🌹বি.এ ইতিহাস মেজর(পেপার-১):: সেমিষ্টার-৪:: সাজেশন(PART-1)🌹

 

 

 

✍️প্রশ্নের মান-২:

১. গুপ্তবংশের পতনের পশ্চাতে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ লেখ।
উত্তর: উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধ: যুবরাজদের মধ্যে সিংহাসন দখলকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির উত্থান: বিভিন্ন প্রাদেশিক শক্তি কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সামরিক দুর্বলতা: সেনাবাহিনী সুসংগঠিত ছিল না এবং অস্ত্রশস্ত্র ছিল অনুন্নত। প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতি: রাজন্যবর্গ ও আমলাদের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব ছিল। অর্থনৈতিক অবক্ষয়: রাজস্ব আদায়ে সমস্যা এবং অতিরিক্ত খরচ সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল করে তোলে।

২. বৌদ্ধধর্ম কীভাবে গুপ্তদের পতনে দায়ী ছিল?
উত্তর: প্রথমদিকে গুপ্ত রাজারা হিন্দুধর্মাবলম্বী এবং সামরিক শক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে তাঁদের যুদ্ধজয়ী মনোভাব ও রণোন্মাদনা হ্রাস পায়। প্রথম কুমারগুপ্তকে সন্ন্যাসীর বেশে মুদ্রায় দেখা যায়, যা দুর্বল নেতৃত্বের ইঙ্গিত দেয়। রাজদরবারে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বসুবন্ধুর প্রভাব ছিল অত্যন্ত প্রবল, যিনি রাজনীতির থেকে নিরপেক্ষতা ও আত্মত্যাগে বিশ্বাসী ছিলেন। এই প্রভাবের ফলে সাম্রাজ্য পরিচালনায় আত্মবিশ্বাস ও আগ্রাসী নীতির অভাব দেখা যায়, যা পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৩. বালাদিত্য গুপ্ত কী একজন ভীতু রাজপুরুষ ছিলেন?
উত্তর: বালাদিত্য গুপ্তের কাজকর্ম দেখে তাঁকে ভীতু বা দুর্বল বলা যায়। তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বসুবন্ধুর শিষ্য ছিলেন এবং মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন। হুণ আক্রমণের সময় তিনি প্রতিরোধ না করে জলা-জঙ্গলে আশ্রয় নেন। হুণ নেতা মিহিরকুল বন্দি হওয়ার পরও তাঁকে মুক্তি দেন। এই সমস্ত ঘটনাগুলি তাঁর রাজনৈতিক অযোগ্যতা ও সাহসিকতার অভাব নির্দেশ করে। ফলে তাঁকে একজন ভীতু ও কাপুরুষ রাজা বলা যথার্থ।

৪. হুণরা কখন ভারত আক্রমণ করেছিল?
উত্তর: গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীদের দুর্বলতার সুযোগে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শেষভাগে হুণরা ভারত আক্রমণ করে। এই সময় তাদের নেতা ছিলেন তোরমান। পাঞ্জাব, রাজপুতানা ও পূর্ব মালব জয় করে তারা সেখানে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

৫. তোরমানের শেষ জীবন সম্পর্কে কী জানা যায়?
উত্তর: এরান শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, ৫১০ খ্রিস্টাব্দে তোরমান গুপ্ত সম্রাট ভানুগুপ্তের হাতে পরাজিত হন। অষ্টম শতকে রচিত জৈন গ্রন্থ ‘কুবলয়মালা’ থেকে জানা যায় যে, তিনি জীবনের শেষ পর্বে জৈনধর্ম গ্রহণ করেন এবং চেনাব নদীর তীরে বসবাস করতেন।

৬. মিহিরকুল কে ছিলেন?
উত্তর: মিহিরকুল ছিলেন হুণ নেতা তোরমানের পুত্র। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাসক এবং ঘোরতর বৌদ্ধবিদ্বেষী। তাঁর শাসনকেন্দ্র ছিল শাকল (বর্তমান শিয়ালকোট)। তিনি বহু বৌদ্ধ মঠ ও মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। তাঁর শাসন সীমা সম্ভবত গোয়ালিয়র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

৭. মিহিরকুলের শেষ জীবন কেমন ছিল?
উত্তর: গুপ্ত রাজা বালাদিত্যর কাছে পরাজয়ের পর মিহিরকুল কাশ্মীরে আশ্রয় নেন। তিনি প্রবল বৌদ্ধবিরোধী ছিলেন এবং শিবের উপাসক ছিলেন। তিনি গোয়ালিয়রে একটি সূর্যমন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

