✍️সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-২):
📝 1. ‘দাস ক্যাপিটাল' গ্রন্থটি কে, কত খ্রিস্টাব্দে লিখেছেন?
✅ উত্তর: কার্ল মার্কস ‘দাস ক্যাপিটাল’ গ্রন্থটি রচনা করেন। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে। এই গ্রন্থে পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
📝 2. উড়ন্ত মাকু কে, কত খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কার করেন?
✅ উত্তর: জন কে ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে উড়ন্ত মাকু (Flying Shuttle) আবিষ্কার করেন। এটি বুননের কাজকে দ্রুততর করে তোলে।
📝 3. শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজে কটি শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছিল ও কী কী?
✅ উত্তর: শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজে দুটি শ্রেণির সৃষ্টি হয়— পুঁজিপতি শ্রেণি (Bourgeoisie) এবং শ্রমিক শ্রেণি (Proletariat)। এই শ্রেণি বিভাজন সমাজে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
📝 4. সুয়েজ খাল কোন্ দুটি সাগরকে সংযুক্ত করে রেখেছে?
✅ উত্তর: সুয়েজ খাল ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করে রেখেছে। এটি ইউরোপ-এশিয়ার বাণিজ্যপথকে সংক্ষিপ্ত করেছে।
📝 5. কত খ্রিস্টাব্দ থেকে কত খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ইউরোপে সাম্রাজ্যবাদের যুগ হিসেবে চিহ্নিত?
✅ উত্তর: ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ইউরোপে সাম্রাজ্যবাদের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সময়ে ইউরোপীয় দেশগুলি উপনিবেশ বিস্তারে ব্যস্ত ছিল।
📝 6. কার আমলে রাশিয়াতে কত খ্রিস্টাব্দ থেকে কত খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৪০০টি কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল?
✅ উত্তর: জার আলেক্সজান্ডার প্রথমের আমলে, ১৮০০ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ৪০০টি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এটি ভূমিদাস প্রথার বিরুদ্ধে কৃষকদের অসন্তোষের ফল।
📝 7. NEP বা New Economic Policy কাকে বলে?
✅ উত্তর: ১৯২১ সালে ভ্লাদিমির লেনিন NEP ঘোষণা করেন। এটি ছিল সমাজতন্ত্রের পথে অর্থনৈতিক স্থিতি আনতে কৃষি ও ছোট ব্যবসায় ব্যক্তিগত মালিকানা অনুমোদনের একটি সাময়িক ব্যবস্থা।
📝 8. কোন্ ঘটনাকে, কেন ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া’ বলা হয়?
✅ উত্তর: স্পেনের গৃহযুদ্ধ (১৯৩৬-৩৯) কে ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া’ বলা হয়। কারণ জার্মানি ও ইটালি ফ্র্যাঙ্কোর পক্ষে, আর সোভিয়েত ইউনিয়ন বিপক্ষের পক্ষে হস্তক্ষেপ করে।
📝 9. তুরস্ককে কেন ‘ইউরোপের রুগ্ণ মানুষ’ বলা হয়?
✅ উত্তর: অটোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে ১৯শ শতকে তুরস্ককে 'ইউরোপের রুগ্ণ মানুষ' বলা হত। সাম্রাজ্যটি ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়ছিল।
📝 10. জুলাই রাজতন্ত্র কাকে বলে?
✅ উত্তর: ১৮৩০ সালে ফ্রান্সে চালু হওয়া লুই ফিলিপের শাসনকে জুলাই রাজতন্ত্র বলা হয়। এটি ছিল সংবিধানগত রাজতন্ত্র, যা চার্টার অব ১৮৩০ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
📝 11. কে, কবে রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তি দেন?
✅ উত্তর: জার আলেক্সজান্ডার দ্বিতীয় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তি দেন। এটি ছিল রাশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংস্কার।
📝 12. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন চিনে উন্মুক্ত দ্বার নীতি ঘোষণা করে?
✅ উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের বাজারে সব জাতির জন্য সমান বাণিজ্য অধিকার নিশ্চিত করতে ১৮৯৯ সালে উন্মুক্ত দ্বার নীতি ঘোষণা করে। এটি ছিল উপনিবেশবাদ বিরোধী অর্থনৈতিক কূটনীতি।
📝 13. 'ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট' বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: ১৮৪৮ সালে জার্মান জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা গঠিত একটি গণতান্ত্রিক জাতীয় সংসদ ছিল ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট। এটি জার্মান সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।
📝 14. কে, কত খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করেন?
✅ উত্তর: জার আলেক্সজান্ডার দ্বিতীয় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথা বাতিল করেন। এটি রাশিয়ার সামাজিক ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
📝 15. জার শাসিত রাশিয়ায় কোন্ কোন্ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করত?
✅ উত্তর: রাশিয়ায় রুশ ছাড়াও ইউক্রেনীয়, লাটভিয়ান, লিথুয়ানিয়ান, ইহুদি, আর্মেনীয়, ফিনিশ প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করত। এরা অনেকেই ছিল শোষণের শিকার।
📝 16. কে, কবে কার্লসবাড ডিক্রি প্রবর্তন করেন?
✅ উত্তর: অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর মেটারনিখ ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কার্লসবাড ডিক্রি প্রবর্তন করেন। এর মাধ্যমে তিনি জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয় ও সংবাদপত্রে জাতীয়তাবাদী ভাবনাকে দমন করতে চেয়েছিলেন।
📝 17. প্রমবিয়ার্সের চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
✅ উত্তর: প্রমবিয়ার্সের চুক্তি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে সার্দিনির ক্যাভার এবং ফ্রান্সের নেপোলিয়ন তৃতীয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এতে ফ্রান্স সার্দিনিকে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সাহায্য করতে সম্মত হয়।
📝 18. কত খ্রিস্টাব্দে, কে ঐক্যবদ্ধ ইতালির রাজা হন?
✅ উত্তর: ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ভিক্টর ইমানুয়েল দ্বিতীয় ঐক্যবদ্ধ ইতালির প্রথম রাজা হন। এটি ইতালির জাতীয় ঐক্যের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
📝 19. বাণিজ্যিক মূলধন কী?
✅ উত্তর: বাণিজ্যিক মূলধন হলো সেই পুঁজি, যা শিল্প বিপ্লবের পূর্বে প্রধানত আমদানি-রপ্তানি এবং ব্যবসায় ব্যবহৃত হতো। এটি আধুনিক পুঁজিবাদের ভিত্তি স্থাপন করে।
📝 20. কার আমলে, কত খ্রিস্টাব্দে ভারতে রেলপথ নির্মাণ শুরু হয়?
✅ উত্তর: লর্ড ডালহৌসির আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে রেলপথ নির্মাণ শুরু হয়। প্রথম রেলপথটি ছিল বোম্বে থেকে থান পর্যন্ত।
📝 21. কে, কত খ্রিস্টাব্দে উন্মুক্ত দ্বার নীতি ঘোষণা করেন?
✅ উত্তর: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন হে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে উন্মুক্ত দ্বার নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল চিনে সব দেশের জন্য সমান বাণিজ্যিক সুযোগ নিশ্চিত করা।
📝 22. কাদের নেতৃত্বে রাশিয়ায় অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়?
✅ উত্তর: কেরেনস্কির নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। এতে জার শাসনের অবসান ঘটে।
📝 23. কোন গ্রন্থটিকে নাৎসি বাইবেল বলা হয়?
✅ উত্তর: অ্যাডলফ হিটলারের রচিত “মাইন কাম্পফ” (Mein Kampf) গ্রন্থটিকে নাৎসি বাইবেল বলা হয়। এতে হিটলারের জাতীয়তাবাদী ও জাতিবিদ্বেষী মতাদর্শ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
📝 24. পুরাতনতন্ত্র কী?
✅ উত্তর: পুরাতনতন্ত্র বলতে বোঝায় রাজতন্ত্র, জমিদারি এবং গির্জা কেন্দ্রিক সামাজিক-রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা। এটি ফরাসি বিপ্লবের পর এক প্রতিক্রিয়াশীল ধারা হিসেবে ফিরে এসেছিল।
📝 25. বিপ্লব প্রসূত মতাদর্শ কী?
✅ উত্তর: স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও গণতন্ত্র—এই চারটি মূল ধারণা বিপ্লব প্রসূত মতাদর্শ। ফরাসি বিপ্লব থেকেই এই ধারণাগুলির উদ্ভব ঘটে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
📝 26. জাতীয়তাবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
✅ উত্তর: 1.জাতীয়তাবাদ নিজ জাতির স্বার্থ ও গৌরব রক্ষার চেষ্টা করে।
2.উগ্র জাতীয়তাবাদ অন্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও আগ্রাসন সৃষ্টি করে।
📝 27. বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।
✅ উত্তর: 1.ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে দমন করে।
2.রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি প্রায়শই উৎপাদনে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে।
📝 28. ‘নারদনিক’ আন্দোলন কী?
