🌹বি.এ সেমিষ্টার-৪::মেজর ইতিহাস(পেপার-৩)সাজেশন(PART-2)🌹

✍️প্রশ্নের মান-৫:

📝 ১. পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের ইউরোপের গিল্ড ব্যবস্থার উপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

✅ উত্তর:

১. গিল্ড ব্যবস্থার পরিচয় :
গিল্ড ছিল মধ্যযুগীয় ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। এটি একই পেশার ব্যবসায়ী বা কারিগরদের সমিতি, যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা, পণ্যের মান এবং উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করত।

২. গিল্ডের দুটি প্রধান ধরন :

• বণিক গিল্ড (Merchant Guild): বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করত।

• কারিগর গিল্ড (Craft Guild): নির্দিষ্ট পেশার কারিগর যেমন তাঁতি, কামার, মুচি, স্বর্ণকার প্রভৃতিদের নিয়ে গঠিত ছিল।

৩. গিল্ডের সংগঠন কাঠামো :
গিল্ডে সাধারণত তিনটি স্তর থাকত—

• মাস্টার (Master): দক্ষ ও অভিজ্ঞ কারিগর, যিনি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতেন।

• জার্নিম্যান (Journeyman): সহকারী বা অভিজ্ঞ কর্মী, যিনি মজুরি পেতেন।

• অ্যাপ্রেন্টিস (Apprentice): শিক্ষানবিশ, যিনি মাস্টারের অধীনে প্রশিক্ষণ নিতেন।

৪. গিল্ডের প্রধান কাজ :

• উৎপাদনের মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা।

• বাজারে দাম স্থির করা ও প্রতিযোগিতা রোধ করা।

• সদস্যদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা।

• অসুস্থ বা দুঃস্থ সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান।

• ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসবে অংশগ্রহণ।

৫. গিল্ডের সামাজিক গুরুত্ব :
গিল্ড শুধু অর্থনৈতিক সংগঠন নয়, বরং এটি সামাজিক বন্ধনের কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করত। সদস্যদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি ও পারস্পরিক সাহায্যের মাধ্যমে সমাজে ঐক্য বজায় রাখত।

৬. গিল্ড ব্যবস্থার পতনের কারণ :
ষোড়শ শতকে বাণিজ্য বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের সূচনায় গিল্ড ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বৃহৎ উৎপাদন, যন্ত্র প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার গিল্ডের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেয়।

৭. ঐতিহাসিক তাৎপর্য :
গিল্ড ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় ইউরোপের শ্রম ও উৎপাদন সংগঠনের এক মাইলফলক। এটি আধুনিক শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নের ভিত্তি রচনা করে।

উপসংহার :
গিল্ড ব্যবস্থা ছিল মধ্যযুগের অর্থনৈতিক জীবনের মূল কাঠামো, যা ইউরোপের শিল্প ও বাণিজ্য বিকাশের প্রাথমিক স্তরকে চিহ্নিত করে এবং পরবর্তীকালে আধুনিক অর্থনৈতিক চিন্তার জন্ম দেয়।

📝 ২. ইংল্যান্ডে কেন প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল?

✅ উত্তর:

১. প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভৌগোলিক সুবিধা :
ইংল্যান্ডে কয়লা ও লৌহ আকরিকের বিপুল ভাণ্ডার ছিল, যা শিল্প বিপ্লবের মূল ভিত্তি তৈরি করে। কয়লা শক্তির সহজলভ্যতা কারখানায় যন্ত্রচালনা সম্ভব করে তোলে। পাশাপাশি দেশের নদী-খালপথ পণ্য পরিবহনে বিশেষ সহায়তা দেয়।

২. কৃষি বিপ্লবের প্রভাব :
অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে কৃষি বিপ্লব ঘটে, যার ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে যায়। জমি একীভূতকরণ ও যান্ত্রিক কৃষিকাজের কারণে অনেক কৃষক কাজ হারিয়ে শহরমুখী হয়। এতে শিল্প কারখানার জন্য প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায়।

৩. মূলধনের প্রাচুর্য ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ :
উপনিবেশিক বাণিজ্য ও দাস ব্যবসা থেকে বিপুল মূলধন জমা হয়েছিল। এই অর্থ কারখানা স্থাপন, যন্ত্র ক্রয় এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা হয়। এছাড়া বিদেশে বাজার সম্প্রসারণের ফলে উৎপাদিত পণ্যের সহজ বিক্রি সম্ভব হয়।

