসূত্র’-এর টীকা এবং ‘শুদ্ধ অদ্বৈত’ দর্শন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

📝 ১৬৪. তুর্ক-আফগান যুগের যে কোন দু’জন গুরুত্বপূর্ণ সুফী সন্ন্যাসীর নাম কর।
✅ উত্তর: তুর্ক-আফগান যুগের দুইজন বিশিষ্ট সুফী সন্ন্যাসী হলেন—মইনুদ্দিন চিস্তি এবং নিজামউদ্দিন আউলিয়া। তাঁরা ইসলামের মানবপ্রেম ও সাম্যবাদের শিক্ষা প্রচার করেছিলেন।

📝 ১৬৫. ভারতে মুসলিমদের আগমনের পূর্বে কোন কোন বিদেশী জাতি ভারতে আসে?
✅ উত্তর: মুসলিমদের আগমনের পূর্বে ভারতে পারসিক, শক, হূণ, কুষাণ, পহ্লব ও গুর্জর প্রভৃতি বিদেশী জাতি আসে। তারা ভারতের সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করে।

📝 ১৬৬. সুলতানী যুগে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পথকে সুগম করেন এমন কয়েকজন নরপতির নাম কর।
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সুগম করেছিলেন কাশ্মীরের সুলতান জয়নুল আবেদিন, বিজাপুরের সুলতান ইউসুফ আদিল শাহ এবং বাংলার নবাব হোসেন শাহ। তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ও সহিষ্ণুতা প্রচার করেছিলেন।

📝 ১৬৭. ‘আশরফ’ ও ‘আতরফ’ কাদের বলা হত?
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে মুসলিম সমাজে উচ্চবংশীয় ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বলা হত ‘আশরফ’। অপরদিকে, নিম্নবংশীয় বা সাধারণ মুসলমানদের বলা হত ‘আতরফ’।

📝 ১৬৮. সুলতানী যুগে পালিত কয়েকটি মুসলিম উৎসবের উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে পালিত প্রধান মুসলিম উৎসব ছিল—নওরোজ, শব-ই-বরাত, মহরম, ঈদ ও উরস বা সন্তদের বার্ষিক উৎসব। এই উৎসবগুলো সামাজিক ঐক্য ও ধর্মীয় উদ্দীপনা সৃষ্টি করত।

📝 ১৬৯. সুলতানী যুগে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খেলাধুলার নাম কর।
✅ উত্তর: সুলতানী যুগে জনপ্রিয় খেলাধুলা ছিল মল্লযুদ্ধ, অশ্বচালনা, ধনুর্বিদ্যা ও পোলো (চৌগান)। এই খেলাগুলো সৈন্যদের শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হত।

📝 ১৭০. বাশরা ও বেশরা বলতে কী বোঝ?
✅ উত্তর: সুফীবাদের দুটি প্রধান সম্প্রদায় হল ‘বাশরা’ ও ‘বেশরা’। যারা কোরান ও শরিয়তের নির্দেশ কঠোরভাবে মেনে চলতেন, তাঁদের বলা হত বাশরা। অপরদিকে, যারা শরিয়তের নিয়ম মানতেন না এবং স্বাধীন আধ্যাত্মিক চর্চায় বিশ্বাসী ছিলেন, তাঁদের বলা হত বেশরা।

📝 ১৭১. 'আলবার' ও 'নায়নার' কাদের বলা হত?
✅ উত্তর: তামিল ভক্তিবাদী আন্দোলনের মধ্যে যারা বৈষ্ণব ধর্মের অনুগামী ছিলেন, তাঁদের বলা হত ‘আলবার’। আর যারা শৈব ধর্মের অনুগামী ছিলেন, তাঁদের বলা হত ‘নায়নার’। উভয়েই ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরলাভের প্রচার করেছিলেন।

📝 ১৭২. চিত্তি মতবাদ কোন অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল?
✅ উত্তর: চিস্তি সুফী মতবাদ জনপ্রিয় ছিল দিল্লী, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও বাংলাদেশে। এই মতবাদের সাধকরা প্রেম, সহিষ্ণুতা ও মানবপ্রেমের মাধ্যমে ঈশ্বরলাভের পথ প্রচার করেছিলেন।