✅ উত্তর: ১৯শ শতকের রাশিয়ায় শিক্ষিত তরুণরা গ্রামে গিয়ে কৃষকদের মধ্যে সমাজতন্ত্র প্রচারের জন্য যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাকেই নারদনিক আন্দোলন বলে। এটি ছিল জারতন্ত্রবিরোধী এক প্রগতিশীল প্রচেষ্টা।
📝 29. ফ্যাসিবাদের মূল লক্ষ্য কী ছিল?
✅ উত্তর: ফ্যাসিবাদের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রকে সর্বশক্তিমান করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করা। জাতীয়তাবাদ ও আগ্রাসন এর মূল চালিকাশক্তি ছিল।
📝 30. রাশিয়ায় কেন বিলম্বে শিল্পায়ন শুরু হয়?
✅ উত্তর: রাশিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কৃষিপ্রধান অর্থনীতি শিল্পায়নে বিলম্ব ঘটায়। তাছাড়া জারতান্ত্রিক শাসনের রক্ষণশীলতা শিল্পোন্নয়নের পথে বাধা ছিল।
📝 31. শিল্পবিপ্লব কেন সমাজবাদের জন্ম দিয়েছিল?
✅ উত্তর: শিল্পবিপ্লবের ফলে ধনী-গরিবের ব্যবধান বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমিকদের শোষণ বৃদ্ধি পায়। এই বৈষম্য ঘোচাতে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের উদ্ভব ঘটে।
📝 32. 'এপ্রিল থিসিস'-এর মূল বক্তব্য কী ছিল?
✅ উত্তর: লেনিনের ‘এপ্রিল থিসিস’-এ রাশিয়ায় শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটানোর আহ্বান জানানো হয়। এতে “সমস্ত ক্ষমতা শ্রমিকদের হাতে”—এই মূল স্লোগান তুলে ধরা হয়।
📝 33. New Economic Policy বা নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় কী বলা হয়েছিল?
✅ উত্তর: এই নীতিতে বেসরকারি ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষিকে কিছুটা স্বাধীনতা দেওয়া হয়। লেনিন এই নীতির মাধ্যমে সোভিয়েত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিলেন।
📝 34. ফ্যাসিবাদ কী?
✅ উত্তর: ফ্যাসিবাদ হলো একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে রাষ্ট্রের স্বার্থকে সবার উপরে রাখা হয়। এটি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী মতবাদ।
📝 35. ট্রুম্যান নীতি কী?
✅ উত্তর: ১৯৪৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ‘ট্রুম্যান নীতি’ ঘোষণা করেন। এই নীতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিজমের বিস্তার রোধে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
📝 36. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষে যোগ দেয়?
✅ উত্তর: ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে জাপানের আকস্মিক আক্রমণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রপক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। এছাড়া হিটলার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাও একটি উদ্দেশ্য ছিল।
📝 37. ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত শক্তিসাম্য নীতির মূল অর্থ কী ছিল?
✅ উত্তর: ইউরোপে কোনও একটি শক্তি যেন অত্যন্ত প্রভাবশালী না হয়ে ওঠে, সেটাই ছিল শক্তিসাম্য নীতির মূল কথা। এতে জাতিগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হতো।
📝 38. গ্যারিবল্ডি ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?
✅ উত্তর: ইতালির জাতীয় ঐক্যের জন্য গ্যারিবল্ডির ভূমিকা ছিল অসামান্য। ‘রেড শার্ট বাহিনী’ গঠন করে তিনি দক্ষিণ ইতালি দখল করে একতা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন।
📝 39. ‘শিল্পবিপ্লব' বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: শিল্পবিপ্লব হলো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যন্ত্রের ব্যবহার ও প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ধারা। এটি প্রথম ঘটে ইংল্যান্ডে ১৮শ শতকে।
📝 40. ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ ও ‘ত্রিশক্তি আঁতাত’ কোন্ কোন্ দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
✅ উত্তর:
-
ত্রিশক্তি মৈত্রী: ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া।
-
ত্রিশক্তি আঁতাত: জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ও ইতালি।
📝 41. NEP বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: NEP বা New Economic Policy ছিল লেনিন প্রবর্তিত একটি অর্থনৈতিক নীতি। এতে বাজার অর্থনীতি ও বেসরকারি উদ্যোগ সীমিত আকারে অনুমোদিত হয়।
📝 42. মহামন্দা কত খ্রিস্টাব্দে এবং কেন হয়ে ছিল?
✅ উত্তর: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শেয়ারবাজার ধসে মহামন্দার সূচনা হয়। অতিরিক্ত উৎপাদন, ব্যয়বহুল ঋণ এবং বিনিয়োগে ধ্বস এই সংকটের কারণ।
📝 43. ‘মেটারনিখ্ পদ্ধতি' বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: মেটারনিখ পদ্ধতি ছিল ইউরোপে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জাতীয়তাবাদী ও উদারতাবাদী ভাবনার দমন নীতি। এটি ভিয়েনা কংগ্রেসে গৃহীত হয়েছিল।
📝 44. কার নেতৃত্বে, কোন্ দল সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে?
✅ উত্তর: লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক দল রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তারা ১৯১৭ সালের অক্টোবরে সফল বিপ্লব ঘটায়।
📝 45. কে, কোন্ উদ্দেশ্যে ‘চোদ্দো দফা নীতি’ ঘোষণা করেন?
✅ উত্তর: মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ‘চোদ্দো দফা নীতি’ ঘোষণা করেন।
📝 46. হুভার মোরাটোরিয়াম কী?
✅ উত্তর: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুভার ১৯৩১ সালে আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ এক বছর স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেন। এই নীতিই হুভার মোরাটোরিয়াম নামে পরিচিত।
📝 47. 'Big Four' বলতে কাদের বোঝায়?
✅ উত্তর: Big Four বলতে বোঝানো হয়—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি। এরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
📝 48. জুলাই রাজতন্ত্র বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের পর লুই ফিলিপকে রাজা করে ফ্রান্সে যে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র স্থাপিত হয় তাকে জুলাই রাজতন্ত্র বলা হয়।
📝 49. ভূমিদাসদের মুক্তির সনদ কে, কবে ঘোষণা করেন?
✅ উত্তর: রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ সালে ভূমিদাসদের মুক্তির সনদ ঘোষণা করেন।
📝 50. ভারতকে ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন' কেন বলা হত?
✅ উত্তর: ভারতের বিপুল সম্পদ, জনসংখ্যা ও কাঁচামাল সরবরাহের জন্যই ব্রিটিশরা ভারতকে তাদের সাম্রাজ্যের ‘উজ্জ্বল রত্ন’ বলে অভিহিত করত।
📝 51. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইউরোপে যে দুটি পরস্পর-বিরোধী শিবির গড়ে উঠেছিল সেই দুটি কী কী?
✅ উত্তর: 1.ত্রিপক্ষীয় আঁতাত (Triple Alliance) — জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ও ইতালি।
2.ত্রিপাক্ষিক মৈত্রী (Triple Entente) — ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া।
📝 52. ‘বিজেতার বিজেতা' কাকে, কেন বলা হয়?
✅ উত্তর: ভিয়েনা কংগ্রেসে অস্ট্রিয়ার প্রতিনিধি মেটারনিখকে “বিজেতার বিজেতা” বলা হয়। কারণ তিনি নেপোলিয়নের পরাজয়ের পর ইউরোপের রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
📝 53. ‘কার্লসবাড ডিক্রি' কী?
✅ উত্তর: ১৮১৯ সালে মেটারনিখ কার্লসবাড শহরে এক সভায় সংবাদপত্র ও শিক্ষাক্ষেত্রে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা “কার্লসবাড ডিক্রি” নামে পরিচিত।
📝 54. “নিহিলিস্ট আন্দোলন” বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: রাশিয়ায় ১৯শ শতকে উদ্ভূত এক প্রগতিশীল আন্দোলন যা সমাজে বিদ্যমান সব মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে চেয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন সমাজব্যবস্থা গঠন।
📝 55. ‘কুন্টুর ক্যাম্ফ' বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: “কুন্টুর ক্যাম্ফ” (Mein Kampf) ছিল অ্যাডলফ হিটলারের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। এতে নাৎসি মতবাদ, ইহুদি-বিদ্বেষ এবং জার্মান জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে।
📝 56. ‘লুডাইট দাঙ্গা' বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: ১৮১১–১৮১৭ সালে ইংল্যান্ডে শ্রমিকরা যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, কারণ তারা যন্ত্রকে নিজেদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে বলে মনে করত। এই আন্দোলনকে লুডাইট দাঙ্গা বলা হয়।
📝 57. ‘তিয়েনসিনের সন্ধি' কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
✅ উত্তর: ১৮৫৮ সালে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চীনের মধ্যে ‘তিয়েনসিনের সন্ধি’ স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির ফলে চীনকে পশ্চিমা শক্তির দাবি মেনে নিতে হয়।
📝 58. ‘ত্রিশক্তি চুক্তি' কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ?
