✍️রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৫):
📝 1. যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রক্রিয়াগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
শিলার ভৌত ভাঙন: যান্ত্রিক আবহবিকারে শিলা ছোট কণায় ভেঙে যায় কিন্তু রাসায়নিক গঠন অপরিবর্তিত থাকে।
তাপীয় প্রসারণ ও সংকোচন: দিন-রাতের তাপমাত্রা পরিবর্তনে শিলার উপরিভাগ প্রসারিত ও সংকুচিত হয়ে ফাটল সৃষ্টি হয়।
তুষার ক্ষয়: শিলার ফাটলে জমা পানি বরফ হয়ে আয়তন বৃদ্ধি করলে ফাটল প্রশস্ত হয় (Frost Weathering)।
লবণ ক্ষয়: ফাটলে লবণাক্ত জল শুকিয়ে স্ফটিক তৈরি হলে চাপ সৃষ্টি হয়ে শিলা ভেঙে যায়।
উদ্ভিদের শিকড়ের প্রসারণ: শিকড় ফাটলে ঢুকে বৃদ্ধি পেলে শিলা ফাটে।
জীবজন্তুর ক্রিয়া: প্রাণী বা মানুষের খোঁড়াখুঁড়ি শিলাকে দুর্বল করে।
ঘর্ষণ: বাতাস, জল বা বরফের সঙ্গে শিলাখণ্ড ঘষা লেগে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
এই প্রক্রিয়াগুলি ভূ-পৃষ্ঠের রূপ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
📝 2. বিপর্যয় রোধে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ: রাডার, স্যাটেলাইট দ্বারা পূর্বাভাস; সাইরেন, রেডিও, টিভি দ্বারা সতর্কবার্তা।
পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মহড়া পরিচালনা।
পরিকাঠামো উন্নয়ন: দুর্যোগ সহনশীল ভবন, বাঁধ, রাস্তা নির্মাণ; উপযোগী স্থাপত্য নকশা ব্যবহার।
সচেতনতা ও শিক্ষা: বিদ্যালয় ও প্রচারমাধ্যমে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও প্রচার।
জরুরি পরিষেবা: দ্রুত উদ্ধার, ত্রাণ, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবস্থা।
পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধার: ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
পরিবেশ সুরক্ষা: বনায়ন, নদী ও জলাশয়ের রক্ষণাবেক্ষণ।
এই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
📝 3. পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।
✅ উত্তর:
বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত: জুনের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে এসে বিপুল আর্দ্রতা বহন করে, ফলে সমভূমি, পার্বত্য এলাকা ও উপকূল জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় 175–300 সেমি।
তাপমাত্রা হ্রাস: বর্ষাকালে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঘন বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা ২–৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়, গ্রীষ্মের তীব্রতা প্রশমিত হয়।
কৃষিজ উৎপাদনে প্রভাব: মৌসুমি বৃষ্টিই ধান, পাট, চা, আখ প্রভৃতি প্রধান ফসলের উৎপাদনের প্রধান উৎস; বৃষ্টির সময়মতো আগমন ও প্রস্থান ফসলের সাফল্য নির্ধারণ করে।
বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি: অতিবৃষ্টিতে নদীগুলির জলস্তর দ্রুত বেড়ে বন্যা, নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, যা চাষাবাদ ও বসতভিটার ক্ষতি করে।
শীতকালীন শুষ্কতা: অক্টোবরের মাঝামাঝি মৌসুমি বায়ুর প্রস্থান ঘটে; ফলে আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুষ্ক, শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: মৌসুমি বৃষ্টির অনিয়মিততা কৃষি, চা শিল্প, মৎস্যচাষ ও পরিবহন ব্যবস্থায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।
📝 4. পশ্চিমবঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও নদনদী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
✅ উত্তর:
ভূপ্রকৃতি:
-
পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলটি দার্জিলিং হিমালয়ের অংশ।