📝 ১৭৩. সুফীবাদের প্রধান ফল কী ছিল? কোন সুফী সাধক ‘মহবুব-ই-ইলাহী’ নামে পরিচিত ছিলেন?
✅ উত্তর: সুফীবাদের ফলে ইসলামের গোঁড়ামী হ্রাস পেয়েছিল এবং এক নব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল, যেখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মানবপ্রেম গুরুত্ব পেয়েছিল। চিস্তি সাধক শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়া ‘মহবুব-ই-ইলাহী’ অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র’ নামে পরিচিত ছিলেন।

📝 ১৭৪. ফিরদৌসিয়া সুফীবাদ কোন অঞ্চলে বিশেষ আধিপত্য বিস্তার করেছিল? কে ভারতে প্রথম সুহরাওয়ার্দী সুফীবাদের প্রচারক ছিলেন?
✅ উত্তর: ফিরদৌসিয়া সুফীবাদ বিশেষভাবে বিহার অঞ্চলে প্রসার লাভ করেছিল। আর ভারতের প্রথম সুহরাওয়ার্দী সুফীবাদের প্রচারক ছিলেন শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

📝 ১৭৫. ভক্তিবাদের মূল কথা কী?
✅ উত্তর: ভক্তিবাদের মূল কথা হল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ভক্তি। এর মতে, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, তাঁকে কেবল প্রেম ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে লাভ করা যায়। ভক্তিবাদে জাতিভেদ, বর্ণবৈষম্য ও ধর্মীয় গোঁড়ামির কোন স্থান নেই।

📝 ১৭৬. কয়েকজন ভক্তিবাদী প্রবক্তার নাম লেখ।
✅ উত্তর: ভক্তিবাদের প্রবক্তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সাধক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নানক, কবীর, শ্রীচৈতন্য ও রামানন্দ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা প্রেম, সমতা ও মানবতার বার্তা প্রচার করেছিলেন।

📝 ১৭৭. দ্বাদশ শতকে দক্ষিণ ভারতে কোন আন্দোলন জনপ্রিয়তা অর্জন করে? এই আন্দোলনের পুরোধা কারা?
✅ উত্তর: দ্বাদশ শতকে দক্ষিণ ভারতে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ‘লিঙ্গায়েত আন্দোলন’। এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন শ্রী বাসব ও তাঁর ভাগিনেয় চন্নবাসব। তাঁরা সমাজের বর্ণভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

📝 ১৭৮. 'লিঙ্গায়েত' কারা?
✅ উত্তর: ‘লিঙ্গায়েত’রা ছিলেন শিবের উপাসক। তাঁরা শিবলিঙ্গকে শিবের প্রতীক হিসেবে পূজা করতেন। এই সম্প্রদায় জাতিভেদ, উপবাস, তীর্থযাত্রা ও পশুবলি প্রথার বিরোধিতা করেছিল। তাঁদের মতে, ভক্তিই ঈশ্বরলাভের একমাত্র পথ।

📝 ১৭৯. শঙ্করাচার্য কে ছিলেন?
✅ উত্তর: গুপ্তোত্তর যুগের এক প্রখ্যাত দার্শনিক ও ধর্মসংস্কারক ছিলেন শঙ্করাচার্য। তিনি অদ্বৈতবাদ প্রচার করেন। তাঁর মতে, ঈশ্বর ও জগৎ মূলত অভিন্ন—“ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা”। মানুষের অজ্ঞানতাই জগতের ভিন্নতার কারণ। জ্ঞানের মাধ্যমে জীব তার ব্রহ্মস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে।

📝 ১৮০. রামানুজ কে ছিলেন?
✅ উত্তর: একাদশ শতকের বিখ্যাত বৈষ্ণব সাধক ছিলেন রামানুজ। তিনি বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ প্রচার করেন। তাঁর মতে, চিৎ (জীব) ও অচিৎ (জগৎ) উভয়ই ব্রহ্মের প্রকাশ। ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়, তবে তাঁর মধ্যে নানাবিধ গুণ ও প্রকাশ বিদ্যমান।