✅ উত্তর: ১৯৪০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জার্মানি, ইতালি ও জাপানের মধ্যে ত্রিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে।
📝 59. ‘মেক্সিকো টেলিগ্রাম' কী ?
✅ উত্তর: ১৯১৭ সালে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী জিমারম্যান মেক্সিকোকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার প্রস্তাব দেন। এই গোপন বার্তাটি ‘মেক্সিকো টেলিগ্রাম’ নামে পরিচিত।
📝 60. জাতিসংঘ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন কবে বসে?
✅ উত্তর: জাতিসংঘ ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম সাধারণ অধিবেশন বসে ১৯৪৬ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডনে।
📝 61. ভাইমার প্রজাতন্ত্র কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে ছিলেন?
✅ উত্তর: জার্মানিতে ১৯১৯ সালে ভাইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রেডারিখ এবার্ট।
📝 62. ঘেটো কী?
✅ উত্তর: ঘেটো হলো বিশেষভাবে নির্ধারিত এলাকা যেখানে ইহুদিদের জোরপূর্বক বসবাস করতে বাধ্য করা হতো। হিটলারের শাসনকালে জার্মানিতে এটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়।
📝 63. ফ্যাক্টরি প্রথা কী ?
✅ উত্তর: শিল্পবিপ্লবের সময় শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে কাজ করানোর জন্য যে নিয়মবদ্ধ উৎপাদন পদ্ধতি চালু হয়, তাকেই ফ্যাক্টরি প্রথা বলে।
📝 64. রাশিয়ার কোন্ জার, কবে ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটান ?
✅ উত্তর: জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ১৮৬১ সালে রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটান।
📝 65. কবে, কোন্ ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ?
✅ উত্তর: ১৯১৪ সালের ২৮ জুন সারায়েভোতে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ আর্চডিউক ফার্দিনান্ডকে হত্যার মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
📝 66. মহামন্দার একটি কারণ লেখো।
✅ উত্তর: অতিরিক্ত উৎপাদন এবং বিনিয়োগের ধ্বস মহামন্দার প্রধান কারণ ছিল। ১৯২৯ সালে মার্কিন শেয়ার বাজার ধ্বসে এই সংকট শুরু হয়।
📝 67. ‘কুলাক’ কাদের বলা হত ?
✅ উত্তর: রাশিয়ায় ধনী কৃষকদের ‘কুলাক’ বলা হত। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর এদের ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
📝 68. ভিয়েনা সম্মেলনের (1815 খ্রিস্টাব্দে) 'Big Four' বা চারটি প্রধান রাষ্ট্রের নাম লেখো।
✅ উত্তর: অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও প্রুশিয়া ছিল ভিয়েনা সম্মেলনের চারটি প্রধান রাষ্ট্র।
📝 69. বিসমার্কের 'রক্ত ও লৌহ নীতি' কী ?
✅ উত্তর: জার্মান ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তি ও সামরিক পন্থা অবলম্বনের নীতিকে বিসমার্ক ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’ বলেন।
📝 70. 'বাণিজ্যিক মূলধন' ও 'শিল্প মূলধন' কাকে বলে ?
✅ উত্তর: বাণিজ্যিক মূলধন অর্থ এমন মূলধন যা বাণিজ্যের মাধ্যমে লাভ অর্জনে ব্যবহৃত হয়। শিল্প মূলধন বলতে উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত মূলধনকে বোঝায়।
📝 71. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কী?
✅ উত্তর: সারায়েভোতে অস্ট্রো-হাঙ্গেরির যুবরাজ ফার্দিনান্ড হত্যাই ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ।
📝 72. 'রক্তাক্ত রবিবার' (Bloody Sunday) কী ?
✅ উত্তর: ১৯০৫ সালের জানুয়ারি মাসে রাশিয়ায় শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি নিয়ে জারের দরবারে গেলে সেনাবাহিনী গুলি চালায়। এতে বহু শ্রমিক নিহত হয়।
📝 73. 'অক্টোবর ইস্তাহার' (October Manifesto) কী ?
✅ উত্তর: ১৯০৫ সালে রুশ জার দ্বিতীয় নিকোলাস গণবিক্ষোভের চাপে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে সংবিধান, সংসদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল।
📝 74. ফ্যাক্টরি প্রথা বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: ফ্যাক্টরি প্রথা হল একটি নির্দিষ্ট স্থানে যন্ত্রের সাহায্যে বহু শ্রমিক দ্বারা উৎপাদনের প্রথা। এটি শিল্পবিপ্লবের সময় শুরু হয়। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সাশ্রয়ী হয়।
📝 75. মুক্তদ্বার নীতি কী?
✅ উত্তর: মুক্তদ্বার নীতি (Open Door Policy) ছিল একটি আমেরিকান কূটনৈতিক নীতি, যা চীনের বাজারে সব দেশের জন্য সমান সুযোগের দাবি করে। ১৮৯৯ সালে জন হে এটি প্রস্তাব করেন। এটি চীনে উপনিবেশ স্থাপনের বিরুদ্ধে ছিল।
📝 76. ‘হেরেনফোক তত্ত্ব’ কী?
✅ উত্তর: ‘হেরেনফোক’ তত্ত্ব হল নাৎসি জার্মানির একটি জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারণা। এটি বলে জার্মান জাতি শ্রেষ্ঠ, আর অন্যরা তাদের অধীন। হিটলারের এই তত্ত্ব ইহুদী ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি নিপীড়ন ন্যায়সঙ্গত করেছিল।
📝 77. রুশীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: রুশীকরণ নীতি (Russification) ছিল রাশিয়ার জারশাসনের অধীনে বসবাসকারী অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে রুশ সংস্কৃতি ও ভাষা গ্রহণে বাধ্য করার প্রচেষ্টা। এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতি ধ্বংস হতে থাকে। এটি জারের একতান্ত্রিক শাসন জোরদারে সহায়ক হয়।
📝 78. শ্বেত অভিযান কী?
✅ উত্তর: শ্বেত অভিযান ছিল বলশেভিক বিরোধী ‘হোয়াইট আর্মি’র দ্বারা পরিচালিত গৃহযুদ্ধ (1918-1921)। তারা রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব রুখতে চেয়েছিল। এই আন্দোলন শেষে লাল ফৌজ বা রেড আর্মি বিজয়ী হয়।
📝 79. কার নেতৃত্বে কত খ্রিস্টাব্দে ট্রপোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়?
✅ উত্তর: ট্রপোর বৈঠক (Troppau Conference) অনুষ্ঠিত হয় ১৮২০ সালে অস্ট্রিয়ার মেটারনিখের নেতৃত্বে। এই বৈঠকে রাজতন্ত্র রক্ষায় হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি ইউরোপে অভিজাত শাসকদের একতা প্রকাশ করে।
📝 80. কোন দুটি প্রদেশকে কেন্দ্র করে প্রাশিয়া ও ডেনমার্কের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল?
✅ উত্তর: শ্লেসভিগ ও হলস্টিন প্রদেশকে কেন্দ্র করে প্রাশিয়া ও ডেনমার্কের মধ্যে ১৮৬৪ সালে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের ফলে প্রাশিয়া এই অঞ্চলগুলি দখল করে। এটি জার্মান ঐক্য গঠনের প্রাথমিক ধাপ।
📝 81. ত্রিশক্তি আঁতাত কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
✅ উত্তর: ১৯৪০ সালে জার্মানি, ইতালি ও জাপানের মধ্যে ত্রিশক্তি আঁতাত স্বাক্ষরিত হয়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একত্রে সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তার চুক্তি ছিল। এই চুক্তি অক্ষশক্তির গঠনকে চিহ্নিত করে।
📝 82. রুশীকরণ নীতি কী?
✅ উত্তর: রুশীকরণ নীতি ছিল রাশিয়ার অধীন অন্যান্য জাতিকে রুশ ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি গ্রহণে বাধ্য করার নীতি। এর মাধ্যমে স্থানীয় জাতিসত্তা দমন করা হত। এটি জারের সাম্রাজ্য বিস্তারে সহায়ক ছিল।
📝 83. ভিয়েনা সম্মেলনে কয়টি নীতি গৃহীত হয় ও কী কী?
✅ উত্তর: ভিয়েনা সম্মেলনে তিনটি প্রধান নীতি গৃহীত হয়— শক্তিসাম্য, বৈধ অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও রক্ষণশীলতা। এগুলি রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিপ্লব দমন করতে সহায়তা করেছিল। মেটারনিখ ছিলেন এই নীতির মূল রূপকার।
📝 84. রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: এটি ছিল ওটো ভন বিসমার্কের শক্তি ও যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মান ঐক্য সাধনের কৌশল। আলোচনার চেয়ে অস্ত্র ও শক্তিকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিতেন। এই নীতির মাধ্যমেই জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হয়।
📝 85. সুয়েজ খাল খননের পরিকল্পনা কে, কবে করেছিলেন?