৪. প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানমনস্কতা :
জেমস ওয়াটের বাষ্প ইঞ্জিন, হ্যারগ্রিভসের স্পিনিং জেনি, আর্করাইটের ওয়াটার ফ্রেম—এমন সব উদ্ভাবন শিল্পের গতি বাড়ায়। ইংল্যান্ডে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ও উদ্ভাবনী মনোভাব সমাজে সম্মান পেত, যা শিল্প উন্নয়নে উৎসাহ জোগায়।

৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক মানসিকতা :
ইংল্যান্ডে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল, ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। সরকারের নীতি শিল্প ও বাণিজ্যবান্ধব ছিল। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মীয় মনোভাব মানুষের মধ্যে পরিশ্রম, সঞ্চয় ও সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে।

উপসংহার :
ইংল্যান্ডে প্রাকৃতিক সম্পদ, মূলধন, প্রযুক্তিগত উন্নতি, শ্রমিক সরবরাহ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সমন্বয়ে প্রথম শিল্প বিপ্লব সম্ভব হয়। এই বিপ্লব আধুনিক শিল্পযুগের সূচনা ঘটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির রূপ পাল্টে দেয়।

📝 ৩. পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের মুদ্রণ বিপ্লব সম্পর্কে যা জানো লেখো।

✅ উত্তর:

১. সূচনা ও উদ্ভাবক :
পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানির মাইন্‌জ শহরে জোহানেস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন। এটি ছিল চলমান অক্ষর বা movable type printing press–এর আবিষ্কার, যা এক বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন ঘটায়।

২. জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার :
মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে বই, পুস্তিকা ও বাইবেলের কপি দ্রুত ও সস্তায় ছাপা সম্ভব হয়। ফলে শিক্ষা, বিজ্ঞান, ধর্ম, ও সাহিত্যের জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এটি ইউরোপে এক “জ্ঞান-বিস্ফোরণ” ঘটায়।

৩. মানবতাবাদ ও রেনেসাঁর বিকাশ :
রেনেসাঁ যুগের মানবতাবাদী চিন্তা, প্রাচীন গ্রিক-রোমান সাহিত্য, এবং বৈজ্ঞানিক ভাবনা ছড়িয়ে পড়ে মুদ্রণ বিপ্লবের মাধ্যমেই। শিক্ষিত সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে এই বিপ্লব ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

৪. ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে ভূমিকা :
গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র মার্টিন লুথারের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে বিশাল ভূমিকা রাখে। বাইবেলের স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ দ্রুত ছাপা হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছায়, যা চার্চের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।

৫. সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব :
মুদ্রণ বিপ্লবের ফলে চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষ রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে সচেতন হয়। এটি পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশে সহায়তা করে।

উপসংহার :
অতএব, পঞ্চদশ শতকের মুদ্রণ বিপ্লব ইউরোপে জ্ঞানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, রেনেসাঁ, সংস্কার ও আধুনিক যুগের সূচনা ঘটায়। গুটেনবার্গের এই উদ্ভাবন মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক।

📝 ৪. লুথারের ৯৫ থিসিস সম্পর্কে টীকা লেখো।

✅ উত্তর:

১. প্রেক্ষাপট :
ষোড়শ শতকের শুরুতে রোমান ক্যাথলিক চার্চ বিপুল অর্থের লোভে ‘ইনডালজেন্স’ (পাপমোচনের চিঠি) বিক্রি শুরু করে। এই অপপ্রথা দেখে জার্মান সন্ন্যাসী ও ধর্মতাত্ত্বিক মার্টিন লুথার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ হন।

২. ৯৫ থিসিস প্রকাশ :
১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে লুথার উইটেনবার্গ চার্চের দরজায় তাঁর বিখ্যাত ৯৫টি থিসিস (Ninety-Five Theses) টাঙিয়ে দেন। এতে তিনি পাপমোচনপত্র বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং চার্চের নৈতিক অধঃপতনের সমালোচনা করেন।