📝 ১৮১. নাথমুনি কে ছিলেন?
✅ উত্তর: খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকের দক্ষিণ ভারতের বৈষ্ণব সাধক ছিলেন নাথমুনি। তিনি আলবারদের ভক্তিগীতিকে ভিত্তি করে উপনিষদীয় তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ প্রচার করেন। তিনি শ্রীবৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

📝 ১৮২. নিম্বার্ক কে ছিলেন?
✅ উত্তর: দ্বাদশ শতকের অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু ব্রাহ্মণ নিম্বার্ক ‘সনকাদি সম্প্রদায়’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দ্বৈতাদ্বৈতবাদ প্রচার করেন, যার মতে ঈশ্বর, জীব ও জড় জগৎ একই সঙ্গে অভিন্নও ভিন্নও।

📝 ১৮৩. নিম্বার্কের লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখ।
✅ উত্তর: নিম্বার্কের রচিত দুটি প্রধান গ্রন্থ হল—
১. বেদান্ত পারিজাত
২. সিদ্ধান্তরত্ন।
এই গ্রন্থগুলিতে তাঁর দর্শন ও ভক্তিতত্ত্বের বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে।

📝 ১৮৪. শৈব সিদ্ধান্ত মতবাদ কী?
✅ উত্তর: খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে দক্ষিণ ভারতে শৈব ধর্মের প্রসার ঘটে। নায়নার সাধকদের রচনার ভিত্তিতে গঠিত এই ধর্মতত্ত্বকে বলা হয় ‘শৈব সিদ্ধান্ত মতবাদ’। এর মূল কথা—শিবই সর্বোচ্চ সত্তা, যিনি জীবের মুক্তি ও জগতের সৃষ্টির একমাত্র আধার।

📝 185. জ্ঞানেশ্বর কে ছিলেন?
✅ উত্তর : জ্ঞানেশ্বর হলেন দক্ষিণ ভারতের একজন ভক্তিধর্ম প্রচারক। তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল ‘জ্ঞানেশ্বরী’ ও ‘ভাবার্থদীপক’।

📝 186. একনাথ কে ছিলেন?
✅ উত্তর : মহারাষ্ট্রের অতীন্দ্রিয়বাদী ভক্তিসাধক ছিলেন একনাথ। রামায়ণের উপর ভিত্তি করে তিনি ভক্তিধর্ম প্রচার করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ‘ভাবার্থ রামায়ণ’।

📝 187. দাদু কে ছিলেন ?
✅ উত্তর : দাদু দয়াল ছিলেন মধ্যযুগের একজন ভক্তিবাদী সাধক। তিনি কবীরের অনুগামী ছিলেন। তাঁর মতবাদ ‘বাণী’ নামে একটি গ্রন্থে সংকলিত হয়।

📝 188. তুলসীদাস কে ছিলেন?
✅ উত্তর : তুলসীদাস রচিত ‘রামচরিত মানস’ প্রেম ও ভক্তির এক অনবদ্য সংকলন। তুলসীদাস রামকে ঈশ্বরের অবতার রূপে দেখেছিলেন।

📝 189. সুরদাস কে ছিলেন?
✅ উত্তর : আগ্রা নিবাসী অন্ধ কবি সুরদাস সঙ্গীত ও কাব্যের দ্বারা কৃষ্ণভক্তির মাধ্যমে ভক্তিবাদের সূচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থটি হল ‘সুরসাগর’।

📝 190. মীরাবাঈ কে ছিলেন?
✅ উত্তর : মীরাবাঈ ছিলেন রাজপুত রাজকুমারী। তিনি গোপাল বা কৃষ্ণের সাধনায় জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁর রচিত সঙ্গীত ‘মীরার ভজন’ নামে খ্যাত।