৮. হুণরা কতদিন পর্যন্ত ভারতে উপদ্রব বজায় রেখেছিল?
উত্তর: মিহিরকুলের মৃত্যুর পর যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে হুণদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং স্থানীয় শক্তির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তবুও, খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের শেষ পর্যন্ত তারা ভারতে উপদ্রব চালিয়ে যায়।

৯. হর্ষবর্ধনের সময় কামরূপের রাজা কে ছিলেন?
উত্তর: হর্ষবর্ধনের সময় কামরূপের রাজা ছিলেন ভাস্করবর্মন। হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মন মিলে গৌড়ের শাসক শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।

১০. হর্ষবর্ধন কখন 'শিলাদিত্য' উপাধি গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: ৬১২ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধন কনৌজের সম্রাট হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন এবং তখনই ‘শিলাদিত্য’ উপাধি গ্রহণ করেন।

১১. হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায় এমন কয়েকটি উপাদানের নাম লেখ।
উত্তর: হর্ষবর্ধনের রাজত্ব সম্পর্কে আমরা যেসব উপাদান থেকে জানতে পারি তা হল—
১. বানভট্টের ‘হর্ষচরিত’
২. হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণ
৩. বাঁশখেরা তাম্রপট্ট
৪. নালন্দা সিল
৫. সোনপত তাম্রপট্ট
৬. মধুবনী তাম্রপট্ট
৭. আইহোল শিলালিপি (চালুক্য রাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তি লিখিত)

১২. বানভট্টের মতে পঞ্চভারত বলতে কোন অঞ্চলকে বোঝানো হয়?
উত্তর: বানভট্টের মতে, হর্ষবর্ধন ছিলেন ‘পঞ্চভারতের’ অধিপতি। এই পঞ্চভারত বলতে বোঝানো হয়েছে—পাঞ্জাব, কনৌজ, বিহার, বাংলা ও উড়িষ্যা।

১৩. সকলোত্তরপথনাথ কাকে বলা হয়?
উত্তর: ‘সকলোত্তরপথনাথ’ বলা হয়েছে হর্ষবর্ধনকে। চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তি তাঁর আইহোল শিলালিপিতে হর্ষবর্ধনকে এই উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

১৪. হর্ষবর্ধন কোন বাঙালি শাসকের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন?
উত্তর: হর্ষবর্ধন গৌড়াধিপতি শশাঙ্কের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

১৫. গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের আঞ্চলিক শক্তিগুলির তালিকা দাও।
উত্তর:
১. মান্দাশোর বংশ – ষষ্ঠ শতকে যশোধর্মন এই বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
২. বলভীর মৈত্রক বংশ – গুপ্ত সেনাপতি ভট্টারক এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
৩. বাকাটক বংশ – বিন্ধ্যশক্তি এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

১৬. হর্ষবর্ধনের সময় কামরূপের রাজা কে ছিলেন?
উত্তর: হর্ষবর্ধনের সময় কামরূপের রাজা ছিলেন ভাস্করবর্মন। হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মন একত্রে গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

১৭. হর্ষবর্ধন কখন 'শিলাদিত্য' উপাধি গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: ৬১২ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধন নিজেকে কনৌজের সম্রাট ঘোষণা করেন এবং সেই সময়েই ‘শিলাদিত্য’ উপাধি গ্রহণ করেন।

১৮. হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায় এমন কয়েকটি উপাদানের নাম লেখ।
উত্তর: হর্ষবর্ধনের রাজত্ব সম্পর্কে জানতে যেসব উপাদানের ওপর নির্ভর করা হয়—
(১) বানভট্টের ‘হর্ষচরিত’
(২) হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণ
(৩) বাঁশখেরা তাম্রপট্ট
(৪) নালন্দা সিল
(৫) সোনপত তাম্রপট্ট
(৬) মধুবনী তাম্রপট্ট
(৭) চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল শিলালিপি

১৯. বানভট্টের মতে পঞ্চভারত বলতে কোন অঞ্চলকে বোঝানো হয়?
উত্তর: বানভট্টের মতে, ‘পঞ্চভারত’ বলতে বোঝানো হয়েছে—পাঞ্জাব, কনৌজ, বিহার, বাংলা ও উড়িষ্যা। হর্ষবর্ধন এই অঞ্চলগুলির অধিপতি ছিলেন।