৩. মূল বক্তব্য :
লুথারের মতে, পাপমোচন কেবল অর্থের বিনিময়ে নয়, বরং বিশ্বাস ও অনুশোচনার মাধ্যমে ঈশ্বরের কৃপা লাভ করা যায়। তিনি বলেন, “মানুষের মুক্তি বিক্রি করা যায় না”—এই ভাবনাই তাঁর থিসিসের কেন্দ্রবিন্দু।

৪. প্রভাব :
৯৫ থিসিস ইউরোপজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। জনগণ চার্চের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সচেতন হয়। ফলে এটি ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সূচনা ঘটায়, যা প্রোটেস্টান্ট মতবাদের জন্ম দেয়।

৫. ঐতিহাসিক গুরুত্ব :
এই ঘটনার মাধ্যমে মধ্যযুগের ধর্মীয় একচেটিয়া কর্তৃত্ব ভেঙে যায় এবং আধুনিক ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপিত হয়। লুথারের ৯৫ থিসিস কেবল ধর্ম নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনেরও সূচনা ঘটায়।

উপসংহার :
অতএব, লুথারের ৯৫ থিসিস ইউরোপের ধর্মীয় ইতিহাসে এক যুগান্তকারী নথি, যা অন্ধবিশ্বাস ও চার্চের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্য ও বিশ্বাসের বিজয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে।

📝 ৫. ক্যালভিনবাদ ও লুথারবাদের সম্পর্ক বা পার্থক্য লেখো।

✅ উত্তর:

১. ভূমিকা :
ষোড়শ শতকের ইউরোপে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের ফলে দুটি প্রধান প্রোটেস্টান্ট মতবাদ গঠিত হয়—লুথারবাদ ও ক্যালভিনবাদ। উভয়ই রোমান ক্যাথলিক চার্চের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় সংস্কারের পক্ষে হলেও, বিশ্বাস ও নীতির কিছু মৌলিক পার্থক্য ছিল।

২. প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্র :
লুথারবাদ গড়ে ওঠে জার্মানির মার্টিন লুথারের উদ্যোগে, আর ক্যালভিনবাদ প্রতিষ্ঠা করেন সুইজারল্যান্ডের জন ক্যালভিন। লুথার মানব মুক্তিতে বিশ্বাসের ভূমিকা জোর দিয়ে বলেন, অন্যদিকে ক্যালভিন ‘ঈশ্বরনির্ধারিত ভাগ্য’ বা Predestination মতবাদে গুরুত্ব দেন।

৩. মুক্তি ও ঈশ্বরবিশ্বাস :
লুথারের মতে, মুক্তি আসে বিশ্বাস ও ঈশ্বরের করুণা দ্বারা। কিন্তু ক্যালভিন বলেন, মুক্তি আগে থেকেই ঈশ্বর নির্ধারণ করে রেখেছেন—মানুষ নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না। এটাই ক্যালভিনবাদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র তত্ত্ব।

৪. চার্চ সংগঠন ও নৈতিকতা :
লুথার চান রাজশক্তি ও চার্চের সহাবস্থান, কিন্তু ক্যালভিন চার্চকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখতে চান। ক্যালভিন কঠোর নৈতিক শৃঙ্খলা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব দেন, যা জেনেভায় “ধর্মতান্ত্রিক শাসন” প্রতিষ্ঠা করে।

৫. সম্পর্ক ও প্রভাব :
লুথারবাদ থেকে ক্যালভিনবাদ অনেক মত গ্রহণ করেছে—বিশেষত বাইবেলকে একমাত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মানার নীতি। তবে ক্যালভিনবাদ আরও কঠোর ও নীতিনিষ্ঠ পথে চলে ইউরোপে নতুন প্রোটেস্টান্ট সমাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি করে।

উপসংহার :
অতএব, লুথারবাদ ও ক্যালভিনবাদ একই ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের দুটি ভিন্ন ধারা—একটি বিশ্বাসে মুক্তির, অন্যটি ঈশ্বরনির্ধারিত ভাগ্যে মুক্তির। দুটিই মিলে ইউরোপে ধর্মীয় ও সামাজিক নবজাগরণের পথ প্রশস্ত করে।

📝 ৬. ইউরোপের আর্থসামাজিক জীবনে ব্ল্যাক ডেথের ফলাফল লেখো।

✅ উত্তর:

১. ভূমিকা :
চতুর্দশ শতকের মধ্যভাগে (১৩৪৭-১৩৫১ খ্রিষ্টাব্দে) ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক ভয়াবহ মহামারী — ব্ল্যাক ডেথ বা বিউবনিক প্লেগ। এটি ইউরোপের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণকে বিনাশ করে এবং সমাজ-অর্থনীতির কাঠামো গভীরভাবে পাল্টে দেয়।

২. জনসংখ্যা হ্রাস :
এই মহামারীতে ইউরোপের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মারা যায়। কৃষিজমি পরিত্যক্ত হয়, গ্রামশূন্যতা দেখা দেয় এবং জনশূন্যতার ফলে শ্রমিক সংকট তৈরি হয়।

৩. কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন :
চাষির মৃত্যু ও শ্রমিকের ঘাটতির কারণে জমির উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। জমিদাররা ভূমি চাষে ব্যর্থ হয়ে চাষযোগ্য জমি পরিত্যাগ করেন বা পশুপালন শুরু করেন। সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি ভেঙে পড়তে শুরু করে।

৪. শ্রমমূল্য বৃদ্ধি ও সামাজিক পরিবর্তন :
শ্রমিকের অভাবের ফলে মজুরি বৃদ্ধি পায় এবং কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণি তাদের কাজের ন্যায্য দাবি তুলতে শুরু করে। এতে সামন্ত প্রভুদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ইউরোপে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান ঘটে।

৫. নগরজীবন ও বাণিজ্যের প্রভাব :
মহামারীর প্রভাবে বাণিজ্য ও কারুশিল্পে সাময়িক স্থবিরতা দেখা দেয়। তবে পরে নগরাঞ্চলে শ্রমের চাহিদা বাড়ায় বাণিজ্য ও উৎপাদন আবার সক্রিয় হয়, যা পুঁজিবাদী অর্থনীতির সূচনায় সহায়ক হয়।

৬. ধর্মীয় ও মানসিক প্রভাব :
অসংখ্য মৃত্যুর ফলে মানুষের মনে ধর্মীয় ভয় ও হতাশা জন্মায়। কেউ কেউ ধর্মীয় চরমপন্থায় ঝুঁকেন, আবার অনেকেই চার্চের প্রতি আস্থা হারান, কারণ পুরোহিতেরা মহামারী রোধে ব্যর্থ হন। এতে চার্চের প্রভাব দুর্বল হয়।

৭. সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি :
ব্ল্যাক ডেথ ইউরোপে সামাজিক শ্রেণি বিন্যাস নাড়া দেয়। জমির মালিকানা বদলায়, কৃষকের অবস্থান উন্নত হয়, এবং সমাজে নতুন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা জন্ম নেয়।

উপসংহার :
অতএব, ব্ল্যাক ডেথ ছিল শুধু একটি মহামারী নয়—এটি ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের পতন, পুঁজিবাদের উত্থান ও সামাজিক পুনর্গঠনের সূচনা ঘটায়। মানবসভ্যতার গতিপথে এটি এক যুগান্তকারী বাঁক।

📝 ৭. মূল্য বিপ্লবের ফলাফল আলোচনা করো।

✅ উত্তর:

১. ভূমিকা :
ষোড়শ শতকের ইউরোপে হঠাৎ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা দেয়, যাকে বলা হয় মূল্য বিপ্লব (Price Revolution)। আমেরিকা থেকে বিপুল স্বর্ণ-রৌপ্য আগমনের ফলে ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

২. অর্থনৈতিক ফলাফল :
মূল্যবৃদ্ধির কারণে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। যারা স্থির বেতনে বা স্থির আয়ে নির্ভর করতেন, তাদের বাস্তব আয় হ্রাস পায়। অপরদিকে, ব্যবসায়ী ও পণ্য উৎপাদক শ্রেণি লাভবান হন, কারণ পণ্যের দাম বাড়লেও উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম ছিল।

৩. কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব :
চাষিদের উপর জমির খাজনা ও ভাড়ার বোঝা বাড়ে। অনেক ক্ষুদ্র কৃষক জমি হারিয়ে মজুর শ্রেণিতে পরিণত হয়। অন্যদিকে, ভূমি-মালিকরা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে কৃষিজ আয়ের উন্নতি অনুভব করেন।