-
এখানে পরস্পর সংলগ্ন উঁচু-নিচু পাহাড়, খাড়া ঢাল, গভীর গিরিখাত এবং প্রস্তরময় ভূমি রয়েছে।
-
ভূপ্রকৃতি বন্ধুর ও রুক্ষ প্রকৃতির।
নদনদী:
-
এই অঞ্চলের প্রধান নদীগুলি হল তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, মহানন্দা ইত্যাদি।
-
নদীগুলি বরফ গলা জলে পুষ্ট, তাই সারা বছর জল থাকে।
-
নদীগুলি পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়।
-
নদীর খাত বেশ চওড়া এবং অনেক ক্ষেত্রে বিনুনি (braided) আকৃতির হয়।
-
তিস্তা নদীর ডানদিকের অংশ তরাই এবং বাঁদিকের অংশ ডুয়ার্স নামে পরিচিত।
📝 5. মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
প্রাকৃতিক কারণ:
জল: বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির কণা আলগা হয়ে যায় এবং জলের স্রোতে ভেসে যায়। নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ এবং বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতেও মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
বায়ু: শক্তিশালী বাতাসের কারণে মাটির উপরের স্তর উড়ে যায়, বিশেষ করে শুষ্ক ও বালুকাময় অঞ্চলে।
ভূমিধস: পাহাড়ী অঞ্চলে ভূমিধসের কারণে মাটি স্থানচ্যুত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
মানবসৃষ্ট কারণ:
বৃক্ষচ্ছেদন: গাছপালা মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে, তাই বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে মাটি আলগা হয়ে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
কৃষিকাজ: জমিতে অতিরিক্ত চাষাবাদ, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং শস্য আবর্তনের অভাবে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
নির্মাণকার্য: রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও অন্যান্য নির্মাণ কাজের জন্য মাটি খনন করা হলে ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
শিল্পায়ন: কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত পদার্থ মাটিতে মিশে উর্বরতা নষ্ট করে এবং ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে ঘাস ও উদ্ভিদের শিকড় আলগা হয়ে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
ফলাফল: মৃত্তিকা ক্ষয় পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।
📝 6. মানবজীবনে পর্বতের প্রভাব লেখো।
✅ উত্তর:
জলবায়ু:
-
পর্বতমালা বাতাসের গতিপথ পরিবর্তন করে এবং বৃষ্টিপাত প্রভাবিত করে।
-
উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পায়, যা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য আলাদা আবাসস্থল তৈরি করে।
-
শীতল বাতাস থেকে নিম্নভূমি রক্ষা পায়।
বাস্তুতন্ত্র:
-
বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখা যায়।
-
কিছু প্রজাতি শুধুমাত্র পর্বতমালায়ই সীমাবদ্ধ থাকে।
-
পর্বতমালা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনীতি:
-
পর্যটন, খনিজ সম্পদ আহরণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৃষি কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
-
পর্বতমালা থেকে আহরিত সম্পদ স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
সংস্কৃতি:
-
অনেক সংস্কৃতি ও লোককাহিনীতে পর্বতমালার উল্লেখ রয়েছে।
-
কিছু সংস্কৃতিতে এটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত।
-
শিল্পী ও লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
📝 7. প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
✅ উত্তর:
| বৈশিষ্ট্য | প্রচলিত শক্তি | অপ্রচলিত শক্তি |