২০. সকলোত্তরপথনাথ কাকে বলা হয়?
উত্তর: ‘সকলোত্তরপথনাথ’ বলা হয় হর্ষবর্ধনকে। চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তির রচিত আইহোল শিলালিপিতে এই উপাধিতে তাঁকে বর্ণনা করা হয়েছে।

২১. হর্ষবর্ধন কোন বাঙালি শাসকের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন?
উত্তর: হর্ষবর্ধন গৌড়ের শাসক শশাঙ্কের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

২২. গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের আঞ্চলিক শক্তিগুলির নাম লেখ।
উত্তর:
(ক) মান্দাশোর বংশ – ষষ্ঠ শতকের শুরুতে যশোধর্মন এই বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
(খ) বলভীর মৈত্রক বংশ – গুপ্ত সেনাপতি ভট্টারক প্রতিষ্ঠা করেন।
(গ) বাকাটক বংশ – এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিন্ধ্যশক্তি।

---

📝 ২৩. পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
✅ উত্তর: পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোপাল। তিনি ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন। তাঁর শাসনেই বাংলায় রাজনৈতিক ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

---

📝 ২৪. গোপাল কোন সমস্যার সমাধানের জন্য রাজা নির্বাচিত হয়েছিলেন?
✅ উত্তর: গোপাল নির্বাচিত হন অরাজকতার অবসান ঘটানোর জন্য। বাংলায় গৃহযুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলা চলছিল। জনগণ মিলিতভাবে তাঁকে রাজা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।

---

📝 ২৫. ধর্মপাল কোন রাজধানী থেকে শাসন করতেন?
✅ উত্তর: ধর্মপালের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র (বর্তমান পাটনা)। তিনি উত্তর ভারতে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর রাজত্বে পালশক্তির সর্বোচ্চ বিস্তার ঘটে।

---

📝 ২৬. ধর্মপালের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব কী ছিল?
✅ উত্তর: ধর্মপালের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব ছিল উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন। তিনি কনৌজের রাজা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেন। ফলে পালশক্তি সর্বাধিক মর্যাদা অর্জন করে।

---

📝 ২৭. দেবপাল কোন কোন অঞ্চলে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন?
✅ উত্তর: দেবপাল সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন অসম থেকে পাঞ্জাব ও নেপাল পর্যন্ত। তিনি গৌড় সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করেন। তাঁর সময়কে পাল যুগের স্বর্ণযুগ বলা হয়।

---

📝 ২৮. পাল যুগে কোন ধর্মের প্রভাব ছিল সর্বাধিক?
✅ উত্তর: পাল যুগে বৌদ্ধ ধর্ম, বিশেষত বজ্রযান সম্প্রদায়ের প্রভাব ছিল প্রবল। রাজারা বৌদ্ধ বিহার ও শিক্ষাকেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। নালন্দা ও বিক্রমশীলা এই সময়ে খ্যাতি অর্জন করে।

---

📝 ২৯. বিক্রমশীলা মহাবিহার কে প্রতিষ্ঠা করেন?
✅ উত্তর: বিক্রমশীলা মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মপাল। এটি ছিল বৌদ্ধ শিক্ষার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে বহু বিদেশি ছাত্র অধ্যয়ন করত।

---

📝 ৩০. পাল যুগের প্রধান বৌদ্ধ পণ্ডিত কারা ছিলেন?
✅ উত্তর: পাল যুগের প্রধান বৌদ্ধ পণ্ডিত ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর, শান্তরক্ষিত, কমলশীল প্রমুখ। তাঁরা তিব্বতে ধর্ম প্রচার করেন। তাঁদের অবদান আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে।

---

📝 ৩১. পাল রাজাদের পতনের কারণ কী ছিল?
✅ উত্তর: পাল রাজাদের পতনের প্রধান কারণ ছিল রাজবংশীয় দুর্বলতা ও সেন বংশের উত্থান। এছাড়া আঞ্চলিক রাজাদের বিদ্রোহও শক্তি ক্ষয় করে। ফলে পাল শাসনের অবসান ঘটে।

---

📝 ৩২. পাল যুগে শিল্প ও স্থাপত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
✅ উত্তর: পাল যুগে শিল্পে বৌদ্ধ ভাবধারা ও তন্ত্রসাধনার প্রভাব দেখা যায়। পাথর, ধাতু ও টেরাকোটায় সূক্ষ্ম মূর্তি নির্মিত হয়। সোমপুর বিহারের স্থাপত্য এ যুগের উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