📝 191. ভক্তিবাদের দুটি ফলাফল লেখ।
✅ উত্তর : ভক্তিবাদের দুটি ফলাফল হল –
১. ভক্তিবাদী সাধকরা আন্তরিকভাবে ভক্তির বাণী প্রচার করলেও তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে সেই ত্যাগ ও উদারতা ছিল না। বিভিন্ন সাধকের অনুগামীরা পৃথক গোষ্ঠী তৈরি করেন, ফলে সামাজিক বিভেদ বৃদ্ধি পায়।
২. খুব অল্পসংখ্যক মানুষই আন্তরিকভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।

📝 192. ভক্তি আন্দোলনের যে কোন দুটি প্রভাব আলোচনা কর।
✅ উত্তর : ভক্তি আন্দোলনের দুটি প্রভাব হল –
১. ধর্মাচার্যরা হিন্দুধর্মে নানা সংস্কার প্রবর্তন করে ইসলাম ধর্মের অগ্রগতি রোধে সাহায্য করেন।
২. ভক্তিবাদের মাধ্যমে সমাজে জাতিভেদ ও উচ্চ-নীচ বৈষম্য বহুলাংশে হ্রাস পায় এবং বর্ণাশ্রমের কঠোরতা কিছুটা শিথিল হয়।

📝 193. বিজয়নগরের শাসক কৃষ্ণদেব রায়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কীর্তি আলোচনা কর।
✅ উত্তর : তুলুভ বংশীয় শাসক কৃষ্ণদেব রায় কৃষ্ণস্বামী মন্দির, ভিটলস্বামী মন্দির ও হাজারার রামস্বামী মন্দির নির্মাণ করান। তিনি নেগল্পপুর নগর প্রতিষ্ঠা করেন।

📝 194. বিজয়নগর রাজ্য কোথায় অবস্থিত ছিল? এর রাজধানী কোথায় ছিল?
✅ উত্তর : বিজয়নগর রাজ্য তুঙ্গভদ্রা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল বিজয়নগর।

📝 195. হরিহর ও বুক্কা প্রতিষ্ঠিত রাজবংশের নাম সঙ্গম বংশ কেন? প্রথম বুক্কা কত সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন?
✅ উত্তর : হরিহর ও বুক্কার পিতা সঙ্গমের নামানুসারে এই বংশের নাম হয় সঙ্গম বংশ। ১৩৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম হরিহরের মৃত্যুর পর প্রথম বুক্কা রাজত্ব করেন ১৩৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

📝 196. দ্বিতীয় হরিহর কে? তিনি কী কী উপাধি গ্রহণ করেন?
✅ উত্তর : প্রথম বুক্কার পুত্র ছিলেন দ্বিতীয় হরিহর। তিনি ‘মহারাজাধিরাজ’, ‘রাজা পরমেশ্বর’ প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেন।

📝 197. সালুভ এবং তুলুভ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
✅ উত্তর : সালুভ বংশের প্রতিষ্ঠাতা নরসিংহ সালুভ, এবং তুলুভ বংশের প্রতিষ্ঠাতা বীর নরসিংহ।

📝 198. বিজয়নগর রাজ্যের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ যুদ্ধক্ষেত্রের নাম কী? তখন বিজয়নগরের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
✅ উত্তর : বিজয়নগর রাজ্যের বিরুদ্ধে মুসলিম বিজাপুর, আহম্মদনগর, গোলকুন্ডা ও বিদর মিলিতভাবে তালিকোটায় (১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ) যুদ্ধ করে। তখন রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাম রায়।

📝 199. বিজয়নগর সাম্রাজ্যের গুরুত্ব কী?
✅ উত্তর : প্রায় তিনশ বছর ধরে বিজয়নগর সাম্রাজ্য মুসলিম আক্রমণ প্রতিহত করে হিন্দু সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সুরক্ষা দেয়। এই রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ভারতে শিল্প, স্থাপত্য ও বাণিজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে।