|---|---|---|
| উৎস | কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস। | সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, জৈবপদার্থ শক্তি। |
| পরিবেশ প্রভাব | দূষণ সৃষ্টি করে। | পরিবেশবান্ধব, দূষণ কমায়। |
| প্রযুক্তি ও ব্যবহার | বিদ্যুৎকেন্দ্রে সহজে ব্যবহারযোগ্য। | বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন, প্রাথমিক খরচ বেশি। |
| সীমাবদ্ধতা | সীমিত উৎস; অতিরিক্ত ব্যবহার হলে ঘাটতি দেখা দেয়। | উৎস সীমাহীন; সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে চিরস্থায়ী শক্তি সরবরাহ সম্ভব। |
| খরচ | প্রাথমিকভাবে কম, দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ক্ষতি। | প্রাথমিক খরচ বেশি, দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী। |
📝 8. হুগলি নদীর উভয় তীরে পাটশিল্পের একদেশীভবনের কারণগুলি লেখ।
✅ উত্তর:
উপযুক্ত জলবায়ু: হুগলি অঞ্চলে আর্দ্র, উষ্ণ জলবায়ু পাটের চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উপযোগী।
উপযুক্ত মাটি: উপত্যকা ও নদীতীরের উর্বর মাটি পাট চাষের জন্য আদর্শ।
জলপথ সুবিধা: হুগলি নদীর ধারে নদীপরিবহন সহজ হওয়ায় কাঁচামাল আনা এবং পণ্য বহন সহজ।
শ্রমিক প্রাচুর্য: স্থানীয় ও অভ্যন্তরীণ শ্রমিক সহজলভ্য হওয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন সুবিধাজনক।
বাজার ও বাণিজ্য: কলকাতা ও আশেপাশের বাজারের কাছাকাছি হওয়ায় পাটজাত পণ্য সরাসরি বিক্রি বা রপ্তানি করা যায়।
ঐতিহ্য ও দক্ষতা: প্রাচীনকাল থেকে পাটশিল্পের অভিজ্ঞতা ও কারিগরি দক্ষতা স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিদ্যমান।
এই কারণে হুগলি নদীর উভয় তীরে পাটশিল্পের একদেশীভবন বা কেন্দ্রীকরণ লক্ষ্য করা যায়।
📝 9. পূর্ব ভারতে অধিক সংখ্যায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে কেন?
✅ উত্তর:
কয়লার প্রাচুর্য: পূর্ব ভারত (ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা) কয়লার বড় খনিজ ভান্ডার রয়েছে, যা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি।
উপযুক্ত জলবায়ু ও প্রযুক্তি: সমভূমি ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সুবিধাজনক।
পরিবহন ও বাজার সুবিধা: নদী, সড়ক ও রেলপথের সহজ সংযোগ থাকায় কয়লা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সহজ।
শ্রমিক প্রাচুর্য: স্থানীয় শ্রমিক সহজলভ্য হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম হয়।
চাহিদা: শিল্পাঞ্চল ও নগরায়ণের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি, যা এই অঞ্চলে কেন্দ্র স্থাপনের মূল কারণ।
📝 10. পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির তুলনা করো।
✅ উত্তর:
| বৈশিষ্ট্য | পার্বত্য অঞ্চল | মালভূমি অঞ্চল |
|---|---|---|
| অবস্থান | উত্তরের দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং। | দক্ষিণ-পূর্বের নদী উপত্যকা ও উপকূলীয় এলাকা। |
| উচ্চতা | ২০০০–৩৬৫৮ মিটার। | সমভূমি বা সামান্য ঢালু। |
| ঢাল ও ভূমিক্ষয় | খাড়া ঢাল, ভূমিক্ষয় প্রবণ। | সমতল বা অল্প ঢাল, ভূমিক্ষয় কম। |
| নদী ও জলপ্রপাত | দ্রুত স্রোত, ঝরনা ও জলপ্রপাত রয়েছে। | নদী ধীরগতিতে প্রবাহিত, জলপ্রপাত কম। |
| বনভূমি | ঘন চিরহরিৎ বন, পাইন, দেবদারু, বাঁশ। | নাতিশীতোষ্ণ বন, আত্রাই, শীতকালীন বন কম। |
| কৃষি | ধাপচাষ, চা, আলু, সবজি। | ধান, আখ, সবজি প্রধান ফসল। |
| প্রাকৃতিক সম্পদ | বনজ সম্পদ, জল, খনিজ। | মাটি উর্বর, সমুদ্র ও নদী থেকে জ্বালানি সহজলভ্য। |
📝 11. তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির কারণ কী?