---

📝 ৩৩. পাল যুগকে বাংলার ইতিহাসে “স্বর্ণযুগ” বলা হয় কেন?
✅ উত্তর: পাল যুগে বাংলার রাজনৈতিক ঐক্য, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটেছিল। সাহিত্য, শিল্প ও শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি হয়। তাই একে “বাংলার স্বর্ণযুগ” বলা হয়।

---

📝 ৩৪. সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা কোথায় এবং কার মাধ্যমে হয়েছিল?
✅ উত্তর: বাংলায় সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় গৌড়ে, বল্লাল সেনের মাধ্যমে। তিনি প্রায় ১১৫৯ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হেমন্ত সেন ছিলেন রাজবংশের প্রবর্তক।

---

📝 ৩৫. বল্লাল সেন ‘কুলীন প্রথা’ চালু করেন কেন?
✅ উত্তর: সমাজে ব্রাহ্মণ্য শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বল্লাল সেন ‘কুলীন প্রথা’ প্রবর্তন করেন। এর মাধ্যমে বর্ণভেদ আরও কঠোর হয়। এটি ছিল তাঁর সামাজিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ।

---

📝 ৩৬. ‘দানসাগর’ গ্রন্থটি কী বিষয়ে রচিত?
✅ উত্তর: বল্লাল সেনের রচিত ‘দানসাগর’ একটি ধর্মীয়-আচারবিধি বিষয়ক গ্রন্থ। এতে বিভিন্ন দান প্রথার বিবরণ আছে। এটি মধ্যযুগীয় সমাজধর্ম বোঝার এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

---

📝 ৩৭. বাংলায় মুসলমান আক্রমণের সূচনা কবে ও কার মাধ্যমে ঘটে?
✅ উত্তর: বাংলায় মুসলমান আক্রমণের সূচনা ঘটে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে। তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খিলজি নবদ্বীপ দখল করেন। এর ফলে সেন রাজবংশের পতন হয়।

---

📝 ৩৮. সেন যুগে বাংলার অর্থনীতির অবস্থা কেমন ছিল?
✅ উত্তর: সেন যুগে কৃষি ছিল অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। জমিদার ও ব্রাহ্মণদের জমি দান ছিল সাধারণ প্রথা। বাণিজ্য কিছুটা সীমিত হলেও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য চলত।

---

📝 ৩৯. সেন যুগে নারীর অবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
✅ উত্তর: সেন যুগে নারীর অবস্থান ছিল নিম্ন ও গৃহবন্দি। কন্যাদান ও সতীত্বপ্রথা জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজে নারী স্বাধীনতার অভাব দেখা যায়।

---

📝 ৪০. সেন যুগে ধর্মজীবনের প্রধান পরিবর্তন কী ছিল?
✅ উত্তর: সেন যুগে হিন্দু ধর্ম, বিশেষত বৈষ্ণব ও শাক্ত ধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। বৌদ্ধ ধর্ম প্রায় বিলুপ্ত হয়। মন্দির ও দেবপূজার প্রচলন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

---

📝 ৪১. সেন যুগের সাহিত্যজীবনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কোনটি?
✅ উত্তর: সেন যুগের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য নিদর্শন হলো জয়দেবের “গীতগোবিন্দ”। এটি একটি সংস্কৃত পদ্যনাট্য, যেখানে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমভক্তি চিত্রিত হয়েছে। লক্ষ্মণ সেন জয়দেবকে পৃষ্ঠপোষকতা দেন।

---

📝 ৪২. সেন যুগে প্রশাসনের কাঠামো কেমন ছিল?
✅ উত্তর: সেন যুগে রাজা ছিলেন সর্বময় শাসক। রাজ্য বিভক্ত ছিল ভুক্তি, মণ্ডল, ও গ্রাম এককগুলোতে। স্থানীয় শাসনে রাজকর্মচারী ও রাজস্ব সংগ্রাহকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

---

📝 ৪৩. বল্লাল সেনের শাসনধারার বিশেষত্ব কী ছিল?
✅ উত্তর: বল্লাল সেন কঠোর ধর্মনিষ্ঠ ও রক্ষণশীল শাসক ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ্য শৃঙ্খলা জোরদার করেন এবং সমাজে আচারনিষ্ঠা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনে হিন্দুধর্ম পুনরুজ্জীবিত হয়।