✅ উত্তর: ফ্রান্সের ইঞ্জিনিয়ার ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস ১৮৫৯ সালে সুয়েজ খাল খননের পরিকল্পনা করেন। এটি ১৮৬৯ সালে সম্পূর্ণ হয়। খালটি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে নৌপথকে সংক্ষিপ্ত করে তোলে।
📝 86. ত্রিশক্তি মৈত্রী ও ত্রিশক্তি আঁতাত – কোন কোন দেশগুলির মধ্যে গড়ে উঠেছিল?
✅ উত্তর: ত্রিশক্তি মৈত্রী গড়ে উঠেছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে। ত্রিশক্তি আঁতাত গঠিত হয়েছিল জার্মানি, ইতালি ও জাপানের মধ্যে। দুটি জোটই ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ।
📝 87. বলকান লিগ কাদের নিয়ে গঠিত হয়?
✅ উত্তর: বলকান লিগ গঠিত হয় সার্বিয়া, মন্টেনেগ্রো, গ্রিস এবং বুলগেরিয়া নিয়ে। এই লিগ ১৯১২ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়। এটি প্রথম বলকান যুদ্ধের সূচনা ঘটায়।
📝 88. জোলভেরাইন কী?
✅ উত্তর: জোলভেরাইন ছিল জার্মান রাজ্যগুলির মধ্যে একটি কাস্টমস ইউনিয়ন বা শুল্ক জোট। এটি ১৮৩৪ সালে প্রাশিয়ার উদ্যোগে গঠিত হয়। এর ফলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে বাধা কমে এবং জার্মান ঐক্য গঠনের পথ সুগম হয়।
📝 89. সর্বশ্লাভবাদ কী?
✅ উত্তর: সর্বশ্লাভবাদ একটি রাজনৈতিক মতবাদ, যা সমস্ত স্লাভ জাতিগুলিকে একত্র করে রাশিয়ার নেতৃত্বে ঐক্য গঠনের কথা বলে। এটি রুশ জাতীয়তাবাদের একটি রূপ। অস্ট্রিয়া ও ওসমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে স্লাভদের ঐক্যের ডাক ছিল এর উদ্দেশ্য।
📝 90. প্যারি কমিউনের উল্লেখযোগ্য কাজগুলি কী কী ছিল?
✅ উত্তর: প্যারি কমিউন ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ, সর্বজনীন শিক্ষা, শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ এবং নারীদের অধিকারে জোর দেয়। এটি ছিল এক ধরনের শ্রমিক সরকারের প্রয়াস। ১৮৭১ সালে মাত্র ৭২ দিন স্থায়ী হলেও এটি সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে।
📝 91. সম্পদসৃষ্টি ও বণ্টনে উন্নত বিশ্ব ও অনুন্নত বিশ্বের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয় কেন?
✅ উত্তর: উন্নত বিশ্বে প্রযুক্তি, পুঁজির প্রাচুর্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণের ফলে তারা বেশি সম্পদ সৃষ্টি করে। কিন্তু অনুন্নত বিশ্ব মূলত কাঁচামাল সরবরাহকারী হওয়ায় তারা কম মুনাফা পায়। ফলে সম্পদের বণ্টনে বৈষম্য তৈরি হয়।
📝 92. ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যের পরিবহণ খরচ কম ছিল কেন?
✅ উত্তর: ইংল্যান্ডে নদী, খাল এবং রেলপথের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক পরিবহণ সহজ ও সস্তা করেছিল। এছাড়া আধুনিক বন্দর ও যান্ত্রিক নৌযান ব্যবহারে খরচ কমে। ফলে ইংল্যান্ড শিল্পবিপ্লবের সময় বাণিজ্যে অগ্রণী হয়।
📝 93. শিল্পবিপ্লবে প্রযুক্তি বিপ্লবের গুরুত্ব কী ছিল?
✅ উত্তর: প্রযুক্তি বিপ্লব নতুন যন্ত্রের উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদনকে দ্রুত ও সাশ্রয়ী করে তোলে। এটি শ্রমনির্ভর পদ্ধতির পরিবর্তে যন্ত্রনির্ভর পদ্ধতি চালু করে। এর ফলে শিল্পবিপ্লবের গতি ও ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে যায়।
📝 94. মুক্তদ্বার নীতি কী?
✅ উত্তর: মুক্তদ্বার নীতি (Open Door Policy) ১৮৯৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব করে। এই নীতির মাধ্যমে চীনে সমস্ত দেশের জন্য সমান বাণিজ্যিক সুযোগ রাখার দাবি জানানো হয়। এটি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে একটি কূটনৈতিক জবাব ছিল।
📝 95. প্লমবিয়ার্সের চুক্তি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
✅ উত্তর: ১৮৫৮ সালে কভুর ও ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের মধ্যে প্লমবিয়ার্সের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স সর্দিনিয়াকে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সাহায্য করতে রাজি হয়। এটি ইতালির ঐক্য আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
📝 96. মুক্তির ঘোষণাপত্র কী?
✅ উত্তর: মুক্তির ঘোষণাপত্র (Emancipation Manifesto) ১৮৬১ সালে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার দ্বারা ঘোষিত হয়। এতে রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এটি রুশ কৃষকদের স্বাধিকার প্রদানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
📝 97. ত্রিশক্তি মৈত্রী কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
✅ উত্তর: ত্রিশক্তি মৈত্রী ১৯০৭ সালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এটি ছিল সামরিক ও কূটনৈতিক জোট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এরা মিত্রপক্ষ হিসাবে যুদ্ধ করে।
📝 98. ত্রিশক্তি আঁতাত কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
✅ উত্তর: ত্রিশক্তি আঁতাত ১৯৪০ সালে জার্মানি, ইতালি ও জাপানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে অক্ষশক্তি গঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এরা একসঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করে।
✍️সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৪):
📝1. জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে বিসমার্কের ভূমিকা আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) বাস্তববাদী নীতি (Realpolitik): বিসমার্ক ছিলেন এক বাস্তববাদী রাষ্ট্রনায়ক যিনি যুদ্ধ ও কূটনীতিকে সমান গুরুত্ব দেন। তাঁর লৌহ ও রক্ত নীতি ঐক্যের জন্য কার্যকর প্রমাণিত হয়।
(ii) অস্ট্রিয়া ও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: তিনি প্রথমে অস্ট্রিয়া ও পরে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে সফল যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে প্রুশিয়া একাধিক রাজ্য অধিকার করে।
(iii) ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধ: ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দক্ষিণ জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৮৭০ সালের এই যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয় হয়।
(iv) জার্মানির একীকরণ: ১৮৭১ সালে বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানির একীকরণ সম্পন্ন হয়। তিনি জার্মান সাম্রাজ্যের প্রথম চ্যান্সেলর হন।
📝2. টীকা লেখো : প্যারি কমিউন।
✅উত্তর:
(i) গঠনের প্রেক্ষাপট: ১৮৭১ সালে ফ্রান্স-প্রুশিয়া যুদ্ধের পর প্যারিসে প্যারি কমিউন গঠিত হয়। এটি ছিল এক প্রগতিশীল শ্রমিক সরকারের প্রতীক।
(ii) গণতান্ত্রিক নীতিমালা: এই সরকার জনগণের অধিকারের পক্ষে আইন প্রণয়ন করে। তারা সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।
(iii) শাসনকাল ও কাজ: ৭২ দিনব্যাপী এই শাসনকালে তারা ধনীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। শ্রমিকদের কাজের সময় নির্ধারণ ও মজুরি নিশ্চিত করা হয়।
(iv) অবসান ও গুরুত্ব: জাতীয় সেনা কঠোরভাবে এই সরকারকে দমন করে। কিন্তু এটি শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়।
📝3. ফ্যাসিস্ট দল ইতালিতে কীভাবে ক্ষমতা দখল করে?
✅উত্তর:
(i) অর্থনৈতিক সংকট: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটে। এই অস্থিরতা ফ্যাসিস্ট দলের উত্থানে সহায়ক হয়।
(ii) মুসোলিনির নেতৃত্ব: মুসোলিনি ১৯১৯ সালে ফ্যাসিস্ট দল গঠন করেন। ‘মার্চ অন রোম’ নামক অভিযানের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
(iii) রাজা ও সেনাবাহিনীর সহায়তা: রাজা ভিক্টর ইমানুয়েল III মুসোলিনিকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এর মাধ্যমে ফ্যাসিস্টরা রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসে।
(iv) একনায়কতন্ত্র কায়েম: মুসোলিনি পরে সংসদ ভেঙে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন। গণতন্ত্র ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
📝4. কী কারণে জার্মানিতে শিল্পায়ন শুরু হয়?