✅ উত্তর:
উচ্চ প্রযুক্তি শিক্ষা ও দক্ষ জনবল: পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলোতে কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার সুব্যবস্থা থাকায় দক্ষ কর্মী সহজলভ্য।
শহুরে অবকাঠামো: কলকাতা, সিলিগুড়ি, হাওড়া ইত্যাদি শহরে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে।
বাজার ও বিনিয়োগ সুবিধা: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সহজে সেবা প্রদান করতে পারে, পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের কাছে সংযোগ সহজ।
সরকারি নীতি ও প্রণোদনা: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে উৎসাহিত করতে সরকারের কর সুবিধা, বিনিয়োগ ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা প্রদান।
ভৌগোলিক সুবিধা: সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও রেলপথের সহজ যোগাযোগ ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে দ্রুততর করে।
উদ্ভাবনী পরিবেশ: বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় নতুন প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ও উদ্ভাবনী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।
📝 12. ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ বর্ণনা করো।
✅ উত্তর:
১. জলবায়ু:
ধান গ্রীষ্মপ্রধান আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মে। ২০°C থেকে ৩০°C তাপমাত্রা এবং বার্ষিক প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত ধান চাষের জন্য উপযুক্ত।
২. বৃষ্টিপাত ও সেচ:
ধানের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত জল; তাই বর্ষাকালের বৃষ্টিপাত ও সেচব্যবস্থাই এর মূল ভরসা। যেখানে বৃষ্টিপাত কম, সেখানে খাল, বাঁধ ও নালা দ্বারা সেচের ব্যবস্থা থাকে।
৩. মাটি:
আর্দ্র, উর্বর ও জলধারণক্ষম দোআঁশ বা কাদামাটি ধানচাষের জন্য উপযুক্ত। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদীর অববাহিকার পলি মাটি ধানের জন্য সর্বোত্তম।
৪. ভূমিরূপ:
সমতল বা নিম্নভূমি ধান চাষের জন্য উপযুক্ত, কারণ এতে সহজে জলধারণ করা যায়। টেরেস বা ঢালু ভূমিতে সোপান পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয়।
৫. মৌসুমি পরিবর্তন:
ধান চাষ বর্ষাকালীন ফসল হিসেবে পরিচিত; খরিফ মৌসুমে রোপা হয় এবং শরৎকালে কাটা হয়। কিছু অঞ্চলে রবি ও গ্রীষ্মকালীন ধানও চাষ হয়।
৬. মানবিক উপাদান:
ধান চাষে শ্রমের প্রয়োজন বেশি, তাই ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে এটি অধিক হয়। উন্নত সেচব্যবস্থা, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
🔹 উপসংহার:
উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু, উর্বর পলি মাটি ও প্রচুর বৃষ্টিপাত—এই তিনটি উপাদান ধান উৎপাদনের মূল চাবিকাঠি। এজন্যই ভারতের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল ধান উৎপাদনে অগ্রগণ্য।
📝 13. পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্পের উন্নতির কারণগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
১. ভৌগোলিক বৈচিত্র্য:
পশ্চিমবঙ্গে পাহাড়, সমতলভূমি, বনভূমি, নদী ও সমুদ্র উপকূল—সব ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধন রয়েছে। দার্জিলিং-এর পাহাড় থেকে দীঘার সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত এই বৈচিত্র্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
২. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