📝 200. সুলতানী আমলে বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা কে ছিলেন? তাঁর রাজধানী কোথায় ছিল?
✅ উত্তর : সুলতানী আমলে বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা ছিলেন সামউদ্দিন ইলিয়াস শাহ (১৩৪২–১৩৫৭ খ্রি.)। তাঁর রাজধানী ছিল পান্ডুয়া।

📝 201. বাংলার কোন সুলতান চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন?
✅ উত্তর : বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ (১৩৯০–১৪১১ খ্রি.) চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৪০৫–১৪০৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি তিনবার দূত পাঠান, এবং চীনের দূত মা-হুয়ান তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে বাংলার সমকালীন অবস্থা বর্ণনা করেন।

📝 202. বাংলায় হুসেনশাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও শ্রেষ্ঠ সুলতান কে?
✅ উত্তর : বাংলায় হুসেনশাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও শ্রেষ্ঠ সুলতান ছিলেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহ।

📝 203. হুসেন শাহের সাহিত্যানুরাগের কী পরিচয় পাওয়া যায়?
✅ উত্তর : হুসেন শাহ ছিলেন গভীর সাহিত্যানুরাগী শাসক। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বহু সাহিত্যকর্ম রচিত হয়, যেমন পণ্ডিত মালাধর বসুর ‘শ্রীমদ্ভাগবত’ ও ‘মহাভারত’ অনুবাদ। তাঁর সচিব রূপ গোস্বামী ‘বিদগ্ধ মাধব’ ও ‘ললিত মাধব’ রচনা করেন।

📝 204. হুসেন শাহের ধর্মনীতি কেমন ছিল?
✅ উত্তর : হুসেন শাহ ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ও সহিষ্ণু শাসক। হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তাঁর আমলে ‘সত্যপীরের সিন্নি’ পূজা প্রচলিত হয়। তিনি যোগ্য হিন্দুদের উচ্চ পদে নিয়োগ করতেন এবং উভয় ধর্মকেই সমান মর্যাদা দিতেন।

📝 205. ‘আদিনা মসজিদ’ কে নির্মাণ করেন? এর বিশেষত্ব কী?
✅ উত্তর : ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতান সিকন্দর শাহের আমলে ‘আদিনা মসজিদ’ নির্মিত হয়। এটি সে সময়ের বৃহত্তম মসজিদ, যার স্থাপত্যে হিন্দু ও ইসলামি শৈলীর সংমিশ্রণ দেখা যায়।

📝 206. আলাউদ্দিন হুসেন শাহের রাজ্যসীমা বর্ণনা কর।
✅ উত্তর : আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এক বিশাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সমগ্র বাংলাদেশ ও বিহারের বিস্তৃত অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া সাময়িকভাবে কামরূপ, কামতাপুর, উড়িষ্যা ও ত্রিপুরার কিছু অঞ্চলও তাঁর রাজ্যসীমায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

📝 207. রূপ ও সনাতন কে ছিলেন?
✅ উত্তর : রূপ ও সনাতন গোস্বামী—দুই ভাই ছিলেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনব্যবস্থার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেন। রূপ ছিলেন সাকর মল্লিক বা রাজস্বসচিব এবং সনাতন ছিলেন দবীর-ই-খাস বা সুলতানের ব্যক্তিগত কর্মাধ্যক্ষ।

📝 208. বলবনের সময় কে বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন?
✅ উত্তর : তুম্রিল খান ১২৭৯ খ্রিঃ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি সুলতান মুখিসউদ্দিন উপাধি গ্রহণ করে নিজ নামে মুদ্রা প্রবর্তন করেন। ১২৮৫ খ্রিঃ নাগাদ বলবন তিনবার অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন।

📝 209. মা হুয়ান কে ছিলেন?
✅ উত্তর : মা হুয়ান ছিলেন চীনা দূত, যিনি ইলিয়াসশাহী বংশের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের আমলে ১৪০৫ খ্রিঃ বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর লিখিত গ্রন্থ থেকে তৎকালীন বাংলাদেশের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।