✅উত্তর:
(i) প্রাকৃতিক সম্পদ: জার্মানিতে লৌহ ও কয়লার মতো খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য ছিল। এটি ভারী শিল্প গঠনে সহায়তা করে।
(ii) রাজনৈতিক ঐক্য: ১৮৭১ সালে জার্মান একীকরণের ফলে একটি অভিন্ন বাজার তৈরি হয়। এর ফলে শিল্প স্থাপনে সুবিধা হয়।
(iii) প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: নতুন প্রযুক্তি, রেলপথ ও যন্ত্রপাতি শিল্প সম্প্রসারণে সহায়ক হয়। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
(iv) সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা: সরকার শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেয় ও বিনিয়োগ বাড়ায়। ফলে শিল্পায়ন দ্রুত বিকশিত হয়।
📝5. টীকা লেখো : এমস টেলিগ্রাম।
✅উত্তর:
(i) ঘটনার সূচনা: স্পেনের সিংহাসন প্রশ্নে ফ্রান্স ও প্রুশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফ্রান্স চায়নি প্রুশিয়ান রাজপরিবার স্পেনের সিংহাসনে বসুক।
(ii) বিসমার্কের চাতুরতা: প্রুশিয়ার রাজা একটি কূটনৈতিক সাক্ষাৎ দেন। বিসমার্ক তা বিকৃত করে টেলিগ্রাফ মারফত প্রকাশ করেন।
(iii) ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া: ফ্রান্স অপমানিত বোধ করে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতে ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধ (১৮৭০) শুরু হয়।
(iv) ফলাফল ও প্রভাব: প্রুশিয়া এই যুদ্ধে জয়ী হয় এবং ফ্রান্স পরাজিত হয়। ফলে জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন হয় এবং বিসমার্ক কূটনীতিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
📝6. ভূমিদাস উচ্ছেদ আইনের শর্তগুলো কী কী ছিল?
✅উত্তর:
(i) ব্যক্তিগত স্বাধীনতা: ভূমিদাসরা ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীনতা অর্জন করে। তারা জমিদারের মালিকানার বাইরে যেতে পারে।
(ii) জমির মালিকানা: ভূমিদাসদের জমি কেনার অধিকার দেওয়া হয়। তবে তা পূর্ণাঙ্গ ছিল না এবং অনেক শর্তযুক্ত ছিল।
(iii) সরকারি ক্ষতিপূরণ: জমিদারদের জন্য সরকার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে। ভূমিদাসদের তা শোধ করতে বহু বছর লেগে যায়।
(iv) সীমাবদ্ধ বাস্তবায়ন: এই আইনের প্রয়োগে নানা বাধা ছিল। ফলে বহু ভূমিদাস প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি।
📝7. টীকা লেখো : জোলভেরাইন।
✅উত্তর:
(i) সংজ্ঞা: জোলভেরাইন ছিল একটি কাস্টমস ইউনিয়ন বা শুল্ক-বলয়। এটি প্রথম প্রুশিয়া গঠন করে ১৮৩৪ সালে।
(ii) আর্থিক ঐক্য: এটি জার্মান রাজ্যগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক ঐক্য আনে। অভ্যন্তরীণ শুল্ক তুলে দেওয়া হয়।
(iii) শিল্পোন্নয়নে সাহায্য: এই ব্যবস্থা শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত করে। বাজার সম্প্রসারণ সহজ হয়।
(iv) রাজনৈতিক ঐক্যের পথ: জোলভেরাইন রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তি রচনা করে। বিসমার্ক পরে এই বাণিজ্যিক ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে জার্মান ঐক্য গঠন করেন।
📝8. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ সম্পর্কে আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) সারায়েভোর হত্যাকাণ্ড: ১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়ার রাজপুত্র ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্ড সারায়েভোতে হত্যা হন। এটি যুদ্ধের সূচনাবিন্দু।
(ii) অস্ট্রিয়া-সার্বিয়া দ্বন্দ্ব: অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে দোষারোপ করে আক্রমণ করে। ফলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
(iii) জোটপদ্ধতির প্রতিক্রিয়া: জার্মানি ও অস্ট্রিয়া একদিকে এবং রাশিয়া-ফ্রান্স-ব্রিটেন অন্যদিকে অবস্থান নেয়। একে একে দেশগুলি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
(iv) জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ: জাতীয় গর্ব ও উপনিবেশ বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে। অস্ত্র প্রতিযোগিতাও উত্তেজনা বাড়ায়।
📝9. কার্ল মার্কসের সমাজতন্ত্রবাদের মূল আদর্শগুলো লেখো।
✅উত্তর:
(i) শ্রেণি সংগ্রাম: ইতিহাসের অগ্রগতি শ্রেণি সংগ্রামের ফলে ঘটে বলে তিনি মনে করতেন। ধনী ও গরিবের দ্বন্দ্ব সমাজের রূপ নির্ধারণ করে।
(ii) পুঁজিবাদের বিরোধিতা: মার্কস পুঁজিবাদকে শোষণের উৎস হিসেবে দেখেন। তিনি এর পতন ও সর্বহারার উত্থান প্রত্যাশা করেন।
(iii) সম্পদের সমবণ্টন: উৎপাদনের উপকরণ রাষ্ট্র বা জনগণের হাতে থাকবে। সমাজে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
(iv) বিপ্লবের প্রয়োজন: এই আদর্শ বাস্তবায়নে শ্রমিক বিপ্লব জরুরি। মার্কস 'কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো' তে তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন।
📝10. রুশ বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) জারশাহির পতন: রুশ বিপ্লবের ফলে জারের একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে। রাজতন্ত্রের পরিবর্তে জনগণের সরকার গঠিত হয়।
(ii) কমিউনিজমের সূচনা: বলশেভিকরা সমাজতান্ত্রিক শাসন কায়েম করে। লেনিন নতুন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেন।
(iii) বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন: বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকা ও অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশ প্রতিক্রিয়া জানায়।
(iv) উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহ: উপনিবেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে প্রেরণা জোগায়। এশিয়া ও আফ্রিকায় স্বাধীনতা সংগ্রাম জোরদার হয়।
📝11. ইতালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির অবদান লেখো।
✅উত্তর:
(i) জাতীয়তাবাদ প্রচার: ম্যাৎসিনি 'ইয়াং ইতালি' নামে সংগঠন গঠন করেন। এর মাধ্যমে তিনি জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে দেন।
(ii) গণতন্ত্রের ধারণা: তিনি গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন। জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলেন।
(iii) ঐক্যের ধারণা প্রচার: ম্যাৎসিনি প্রথমবার ইতালির রাজনৈতিক ঐক্যের তত্ত্ব দেন। তাঁর ভাবনা ভবিষ্যৎ ঐক্য আন্দোলনের ভিত্তি হয়।
(iv) আন্দোলনের অনুপ্রেরণা: তাঁর কর্মকাণ্ড বহু যুবককে বিপ্লবের পথে অনুপ্রাণিত করে। ভবিষ্যতে ক্যাভুর ও গারিবাল্ডির পথ প্রস্তুত হয়।
📝12. শিল্পবিপ্লবের অর্থনৈতিক প্রভাব আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) উৎপাদন বৃদ্ধি: যন্ত্রের ব্যবহারে পণ্যের উৎপাদন দ্রুত ও বেশি হয়। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ে।
(ii) বিনিয়োগ ও পুঁজি: বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুঁজির প্রবাহ বাড়ে। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার গড়ে ওঠে।
(iii) শ্রমবাজার প্রসার: গ্রামীণ জনগণ শহরে কাজের জন্য ভিড় জমায়। এতে মজুরি নির্ভর শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
(iv) বিশ্ববাণিজ্যের প্রসার: পণ্যের রপ্তানি বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। উপনিবেশিক অর্থনীতি গড়ে ওঠে।
📝13. ভার্সাই চুক্তির অর্থনৈতিক সমীকরণ আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) জার্মানিকে ক্ষতিপূরণ: জার্মানিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। এতে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
(ii) শিল্পাঞ্চলের দখল: আলশেস-লোরেন অঞ্চল ফ্রান্সের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এতে জার্মানির শিল্প উৎপাদনে ধাক্কা লাগে।
(iii) বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা: চুক্তিতে জার্মানির সামরিক ও বাণিজ্যিক ক্ষমতা সীমিত করা হয়। এতে তার রপ্তানি হ্রাস পায়।
(iv) আর্থিক সঙ্কট ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: জার্মানিতে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব চরমে ওঠে। সমাজে অস্থিরতা ও চরমপন্থা বেড়ে যায়।
📝14. ইতালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনি ও গ্যারিবল্ডির সঙ্গে ক্যাভুরের মতাদর্শগত চারটি বিরোধের কথা উল্লেখ করো।
✅উত্তর:
(i) রাষ্ট্রীয় ধারা নিয়ে মতপার্থক্য: ম্যাৎসিনি প্রজাতন্ত্র চাইলেও ক্যাভুর সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তীব্র পার্থক্য ছিল।
(ii) ঐক্যের পথ: গ্যারিবল্ডি বিপ্লবের মাধ্যমে ঐক্য চাইলেও ক্যাভুর কূটনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ পথে বিশ্বাসী ছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
(iii) বিদেশি সহায়তা বিষয়ে মতানৈক্য: ম্যাৎসিনি ও গ্যারিবল্ডি বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করলেও ক্যাভুর ফ্রান্সের সাহায্য নিয়েছিলেন। এতে মতাদর্শে ফাটল তৈরি হয়।
(iv) রাজনৈতিক কর্মপন্থা: ক্যাভুর ধাপে ধাপে ঐক্য চেয়েছিলেন; অন্যদিকে গ্যারিবল্ডি ও ম্যাৎসিনি তাৎক্ষণিক বিপ্লবী ঐক্যে বিশ্বাসী ছিলেন। এই বিষয়েও বিরোধ দেখা যায়।
📝15. উপনিবেশবাদ কীভাবে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দেয় ?