রাজা-রাজড়ার প্রাসাদ, দুর্গ, প্রাচীন মন্দির, মসজিদ ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্য পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। মুর্শিদাবাদ, বিষ্ণুপুর, কলকাতা, গৌড় প্রভৃতি স্থান ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ধর্মীয় পর্যটন:
তরপীঠ, কালীঘাট, তারকেশ্বর, গঙ্গাসাগর, শান্তিনিকেতন প্রভৃতি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র প্রতি বছর লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীকে আকর্ষণ করে।
৪. পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত:
রেল, সড়ক ও বিমান—তিন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি পর্যটকদের সহজে যাতায়াতের সুযোগ করে দিয়েছে। কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও উত্তরবঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দর বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
৫. জলবায়ুগত সুবিধা:
পশ্চিমবঙ্গে সারাবছর তুলনামূলকভাবে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে। ফলে পর্যটন কার্যক্রম সারা বছরই সম্ভব হয়।
৬. সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ:
রাজ্য পর্যটন দপ্তর, ‘West Bengal Tourism Development Corporation’ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির উদ্যোগে পর্যটন অবকাঠামো, হোটেল, রিসর্ট, তথ্যকেন্দ্র ও প্রচারব্যবস্থা উন্নত হয়েছে।
🔹 উপসংহার:
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, ধর্মীয় কেন্দ্র ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে।
📝 14. পাত-গাঠনিক তত্ত্ব অনুসারে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি আলোচনা করো।
✅ উত্তর:
১. পাত-গাঠনিক তত্ত্বের মূল কথা:
পাত-গাঠনিক তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory) অনুসারে পৃথিবীর ভূত্বক একাধিক শক্ত পাত বা প্লেটে বিভক্ত, যেগুলি অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের ওপর ভেসে ক্রমাগত গতিশীল অবস্থায় থাকে। এই পাতগুলির পারস্পরিক সংঘর্ষ, সরে যাওয়া ও ধাক্কা খাওয়ার ফলেই বিভিন্ন ভূপৃষ্ঠীয় গঠন তৈরি হয়।
২. পাতের সংঘর্ষজনিত পর্বতগঠন:
দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে মধ্যবর্তী ভূত্বক সংকুচিত ও ভাঁজ হয়ে উপরে উঠে যায়। এই প্রক্রিয়ায় গঠিত পর্বতকে বলা হয় ভঙ্গিল পর্বত (Fold Mountain)।
৩. ভাঁজ ও ফল্ট সৃষ্টি:
সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট প্রচণ্ড চাপের কারণে শিলাস্তরগুলো ভাঁজ পড়ে ‘অ্যান্টিক্লাইন’ (উত্তল ভাঁজ) ও ‘সিনক্লাইন’ (অবতল ভাঁজ) রূপে গঠিত হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত চাপের ফলে ফল্ট বা ফাটলও তৈরি হয়।
৪. উপমহাদেশীয় উদাহরণ:
ভারতীয় পাত (Indian Plate) উত্তরে ইউরেশীয় পাতের (Eurasian Plate) সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ভূত্বক সংকুচিত করেছে। এর ফলেই পৃথিবীর নবীনতম ভঙ্গিল পর্বত—হিমালয়—গঠিত হয়েছে।
৫. প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:
পাত সংঘর্ষের এই প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি বছর ধরে শিলাস্তর উত্থিত হতে হতে উচ্চতম পর্বতশ্রেণি তৈরি হয়। পর্বতের কেন্দ্রীয় অংশে রূপান্তরিত শিলা ও বাইরের অংশে অবক্ষেপিত শিলা দেখা যায়।
৬. অন্যান্য উদাহরণ:
হিমালয় ছাড়াও আল্পস (ইউরোপ), অ্যান্ডিজ (দক্ষিণ আমেরিকা), রকি (উত্তর আমেরিকা) এবং আটলাস (আফ্রিকা) পর্বতমালা এই ভঙ্গিল পর্বত গঠনের উদাহরণ।
🔹 উপসংহার:
অতএব, পাত-গাঠনিক তত্ত্ব অনুযায়ী ভঙ্গিল পর্বত মূলত দুটি মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষ ও ভূত্বকের সংকোচনজনিত ভাঁজের ফলে গঠিত হয়, যা পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