৪. বাণিজ্য ও শিল্পে প্রভাব :
দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাণিজ্য ও শিল্পে দ্রুত লাভের সুযোগ তৈরি হয়। ফলে মধ্যবিত্ত ও বণিক শ্রেণির উত্থান ঘটে এবং ইউরোপে পুঁজিবাদের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।

৫. সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতির পতন :
মূল্যবৃদ্ধির ফলে সামন্ত প্রভুরা তাদের প্রথাগত স্থির আয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে সামন্ততন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা ধীরে ধীরে বণিক ও উদ্যোক্তাদের হাতে আসে।

৬. শ্রমজীবী শ্রেণির দুরবস্থা :
খাবার, পোশাক, ও আবাসনের দাম বাড়লেও শ্রমিকদের মজুরি অনুপাতে বাড়েনি। ফলে তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে ও শহরে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়।

৭. সামাজিক প্রভাব :
আর্থিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সমাজে ধনী-গরিবের বিভাজন তীব্র হয়। একই সঙ্গে নতুন বাণিজ্যিক শ্রেণি সামাজিক মর্যাদা অর্জন করতে শুরু করে।

৮. রাজনৈতিক প্রভাব :
রাজারা কর বাড়িয়ে ও ঋণ নিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি করেন, ফলে কেন্দ্রীয় শাসন শক্তিশালী হয়।

উপসংহার :
অতএব, মূল্য বিপ্লব ইউরোপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি সামন্ততন্ত্রের অবসান, পুঁজিবাদ ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের পথ উন্মুক্ত করে দেয়।

📝 ৮. ফ্রান্সে কীভাবে রাজতন্ত্রের উত্থান ঘটেছিল?

✅ উত্তর:

১. ভূমিকা :
মধ্যযুগে ফ্রান্স ছিল একাধিক সামন্ত প্রভুর অধীন বিভক্ত রাজ্য। ধীরে ধীরে রাজারা ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে চরম রাজতন্ত্র (Absolute Monarchy) প্রতিষ্ঠা করেন। রাজকীয় কর্তৃত্বের এই বিকাশ কয়েক শতকের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ফল।

২. সামন্ততন্ত্রের পতন :
ফিউডাল প্রভুদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের ফলে তাদের শক্তি ক্রমে দুর্বল হয়। কৃষক ও সাধারণ জনগণ নিরাপত্তার আশায় রাজাদের আশ্রয় নিতে শুরু করে। এর ফলে রাজাদের প্রভাব ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়।

৩. চার্চের সঙ্গে রাজাদের সমঝোতা :
ফ্রান্সের রাজারা ক্যাথলিক চার্চের সমর্থন লাভ করেন। চার্চও রাজাদের ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত শাসক’ বলে ঘোষণা করে, ফলে রাজতন্ত্রের নৈতিক ও ধর্মীয় ভিত্তি মজবুত হয়।

৪. যুদ্ধ ও প্রশাসনিক সংস্কার :
শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ (Hundred Years’ War) ফ্রান্সে জাতীয় চেতনা জাগিয়ে তোলে। ভ্যালোয়া ও বুরবোঁ রাজবংশের রাজারা স্থায়ী সেনাবাহিনী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে তুলে রাজশক্তিকে দৃঢ় করেন।

৫. অর্থনৈতিক উন্নতি ও বণিক শ্রেণির সমর্থন :
বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশে নতুন বণিক শ্রেণি উদ্ভব হয়, যারা স্থিতিশীল সরকার চেয়েছিল। রাজারা এই শ্রেণির সমর্থনে কর বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি করেন এবং রাজকোষ সমৃদ্ধ করেন।

৬. উপসংহার :
অতএব, সামন্ত প্রভুদের দুর্বলতা, চার্চের সমর্থন, প্রশাসনিক সংস্কার ও বণিক শ্রেণির সহযোগিতায় ফ্রান্সে ধীরে ধীরে চরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধারাই পরবর্তীকালে লুই চতুর্দশের শাসনে সর্বোচ্চ রূপে প্রকাশ পায়।

<<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>> 

👉For pdf whatsapp-8250978714