---

📝 ৪৪. সেন রাজবংশের পতনের প্রধান কারণ কী ছিল?
✅ উত্তর: সেন রাজবংশের পতনের প্রধান কারণ ছিল রাজবংশীয় দুর্বলতা ও তুর্কি আক্রমণ। লক্ষ্মণ সেন বৃদ্ধ ও অক্ষম ছিলেন। বখতিয়ার খিলজির আকস্মিক আক্রমণে সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়।

---

📝 ৪৫. বাংলার ইতিহাসে সেন যুগের গুরুত্ব কীভাবে নিরূপণ করা যায়?
✅ উত্তর: সেন যুগ ছিল পাল যুগের পর হিন্দু পুনরুজ্জীবনের যুগ। সমাজ, ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসে। মুসলমান শাসনের পূর্বে এটি ছিল বাংলার শেষ স্বর্ণযুগ।

---

📝 ৪৫. প্রতিহার শব্দের অর্থ কী?
✅ উত্তর: ‘প্রতিহার’ শব্দের অর্থ হল রক্ষাকারী বা প্রতিরোধকারী। এই রাজবংশ মূলত আরব আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বিখ্যাত। তাই এদের নাম হয় প্রতিহার রাজবংশ।

---

📝 ৪৬. প্রতিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
✅ উত্তর: প্রতিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাগভট্ট প্রথম। তিনি প্রায় অষ্টম শতকে রাজপুতানার অঞ্চলে ক্ষমতায় আসেন। আরব আক্রমণ প্রতিহত করে খ্যাতি অর্জন করেন।

---

📝 ৪৭. আরব আক্রমণ প্রতিহত করে প্রতিহাররা কী প্রমাণ করেন?
✅ উত্তর: আরব আক্রমণ প্রতিহত করে প্রতিহাররা ভারতের স্বাধীনতা ও সামরিক শক্তি প্রদর্শন করেন। তারা রাজপুত রাজাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ফলে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা বজায় থাকে।

---

📝 ৪৮. প্রতিহার যুগে রাজধানী কোথায় ছিল?
✅ উত্তর: প্রতিহার যুগের রাজধানী ছিল কান্যকুব্জ (কানৌজ)। এটি ছিল তখনকার ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখান থেকেই উত্তর ভারতের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো।

---

📝 ৪৯. বাংলার সঙ্গে প্রতিহারদের সংঘর্ষ কেন হয়েছিল?
✅ উত্তর: বাংলার পাল রাজবংশ ও প্রতিহারদের মধ্যে কান্যকুব্জ দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়। উভয় রাজবংশই উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব চেয়েছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘদিন স্থায়ী ছিল।

---

📝 ৫০. প্রতিহার রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কে ছিলেন?
✅ উত্তর: প্রতিহার রাজাদের মধ্যে মিহিরভোজ ছিলেন সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে ও প্রশাসনিক দক্ষতায় খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর শাসনে প্রতিহার রাজ্য সর্বোচ্চ উন্নতি লাভ করে।

---

📝 ৫১. প্রতিহারদের ধর্মনীতি কেমন ছিল?
✅ উত্তর: প্রতিহাররা ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বী শাসক। তারা মন্দির নির্মাণে ও ধর্মীয় অনুশাসনে পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন। তবুও অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহিষ্ণুতা বজায় রাখতেন।

---

📝 ৫২. প্রতিহার যুগে সমাজের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
✅ উত্তর: প্রতিহার যুগে সমাজ ছিল বর্ণনির্ভর ও ব্রাহ্মণ্য প্রভাবিত। বর্ণভেদ ও আচারনীতি ছিল কঠোর। নারীরা গৃহকেন্দ্রিক জীবনে সীমাবদ্ধ ছিলেন।

---

📝 ৫৩. প্রতিহার যুগে শিল্পকলার উন্নতির দৃষ্টান্ত কী?
✅ উত্তর: প্রতিহার যুগে মন্দির স্থাপত্য ও মূর্তিশিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। গ্বালিয়র, খাজুরাহো, কনৌজ অঞ্চলে বহু মন্দির গড়ে ওঠে। শিলালিপি ও খোদাই শিল্পে সূক্ষ্ম সৌন্দর্য দেখা যায়।

---

📝 ৫৪. প্রতিহার সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কী ছিল?
✅ উত্তর: প্রতিহার সাম্রাজ্যের পতন ঘটে রাজবংশীয় দ্বন্দ্ব ও পাল ও রাষ্ট্রকূটদের আক্রমণের ফলে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যায়। অবশেষে রাজ্যটি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়।