📝 15. হলদিয়া বন্দর গড়ে ওঠার কারণগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
১. প্রাকৃতিক ভৌগোলিক অবস্থান:
হলদিয়া বন্দর হুগলি নদীর মোহনায় সমুদ্রতটে অবস্থিত। এটি গভীর জলবহুল নদী এবং বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থলে হওয়ায় বড়পদস্থ জাহাজ আনা-নেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
২. কলকাতা বন্দর সীমাবদ্ধতা:
কলকাতা বন্দর নদীর গভীরতার কারণে বড় ও আধুনিক জাহাজের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। নতুন বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে হলদিয়াকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র করা যায়।
৩. শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান:
হলদিয়ার আশেপাশে উলুভূমি, তেল, রসায়ন ও কাঁচামালের বড় শিল্পাঞ্চল রয়েছে। ফলে বন্দরটি শিল্পপণ্য রপ্তানি ও আমদানির জন্য সুবিধাজনক।
৪. সরকারী উদ্যোগ:
ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্প ও বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য 1960-এর দশকে হলদিয়াতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
৫. পরিবহন সুবিধা:
রেল, সড়ক ও নলকূপের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের উন্নত ব্যবস্থা বন্দর কার্যক্রমকে সমর্থন করে।
৬. ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণ:
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বাণিজ্য সম্প্রসারণে হলদিয়া বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
🔹 উপসংহার:
অতএব, প্রাকৃতিক অবস্থান, শিল্পায়নের সুবিধা, কলকাতা বন্দর সীমাবদ্ধতা ও সরকারী উদ্যোগ মিলিয়ে হলদিয়া বন্দর গড়ে উঠেছে।
📝 16. কলকাতা বন্দরের 5টি প্রধান সমস্যা লেখো।
✅ উত্তর:
১. গভীরতার সীমাবদ্ধতা:
হুগলি নদীর গভীরতা কম হওয়ায় বড় ও আধুনিক জাহাজ Kolkata বন্দরে সহজে প্রবেশ করতে পারে না। নদী খনন ও নৌপথ রক্ষার ব্যয়বহুল প্রক্রিয়াও সীমিত।
২. নদীর বালি ও পলির সঞ্চয়:
বছর ধরে হুগলি নদীর বালি ও পলি জমে নৌপথ সংকীর্ণ করে। ফলে জাহাজ চলাচলে প্রায়ই নৌপথ খনন বা ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হয়।
৩. যানজট ও লজিস্টিক সমস্যা:
বন্দর এলাকায় সরাসরি রেল ও সড়কের যোগাযোগ সীমিত। পণ্য পরিবহনের জন্য দীর্ঘ লাইন এবং যানজট পর্যটন ও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে।
৪. আধুনিকীকরণের অভাব:
বন্দর সরঞ্জাম, ক্রেন ও লোডিং-আনলোডিং সুবিধা আধুনিক মানের তুলনায় কম। ফলে বড় জাহাজে দ্রুত পণ্য খালাস করা সম্ভব হয় না।
৫. পরিবেশগত সমস্যাসমূহ:
নদী ও নিকাশী ব্যবস্থার দূষণ, বর্জ্য ও শিল্পের কারণে নদীর পরিবেশ খারাপ। এটি জাহাজ চলাচল এবং এলাকার বাস্তুসংস্থানকে প্রভাবিত করে।
🔹 উপসংহার:
কলকাতা বন্দরের সীমিত গভীরতা, পলি-সঞ্চয়, যানজট, আধুনিক সরঞ্জামের অভাব এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণে এর কার্যকারিতা প্রভাবিত হয়।
📝 17. পাট চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ বর্ণনা করো।
✅ উত্তর:
১. জলবায়ু:
পাট গরম ও আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মায়। ২৪°C থেকে ৩৫°C তাপমাত্রা এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত (প্রায় ১৫০–২০০ সেন্টিমিটার বা তার বেশি) চাষের জন্য প্রয়োজনীয়।
২. মাটি:
পাটের জন্য উর্বর, আর্দ্র এবং নুনাক্তি যুক্ত দোআঁশ বা কাদামাটি সর্বোত্তম। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, ভূপতিয়ার নদীর তীরবর্তী সমভূমি পাট চাষের জন্য উপযুক্ত।
৩. জলসম্পদ ও সেচ:
বহুল বৃষ্টিপাত বা নদী থেকে সেচের সুবিধা থাকলে পাটের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য ছোটখাটো খাল ও নালা কার্যকর।
৪. ভূমিরূপ:
সমতল বা সামান্য ঢালবিশিষ্ট ভূমি পাট চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ঢাল বেশি হলে জল ধরা কঠিন হয় এবং পাটের উৎপাদন কমে যায়।
৫. মৌসুমি উপযোগিতা:
পাট সাধারণত বর্ষাকালীন খরিফ ফসল হিসেবে চাষ হয়। গ্রীষ্মে বীজ রোপণ এবং শরতে কাটা হয়।
৬. মানবিক উপাদান:
পাট চাষে শ্রমের প্রয়োজন বেশি। ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এবং সেচ, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার উৎপাদন বাড়ায়।
🔹 উপসংহার:
উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু, উর্বর দোআঁশ-মাটির সমভূমি, পর্যাপ্ত জল ও শ্রম—এই সব মিলিয়ে পাট চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গঠিত হয়।
📝 18. চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ বর্ণনা করো।
✅ উত্তর:
১. জলবায়ু:
চা গরম এবং আর্দ্র জলবায়ুতে ভালো জন্মায়। ১৮°C থেকে ৩০°C তাপমাত্রা এবং বার্ষিক প্রায় ১৫০–২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত চা চাষের জন্য উপযুক্ত।
২. উচ্চতা ও ভূমিরূপ:
চা গাছ পাহাড়ি ও ঢালু ভূমিতে ভালো জন্মায়। ৬০০–২২০০ মিটার উচ্চতা, মাঝারি ঢাল এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক চা চাষের জন্য উপযুক্ত।
৩. মাটি:
পানি-নিয়ন্ত্রণ ও উর্বরতার জন্য আলতো-হালকা দোআঁশ বা অ্যাসিডিক লাল মাটি প্রয়োজন। নদী তীরবর্তী বা পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর মাটি চা চাষের জন্য উপযুক্ত।
৪. জলপ্রবাহ ও সেচ:
প্রাকৃতিক বর্ষার পানি বা পাহাড়ি নদী থেকে সেচের ব্যবস্থা থাকলে চা গাছের বৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত জল নিস্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিহার্য।
৫. বায়ু ও আবহাওয়া:
চা গাছ হালকা বাতাস ও ঘন কুয়াশা ভালো সহ্য করে। অতিরিক্ত ঝোড়ো বাতাস বা প্রচণ্ড শীত চা গাছের ক্ষতি করতে পারে।
৬. মানবিক উপাদান:
চা চাষ শ্রমনির্ভর ফসল। পাড়ার শ্রমিক, উপযুক্ত প্রযুক্তি, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার চা উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক।
🔹 উপসংহার:
উচ্চ পাহাড়ি ভূমি, আর্দ্র ও হালকা ঠাণ্ডা জলবায়ু, উর্বর মাটি এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টি—এই সব মিলিয়ে চা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ গঠিত হয়।
📝 19. পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ূতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।
✅ উত্তর:
১. বর্ষাকালীন বৃষ্টি:
পশ্চিমবঙ্গে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত করে। এই মৌসুমি বায়ুর কারণে নদী উপত্যকা, সমভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়।
২. আর্দ্রতা ও কৃষি:
মৌসুমি বায়ুর আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাতের কারণে ধান, পাট, চা ও অন্যান্য বর্ষাকালীন ফসলের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
৩. নদী ও বন্যা:
হুগলি, গঙ্গা, মুর্শিদাবাদ ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নদীগুলোতে বর্ষাকালে জলস্তর বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মাঝে মাঝে নদী প্লাবন ঘটতে পারে।
৪. শীতকালের প্রভাব:
শীতকালে মৌসুমি বায়ু বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে শীতকাল comparative শুষ্ক ও ঠাণ্ডা হয়, যা ফসল কাটার জন্য সুবিধাজনক।
৫. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