✅উত্তর:
(i) অর্থনৈতিক লালসা: উপনিবেশগুলো থেকে সম্পদ আহরণ ছিল মূল উদ্দেশ্য। এই লালসাই বৃহত্তর সাম্রাজ্য গঠনের পটভূমি তৈরি করে।
(ii) রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: উপনিবেশ দখল করে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করে। ধীরে ধীরে তা সাম্রাজ্যবাদে রূপ নেয়।
(iii) প্রযুক্তির ব্যবহার: উপনিবেশ দখলে প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেশগুলি আধিপত্য বিস্তার করে। এটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
(iv) রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধি: অধিক উপনিবেশ মানেই অধিক গৌরব ও শক্তি—এই ধারণাই সাম্রাজ্যবাদের পথ প্রশস্ত করে। ফলে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।
📝16. স্পেনের গৃহযুদ্ধকে কেন ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষুদ্র সংস্করণ' বলা হয়?
✅উত্তর:
(i) আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ: স্পেনের গৃহযুদ্ধে জার্মানি ও ইতালি ফ্রাঙ্কোর পক্ষে, আর রাশিয়া রিপাবলিকানদের পক্ষে সহায়তা করে। ফলে এটি আন্তর্জাতিক সংঘাতে রূপ নেয়।
(ii) বাম-ডান মতাদর্শের দ্বন্দ্ব: এই যুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের লড়াই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এই মতাদর্শের সংঘর্ষ দেখা যায়।
(iii) নতুন অস্ত্র পরীক্ষণ: জার্মানি গৃহযুদ্ধে যুদ্ধবিমান ও বোমা পরীক্ষায় অংশ নেয়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ ছিল।
(iv) সাম্প্রদায়িক ও গৃহকলহ: স্পেনে যেমন গৃহযুদ্ধ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন তৈরি করেছিল, তেমনই বিশ্বযুদ্ধেও এই প্রবণতা দেখা যায়।
📝17. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) জাতীয়তাবাদ: ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে পড়ে, যা জাতির গর্বকে সংঘর্ষে পরিণত করে। বিশেষ করে সার্ব জাতীয়তাবাদ অস্ট্রো-হাঙ্গেরির বিরোধিতা করেছিল।
(ii) সামরিক জোট গঠন: ত্রিমৈত্রি ও ত্রৈবিধ জোট তৈরি হলে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সন্দেহের আবহ তৈরি হয়। এই জোটব্যবস্থা যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করে।
(iii) ঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতা: আফ্রিকা ও এশিয়ায় উপনিবেশ দখল নিয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তা পরিণত হয় যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে।
(iv) আর্চডিউক হত্যাকাণ্ড: সারায়েভোতে অস্ট্রিয়ার আর্চডিউককে হত্যা করা হলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এটি যুদ্ধের তাৎক্ষণিক কারণ ছিল।
📝18. ফরাসি শিল্পায়নের পিছনে কী কারণ ছিল?
✅উত্তর:
(i) বিপ্লব-পরবর্তী স্থিতিশীলতা: ফরাসি বিপ্লবের পর দেশে স্থিতি ফিরে আসে। এ পরিস্থিতি শিল্পায়নের পরিবেশ তৈরি করে।
(ii) পরিবহণের উন্নয়ন: রেলপথ ও জলপথ নির্মাণ সহজতর হয়। ফলে পণ্য পরিবহণ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।
(iii) বিদেশি বিনিয়োগ: ব্রিটিশ ও অন্যান্য দেশের পুঁজিপতিরা ফ্রান্সে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। এতে ফরাসি শিল্পে গতি আসে।
(iv) সরকারি সহযোগিতা: সরকার শিল্পায়নের পক্ষে নীতিনির্ধারণ করে। ট্যাক্স ছাড় ও সুযোগসুবিধা শিল্পকে উৎসাহ দেয়।
📝19. টীকা লেখো : চোদ্দো দফা নীতি।
✅উত্তর:
(i) উদ্যোক্তা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই নীতি প্রকাশ করেন। এটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর শান্তি প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব।
(ii) মূল উদ্দেশ্য: যুদ্ধোত্তর বিশ্বে শান্তি ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছিল মূল লক্ষ্য। এতে জাতিপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাবও ছিল।
(iii) বিপ্লব ও ঔপনিবেশিকতা বিরোধিতা: এতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মত দেওয়া হয়। জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
(iv) সমতার নীতি: সাম্য, অবাধ বাণিজ্য ও অস্ত্রহ্রাসের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি তৈরি করে।
📝20. উগ্র জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের পরিচয় দাও।
✅উত্তর:
(i) উগ্র জাতীয়তাবাদ: এটি নিজ জাতির শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্য কায়েমে বিশ্বাস করে। অন্য জাতিগুলোর অধিকার অস্বীকার করে।
(ii) আন্তর্জাতিকতাবাদ: এটি বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ ও শান্তির পক্ষে অবস্থান নেয়। সমস্ত জাতিকে সমানভাবে দেখার আহ্বান জানায়।
(iii) দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য: উগ্র জাতীয়তাবাদ যুদ্ধ ও বিরোধ সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিকতাবাদ শান্তি ও সহযোগিতায় বিশ্বাস করে।
(iv) আবেগ বনাম যুক্তি: জাতীয়তাবাদ আবেগনির্ভর হলেও আন্তর্জাতিকতাবাদ যুক্তিনির্ভর। তাই উভয়ের অবস্থান বিপরীত।
📝21. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন প্রকৃত বিশ্বযুদ্ধ বলা হয়?
✅উত্তর:
(i) বিস্তৃত পরিসর: ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল—সবখানেই যুদ্ধ হয়। ফলে এটি সত্যিকার অর্থে ‘বিশ্ব’যুদ্ধ।
(ii) অগণিত দেশ অংশগ্রহণ: প্রায় সব বড় ও ছোট দেশ এই যুদ্ধে অংশ নেয়। ফলে এটি সর্বজনীন রূপ ধারণ করে।
(iii) আধুনিক অস্ত্র ও কৌশল: পারমাণবিক বোমা, রাডার ও যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়। এই যুদ্ধ প্রযুক্তির দিক থেকে যুগান্তকারী ছিল।
(iv) মানবিক বিপর্যয়: অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, গৃহচ্যুতি ও গণহত্যা ঘটে। এর প্রভাব বহু দশক পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
📝22. রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার অবসান কে, কত খ্রিস্টাব্দে এবং কেন করেন?
✅উত্তর:
(i) উদ্যোক্তা: রুশ সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথা বিলুপ্ত করেন। তিনি ছিলেন উদার ও সংস্কারপন্থী শাসক।
(ii) সাল: ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে এই প্রথার আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে। এটি রাশিয়ার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
(iii) কারণ: কৃষকদের প্রতি অবিচার, উৎপাদনশীলতার ঘাটতি এবং অসন্তোষ ছিল মূল কারণ। সাম্রাজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই ছিল লক্ষ্য।
(iv) ফলাফল: কৃষকরা আইনি স্বাধীনতা পেলেও জমির মালিকানা পুরোপুরি পেল না। এটি নতুন অসন্তোষের জন্ম দেয়।
📝23. শিল্পবিপ্লবের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফলাফল বা প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।
✅উত্তর:
(i) অর্থনৈতিক উৎপাদন বৃদ্ধি: যন্ত্রের ব্যবহার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। পণ্য সস্তা ও সহজলভ্য হয়।
(ii) নতুন শ্রেণির জন্ম: শিল্পপতি ও মজুর শ্রেণি গঠিত হয়। ধনী ও গরিবের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
(iii) রাজনৈতিক পরিবর্তন: গণতন্ত্রের প্রতি চাহিদা বাড়ে, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে। আইন ও সংস্কারে রাষ্ট্র বাধ্য হয় পরিবর্তন আনতে।
(iv) শ্রম আন্দোলন: শ্রমিকেরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত হয়। ট্রেড ইউনিয়নের প্রসার ঘটে।
📝24. টীকা লেখো : ‘ভার্সাই সন্ধি’।
✅উত্তর:
(i) সাল ও স্থান: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদে এই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রধান চুক্তি।
(ii) জার্মানির অবস্থা: জার্মানিকে যুদ্ধের জন্য দায়ী করা হয় এবং ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়। তার সামরিক শক্তি ও ভূখণ্ডও হ্রাস পায়।
(iii) নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি: ইউরোপের মানচিত্র নতুনভাবে আঁকা হয়। পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, ইউগোস্লাভিয়ার মতো নতুন রাষ্ট্র তৈরি হয়।
(iv) জাতিপুঞ্জ গঠন: ভবিষ্যতে যুদ্ধ এড়াতে ‘জাতিপুঞ্জ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার প্রথম প্রয়াস।
📝25. ইয়ং ইতালি কেন গঠন করা হয়েছিল ? এই দলের আদর্শগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) প্রতিষ্ঠা: ১৮৩১ সালে গিউসেপ্পে ম্যাৎসিনি ‘ইয়ং ইতালি’ দলটি গঠন করেন। এর লক্ষ্য ছিল ইতালির রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন।
(ii) উদ্দেশ্য: অস্ট্রিয়ান শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা ছিল প্রধান লক্ষ্য। তরুণদের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটানোও ছিল উদ্দেশ্য।
(iii) আদর্শ: এই দলের মূল আদর্শ ছিল প্রজাতন্ত্রবাদ, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজকল্যাণও তাদের নীতির অংশ ছিল।
(iv) প্রভাব: ইয়ং ইতালি তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছিল। পরবর্তীতে এটি ইতালির ঐক্য আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে।
📝26. কেন সুয়েজ খাল খনন করা হয়েছিল এবং এর উপযোগিতা কী ছিল?