📝 210. ইলিয়াসশাহী বংশের শেষ শাসক কে ছিলেন? এরপর কোন শাসন শুরু হয়?
✅ উত্তর : ইলিয়াসশাহী বংশের শেষ শাসক ছিলেন জালালুদ্দিন ফতেশাহ (১৪৮১–৮৭ খ্রিঃ)। ১৪৮৭ খ্রিঃ থেকে বংশ পতনের পর বাংলায় ‘অন্ধকার যুগ’ শুরু হয়। এই সময় হাবসি বা আবাসিনিয় ক্রীতদাসদেব শাসনভার গ্রহণ করেন, যা ১৪৯৩ খ্রিঃ পর্যন্ত চলেছিল। পরবর্তীতে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ শেষ হাবসি শাসক মুজাফ্ফারকে প্রতিস্থাপন করেন।

📝 211. ইলিয়াস শাহী আমলে নির্মিত অন্যান্য স্থাপত্য কর্মগুলি কী কী ছিল?
✅ উত্তর : ইলিয়াস শাহী আমলে নির্মিত স্থাপত্যকর্মগুলি হল—সিকান্দার শাহের কতোয়ালি দরওয়াজা, গৌড়ের লোটন মসজিদ, জামি মসজিদ, চামকাটি মসজিদ, তাঁতিপাড়া মসজিদ, এবং হুগলীর বাইশ দরওয়াজা প্রভৃতি।

📝 212. ইলিয়াস শাহী আমলে রচিত কতকগুলি সাহিত্য কীর্তির নাম কর।
✅ উত্তর : ইলিয়াস শাহী আমলে রচিত সাহিত্যকীর্তি—(১) কৃত্তিবাস ওঝা রামায়ণের বাংলা অনুবাদ, (২) বৃহস্পতি মিশ্রের অমরকোষ টীকা ‘পদচন্দ্রিকা’, (৩) মালাধর বসুর 'শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্য', এবং (৪) ইব্রাহিম ফারুকির 'শরফনামা'।

📝 213. নির্মাতা হিসেবে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের কৃতিত্ব কী ছিল?
✅ উত্তর : আলাউদ্দিন হোসেন শাহের উদ্যোগে নির্মিত হয় গৌড় নগরীর গুণমন্ত মসজিদ, দরমারাডি মসজিদ ও ছোটসোনা মসজিদ, প্রচুর প্রাসাদ, তোরণ, মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সরাইখানা, বাঁধ। এর ফলে গৌড় নগরী সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ হয়।

📝 214. নসরৎ শাহের স্থাপত্যকীর্তি উল্লেখ কর।
✅ উত্তর : নসরৎ শাহ-এর আমলে নির্মিত হয় কদম রসুল মসজিদ, বড়সোনা মসজিদ, এবং হোসেন শাহের সমাধির ওপর একলক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত পান্ডুয়ায় একখানি মসজিদ। এগুলো এযুগের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকীর্তি।

📝 215. হুসেন শাহী আমলে নির্মিত কতকগুলি সাহিত্য কীর্তির নাম কর।
✅ উত্তর : হুসেন শাহী আমলে রচিত সাহিত্যকীর্তি—(১) রূপ গোস্বামীর 'ললিত মাধব' ও 'বিদগ্ধ মাধব', (২) বিজয়গুপ্ত ও বিপ্রদাস পিপিলাই 'মনসামঙ্গল', (৩) কবীন্দ্র পরমেশ্বরের মহাভারতের বাংলা অনুবাদ, (৪) মালাধর বসুর 'শ্রীমদ্ভাগবত' বাংলায় অনুবাদ।

📝 216. 'সত্যপীর' কে কবে চালু করেন?
✅ উত্তর : বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পরধর্ম সহিষ্ণুতা ও উদারতার কারণে ‘সত্যপীর’ চালু করেন। তিনি হিন্দু-মুসলিম ধর্মের সমন্বয়ের জন্য ‘সত্যপীরের সিন্নি’ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে সংস্কৃত ‘সত্য’ এবং আরবি ‘পীর’ শব্দ সংমিশ্রণে পুজোর প্রচলন হয়।

<<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>> 

👉For pdf whatsapp-8250978714