মৌসুমি বায়ু এবং বৃষ্টি পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গ্রীষ্মের অত্যধিক তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়।
৬. ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিস্রোত:
মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় যুক্ত হলে উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়, ভারী বৃষ্টি ও ক্ষয়প্রভাব দেখা দেয়।
🔹 উপসংহার:
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ু কৃষি, নদী ব্যবস্থাপনা এবং তাপমাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বর্ষাকালীন আর্দ্রতা ও শীতকালীন শুষ্কতা রাজ্যের অর্থনীতি ও জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কিত।
📝 20. পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের তিনটি সমস্যা ও সমাধানকল্পে গৃহীত তিনটি ব্যবস্থা
✅ উত্তর:
প্রধান সমস্যা:
১. মানের অভাব:
পুরনো প্রথাগত প্রক্রিয়ায় পাট আঁচড়ানো ও শুকানো হওয়ায় ফাইবারের মান কম থাকে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা কম।
২. বাজারসংক্রান্ত সমস্যা:
পাটের বাজারজাতকরণ ও সঞ্চালন দুর্বল। মধ্যস্থতাকারী ব্যবস্থার কারণে চাষি বা শ্রমিকরা মূল্যের সঠিক সুবিধা পান না।
৩. প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অভাব:
পাট প্রক্রিয়াজাতকরণে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি কম ব্যবহৃত হয়। ফলে উৎপাদন ধীর এবং খরচ বেশি হয়।
সমাধানকল্পে গৃহীত ব্যবস্থা:
১. মান উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তি:
পাট প্রক্রিয়াজাতকরণে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু হয়েছে। নতুন ফাইবার প্রক্রিয়াকরণ ও শুকানোর পদ্ধতি মান উন্নয়নে সাহায্য করে।
২. সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা:
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সংস্থা চাষি ও শিল্পীকে প্রশিক্ষণ, ঋণ এবং সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে সহায়তা করছে।
৩. বাজার সম্প্রসারণ ও ব্র্যান্ডিং:
পাটজাত পণ্য রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘West Bengal Jute’ ব্র্যান্ড তৈরি করে আন্তর্জাতিক চাহিদা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
📝 21. পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
১. কাঁচামালের প্রাচুর্য:
দুর্গাপুরের নিকটে ঝাড়খণ্ডের ধাতুকুমারী অঞ্চল থেকে লৌহ-আয়রন খনিজ সহজলভ্য। পাশাপাশি কয়লা ও জল পাওয়ার উৎসও কাছাকাছি রয়েছে।
২. জল ও বিদ্যুৎ সুবিধা:
আসান নদী ও দমোদর নদী থেকে প্রচুর জল পাওয়া যায়। ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সহজে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব।
৩. পরিবহন সুবিধা:
রেলপথ, সড়ক এবং নদীর মাধ্যমে কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্য পরিবহন সহজ। কলকাতা বন্দর ও অন্যান্য নৌপথ দুর্গাপুরকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করেছে।
৪. সরকারী উদ্যোগ ও নীতি:
স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত সরকার শিল্পায়ন বৃদ্ধির জন্য দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল।
৫. শ্রমিক ও জনসংখ্যা:
দক্ষিণপূর্ব ভারতের শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয় জনসংখ্যা শিল্পকাজে নিয়োজিত হওয়ার জন্য সহজলভ্য।
৬. শিল্পসম্পর্কিত সুবিধা:
বিদ্যুৎ, জল, কাঁচামাল ও বাজার—এই সব সুবিধা মিলিয়ে দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্প দ্রুত গড়ে উঠেছে।
<<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>>