✅উত্তর:
(i) খননের কারণ: ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে নৌপথ সংক্ষিপ্ত করার প্রয়োজনে এই খাল খনন করা হয়। এটি বাণিজ্যিক পথকে দ্রুত ও সাশ্রয়ী করে তোলে।
(ii) অবস্থান: খালটি ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করে। এটি মিশরের সুয়েজ অঞ্চলে অবস্থিত।
(iii) উপযোগিতা: খালটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতি বাড়ায়। ইউরোপ-এশিয়ার মধ্যে জাহাজ চলাচল সহজ হয়।
(iv) রাজনৈতিক গুরুত্ব: সুয়েজ খালের ওপর নিয়ন্ত্রণ কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফলে এই অঞ্চল নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়।
📝27. রুশ বিপ্লবের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) রাজনৈতিক প্রভাব: রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হয়। বলশেভিক পার্টি একদলীয় শাসনের সূচনা করে।
(ii) নতুন রাষ্ট্র: জারশাসনের অবসানে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম হয়। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
(iii) অর্থনৈতিক প্রভাব: জমি, কলকারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। 'নেপ' (NEP) নামে নতুন অর্থনৈতিক নীতি চালু করা হয়।
(iv) বিশ্বপ্রভাব: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জাগে। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে একটি নতুন পথ তৈরি হয়।
📝28. 1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দার প্রভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কীভাবে পড়েছিল?
✅উত্তর:
(i) অর্থনৈতিক বিপর্যয়: স্টক মার্কেট ভেঙে পড়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়। ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়।
(ii) বেকারত্ব: কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারায়। বেকারত্ব ছিল অভূতপূর্ব মাত্রায়।
(iii) সামাজিক প্রভাব: গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট দেখা দেয়।
(iv) রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ‘নিউ ডিল’ কর্মসূচি চালু করেন। রাষ্ট্র অর্থনীতিতে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে।
📝29. টীকা লেখো : মেটারনিখ ব্যবস্থা।
✅উত্তর:
(i) সংজ্ঞা: মেটারনিখ ব্যবস্থা ছিল অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্লেমেন্স ভন মেটারনিখের কৌশলগত ব্যবস্থা। এটি ছিল ইউরোপে রাজতন্ত্র ও রক্ষণশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।
(ii) প্রেক্ষিত: ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেসে এই ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এটি নেপোলিয়নের পতনের পর ইউরোপে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল।
(iii) মূল নীতি: এই ব্যবস্থায় উদারবাদ, জাতীয়তাবাদ ও বিপ্লবী চেতনার বিরোধিতা করা হয়। শাসকদের ক্ষমতা রক্ষা ও বিদ্রোহ দমনই ছিল মূল লক্ষ্য।
(iv) প্রভাব: এই ব্যবস্থার ফলে ইউরোপে সাময়িক শান্তি বজায় ছিল। তবে পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কারণে এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
📝30. বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতি বলতে কী বোঝায় ?
✅উত্তর:
(i) সংজ্ঞা: ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’ (Blood and Iron Policy) ছিল ওটো ভন বিসমার্কের জার্মান ঐক্যের কৌশল। এটি ছিল যুদ্ধ, শক্তি ও বাস্তবনীতির ওপর ভিত্তি করে গঠিত।
(ii) প্রসঙ্গ: ১৮৬২ সালে প্রুশিয়ান সংসদে বক্তৃতায় বিসমার্ক এই শব্দটি ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, কূটনীতি নয়, শক্তিই ঐক্যের পথ।
(iii) কর্মপদ্ধতি: ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক যুদ্ধে জয়লাভ করে জার্মান ঐক্য সাধিত হয়। কূটনৈতিক চাতুরীর সঙ্গে শক্তি প্রয়োগ ছিল তাঁর মূল কৌশল।
(iv) প্রভাব: জার্মানির একীকরণ ১৮৭১ সালে সম্পন্ন হয়। বিসমার্ক ইউরোপীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী নেতা হিসেবে পরিচিত হন।
📝31. ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি কী ছিল ?
✅উত্তর:
(i) প্রাকৃতিক সম্পদ: ইংল্যান্ডে প্রচুর কয়লা ও লৌহ আকরিক ছিল। শিল্প উন্নয়নের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
(ii) উপনিবেশ ও বাজার: বিশাল উপনিবেশিক সাম্রাজ্য ছিল বলে কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্যের বাজার ছিল নিশ্চিত। এটি উৎপাদনকে উৎসাহ দেয়।
(iii) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: সংসদীয় গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিরতা শিল্পবিপ্লবের সহায়ক ছিল। এছাড়া ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করা হতো।
(iv) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও নতুন যন্ত্রের উদ্ভাবন উৎপাদনকে দ্রুত ও সহজ করে তোলে। এটি শিল্পায়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে।
📝32. জোসেফ ম্যাৎসিনি ও কাউন্ট ক্যাভুরের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য কী ছিল ?
✅উত্তর:
(i) মূল দর্শন: ম্যাৎসিনি ছিলেন এক আদর্শবাদী বিপ্লবী, যিনি গণতান্ত্রিক ইতালির স্বপ্ন দেখতেন। ক্যাভুর ছিলেন বাস্তববাদী রাষ্ট্রনায়ক, যিনি রাজতান্ত্রিক ঐক্যের পক্ষপাতী।
(ii) পন্থা: ম্যাৎসিনি জনগণের অংশগ্রহণ ও সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ঐক্য চাইতেন। ক্যাভুর কূটনীতি ও সামরিক জোটের মাধ্যমে ঐক্য সাধন করেন।
(iii) ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি: ম্যাৎসিনি ধর্মকে রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেন। ক্যাভুর ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন ও ধর্মকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে পৃথক রাখতেন।
(iv) প্রভাব: ম্যাৎসিনির ভাবধারা জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করলেও বাস্তবে সফল হননি। ক্যাভুর ছিলেন ইতালির ঐক্যের বাস্তব রূপকার।
📝33. কনসার্ট অব ইউরোপের পতনের কারণ কী ?
✅উত্তর:
(i) জাতীয়তাবাদের উত্থান: ইউরোপজুড়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন কনসার্টের মূল নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে। এসব আন্দোলন চুক্তিভিত্তিক রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল।
(ii) শক্তির ভারসাম্যের অভাব: ইউরোপীয় শক্তিগুলির মধ্যে বিশ্বাসের অভাব ও প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।
(iii) বিপ্লবী ঢেউ: ১৮৩০ ও ১৮৪৮ সালের বিপ্লবগুলো কনসার্টের স্থায়িত্ব নষ্ট করে। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দাবি রাজতন্ত্রকে দুর্বল করে তোলে।
(iv) কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব: ক্রিমিয়ান যুদ্ধ (১৮৫৩–৫৬) রাশিয়ার সঙ্গে অন্য শক্তিগুলির সংঘাত সৃষ্টি করে। এর ফলে ঐক্য নষ্ট হয় ও কনসার্ট ভেঙে পড়ে।
📝34. 1830 খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লব ফ্রান্সের অভ্যন্তরে কী প্রভাব ফেলেছিল ?