---

📝 ৫৫. ভারতের ইতিহাসে প্রতিহারদের গুরুত্ব কীভাবে নিরূপণ করা যায়?
✅ উত্তর: প্রতিহাররা ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য ও স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাঁরা আরবদের অগ্রযাত্রা রোধ করে পশ্চিম ভারতের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। শিল্প, সাহিত্য ও প্রশাসনে তাঁদের অবদানও উল্লেখযোগ্য।

---

📝 ৫৫. রাজপুত শব্দের অর্থ কী?
✅ উত্তর: ‘রাজপুত’ শব্দটি সংস্কৃত ‘রাজপুত্র’ শব্দের বিকৃত রূপ। এর অর্থ রাজপুত্র বা রাজবংশজাত ব্যক্তি। মধ্যযুগে এরা ছিল এক শ্রেণির যোদ্ধা জাতি।

---

📝 ৫৬. রাজপুত জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে প্রধান মত কী?
✅ উত্তর: রাজপুতদের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি প্রধান মত আছে— বিদেশি ও দেশি মত। দেশি মতে রাজপুতরা ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত। বিদেশি মতে, তারা শক, হূণ ও কুষাণ জাতির উত্তরসূরি।

---

📝 ৫৭. রাজপুতদের ‘অগ্নিকুল’ তত্ত্ব কী?
✅ উত্তর: ‘অগ্নিকুল’ তত্ত্ব অনুযায়ী রাজপুতরা অগ্নিকুণ্ড থেকে জন্মগ্রহণ করেন। এই কাহিনির সঙ্গে রাজপুত বংশগুলির পৌরাণিক মর্যাদা যুক্ত হয়েছে। এটি রাজপুতদের ঐতিহ্যিক অহংকারের প্রতীক।

---

📝 ৫৮. রাজপুতদের প্রধান চারটি অগ্নিকুল বংশের নাম লেখো।
✅ উত্তর: প্রধান চারটি অগ্নিকুল বংশ হল— প্রতিহার, পরমার, চৌহান ও সোলাঙ্কি। এদের প্রত্যেকে মধ্যযুগে পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির রক্ষক ছিলেন।

---

📝 ৫৯. রাজপুতদের মধ্যে যুদ্ধবীরতার প্রমাণ কোথায় পাওয়া যায়?
✅ উত্তর: রাজপুতদের যুদ্ধবীরতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের নানা যুদ্ধ ও আত্মবলিদানের ইতিহাসে। যেমন, চিত্তৌরের রাণা প্রতাপ সিংহ বা প্রথা ‘জহর’। এই মনোবলই তাদের জাতীয় গৌরবের পরিচয়।

---

📝 ৬০. রাজপুতদের ধর্মীয় মনোভাব কেমন ছিল?
✅ উত্তর: রাজপুতরা হিন্দু ধর্মে গভীরভাবে অনুরাগী ছিলেন। তারা শিব, বিষ্ণু ও শক্তির উপাসনা করতেন। রাজপুত যুগে বহু মন্দির নির্মিত হয়েছিল।

---

📝 ৬১. রাজপুতদের সমাজব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
✅ উত্তর: রাজপুত সমাজ ছিল পুরুষতান্ত্রিক ও সামরিক চরিত্রের। বীরত্ব, আনুগত্য ও সম্মান ছিল তাদের সমাজের মূল মূল্যবোধ। নারীরা ‘সতী’ প্রথা দ্বারা সমাজে বিশেষ মর্যাদা পেতেন।

---

📝 ৬২. রাজপুতদের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণ কী ছিল?
✅ উত্তর: রাজপুতদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও ক্ষুদ্র রাজ্যব্যবস্থা ছিল তাদের প্রধান দুর্বলতা। ঐক্যের অভাবে তারা মুসলিম আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারেননি। এর ফলেই দিল্লি সালতানতের উত্থান ঘটে।

---

📝 ৬৩. রাজপুত সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
✅ উত্তর: রাজপুত সংস্কৃতি ছিল বীরত্ব, ধর্মনিষ্ঠা ও সৌন্দর্যবোধে পূর্ণ। তারা স্থাপত্য, সাহিত্য ও সংগীতে গভীর রুচির পরিচয় দিয়েছিলেন। রাজপুত চিত্রকলাও তাদের সাংস্কৃতিক কৃতিত্বের নিদর্শন।

---

📝 ৬৪. রাজপুত জাতির উৎকর্ষ কোন সময়ে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়?
✅ উত্তর: রাজপুত জাতির উৎকর্ষ ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। এ সময় তাদের বহু স্বাধীন রাজ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলিম আক্রমণে তাদের পতন ঘটে।

---