✅উত্তর:
(i) রাজনৈতিক পরিবর্তন: রাজতন্ত্রকে দুর্বল করে জুলাই রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়। লুই ফিলিপকে ‘জনতার রাজা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
(ii) সংবিধান সংশোধন: রাজতন্ত্রীয় সংবিধানে জনগণের অধিকারের কিছু স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবাদপত্র ও রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাড়ে।
(iii) গণতন্ত্রের বিকাশ: মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। তাদের অধিকার স্বীকৃত হয় এবং ভোটাধিকার কিছুটা সম্প্রসারিত হয়।
(iv) আন্দোলনের অনুপ্রেরণা: এই বিপ্লব ইউরোপের অন্য দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উদ্দীপনা যোগায়। বেলজিয়াম ও পোল্যান্ডে বিদ্রোহ শুরু হয়।
📝35. ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটার চারটি কারণ লেখো।
✅উত্তর:
(i) প্রাকৃতিক সম্পদ: প্রচুর কয়লা ও লোহার খনি ছিল। শিল্পোৎপাদনের কাঁচামাল সহজলভ্য ছিল।
(ii) উপনিবেশিক বাজার: ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল বিশাল বাজার ও কাঁচামালের উৎস। উপনিবেশ থেকে আয়ও বিনিয়োগে ব্যবহৃত হতো।
(iii) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি: নতুন নতুন যন্ত্রপাতির আবিষ্কার শিল্পবিপ্লব ত্বরান্বিত করে। যেমন—স্পিনিং জেনি ও স্টিম ইঞ্জিন।
(iv) ব্যাংকিং ও পরিবহন: সুসংগঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও রেল, খাল, সড়কের উন্নতি উৎপাদন ও বাণিজ্যে সহায়ক হয়।
📝36. 1917 খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর বিপ্লবের প্রভাব কীভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল?
✅উত্তর:
(i) সাম্যবাদ ছড়িয়ে পড়ে: রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বিশ্বব্যাপী সাম্যবাদের ধারণা ছড়িয়ে দেয়। এশিয়া, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকায় কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে।
(ii) ঔপনিবেশিক বিদ্রোহ: উপনিবেশিক দেশগুলিতে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত হয়। ভারত, চীন, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে বিপ্লবী আন্দোলন গতি পায়।
(iii) পুঁজিবাদী দেশগুলিতে আতঙ্ক: পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকায় লাল আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই বিপ্লব সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদের দ্বন্দ্ব শুরু করে।
(iv) শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন: বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে অধিকার সচেতনতা বাড়ে। কৃষক আন্দোলনেরও উত্থান ঘটে।
📝37. শিল্পবিপ্লবের সামাজিক ফলাফল লেখো।
✅উত্তর:
(i) নতুন শ্রেণির উদ্ভব: পুঁজিপতি শ্রেণি ও শ্রমিক শ্রেণির উত্থান ঘটে। সামাজিক বিভাজন আরও তীব্র হয়।
(ii) শ্রমিক শোষণ: কলকারখানায় শ্রমিকদের দীর্ঘ সময় কাজ করতে হতো কম মজুরিতে। শিশু শ্রমিকদের অবস্থাও করুণ ছিল।
(iii) শহরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি: মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বাস করতে শুরু করে। শহরগুলো ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
(iv) শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার: শিল্পোন্নত সমাজে শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সংবাদপত্র, বইপত্র ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে।
📝38. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 1929 খ্রিস্টাব্দে মহামন্দার কীরূপ প্রভাব পড়েছিল?
✅উত্তর:
(i) ব্যাংক ও শেয়ার বাজার ধস: হাজার হাজার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। শেয়ার বাজারে ধস নেমে যায় ও বিনিয়োগ বন্ধ হয়।
(ii) বেকারত্ব বৃদ্ধি: কোটি কোটি মানুষ কাজ হারায়। খাদ্য সংকট ও দারিদ্র্য চরম আকার ধারণ করে।
(iii) চাষাবাদে ধ্বস: কৃষকরা উৎপাদিত শস্যের সঠিক মূল্য পায় না। বহু কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
(iv) নিউ ডিল নীতি: প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট 'নিউ ডিল' নামে সরকারি পুনর্গঠন কর্মসূচি শুরু করেন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে।
📝39. টীকা লেখো: রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (1939 খ্রিস্টাব্দ)।
✅উত্তর:
(i) চুক্তির প্রেক্ষাপট: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৩ আগস্ট ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার ও স্তালিন এই চুক্তিতে উপনীত হন।
(ii) চুক্তির শর্ত: দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং পূর্ব ইউরোপে নিজেদের প্রভাব বিস্তার ভাগ করে নেয়।
(iii) গোপন প্রটোকল: গোপন চুক্তির মাধ্যমে পোল্যান্ড, লাটভিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের ভাগাভাগি নির্ধারিত হয়।
(iv) ফলাফল: এই চুক্তির ফলে হিটলার নিশ্চিন্ত হয়ে পোল্যান্ড আক্রমণ করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।
📝40. ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্তাবলি লেখো।
✅উত্তর:
(i) জার্মান ক্ষতিপূরণ: জার্মানিকে ৬৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়। এতে জার্মান অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।
(ii) উৎপাদন ব্যবস্থার ক্ষয়: রুর শিল্পাঞ্চলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল জার্মানি হারায়। এতে উৎপাদনে ধস নামে।
(iii) সম্পত্তি হরণ: বিদেশে থাকা জার্মানির সম্পত্তি বিজয়ী রাষ্ট্রগুলির দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
(iv) দীর্ঘমেয়াদী দুর্দশা: জার্মান মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও আর্থিক সংকট বৃদ্ধি পায়। জনগণের মধ্যে ক্ষোভ জন্মে, যা নাৎসি উত্থানে ভূমিকা রাখে।
📝41. ইতালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনির অবদান আলোচনা করো।
✅উত্তর:
(i) ‘ইয়াং ইতালি’ গঠনের মাধ্যমে উদ্দীপনা: ১৮৩১ সালে তিনি ‘Young Italy’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ঐক্যের ডাক দেয়।
(ii) গণতান্ত্রিক ভাবধারার প্রচার: ম্যাৎসিনি জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম, গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের আদর্শ ছড়িয়ে দেন।
(iii) যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করা: তাঁর বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বহু তরুণ ঐক্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
(iv) ঐক্যের ভিত্তি গড়ে দেওয়া: রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হলেও ম্যাৎসিনির আদর্শ ও প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে ক্যাভুর ও গ্যারিবাল্ডির নেতৃত্বে ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে।
📝42. শিল্পবিপ্লবের ফলে উদ্ভূত শ্রমিক শ্রেণির দুরবস্থার বর্ণনা দাও।
✅উত্তর:
(i) দীর্ঘ শ্রমঘণ্টা: শ্রমিকদের দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হতো বিনা বিরতিতে, যা ছিল অত্যন্ত ক্লান্তিকর।
(ii) কম মজুরি ও শিশু শ্রম: শ্রমিকরা খুবই সামান্য পারিশ্রমিক পেত, এবং শিশুদেরও খনি ও কল-কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করা হতো।
(iii) বাসস্থানের অভাব ও স্বাস্থ্যহানী: শহরে বস্তির সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
(iv) অধিকারহীনতা ও দমননীতি: শ্রমিকদের কোনও অধিকার ছিল না, মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গেলে তাদের গ্রেপ্তার ও বরখাস্ত করা হতো।
📝43. রুশ বিপ্লবে বলশেভিকদের সাফল্যের কারণগুলি লেখো।
✅উত্তর:
(i) লেনিনের নেতৃত্ব ও আদর্শ: লেনিনের করিশম্যাটিক নেতৃত্ব এবং ‘রুটি, জমি ও শান্তি’ স্লোগান জনমনে প্রভাব ফেলেছিল।
(ii) জনগণের অসন্তোষ: সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, খাদ্য সংকট ও ভূমিহীন কৃষকদের ক্ষোভ বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে।
(iii) কারখানা ও সেনাবাহিনীর সমর্থন: পেট্রোগ্রাড ও অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিক ও সৈন্যরা বলশেভিকদের সমর্থন করে।
(iv) সমগঠিত পার্টি কাঠামো: বলশেভিক পার্টি ছিল সুসংগঠিত ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত, যা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর করতে সক্ষম হয়।
📝44. ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রত্ন বলার যুক্তিগুলি লেখো।
✅উত্তর:
(i) প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য: ভারত ছিল কাঁচামালের বিশাল উৎস— তুলা, চা, রেশম, আফিম প্রভৃতি রপ্তানিযোগ্য সামগ্রীর জন্য।
(ii) বৃহৎ বাজার: ভারতের বিশাল জনসংখ্যা ব্রিটিশ কারখানার তৈরি পণ্যের একটি স্থায়ী ও লাভজনক বাজারে পরিণত হয়।
(iii) কৌশলগত অবস্থান: ভারত ছিল ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক ও সামরিক ঘাঁটি।
(iv) রাজস্ব ও শ্রমিক সরবরাহ: ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ কর আদায় এবং বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় সৈন্য প্রেরণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করে।
📝45. ‘ইয়ং ইতালি’ কীভাবে ইতালির জাতীয়তাবাদকে সমৃদ্ধ করেছিল?
✅উত্তর:
(i) জাতীয় ঐক্যের ধারণা প্রচার: ইয়ং ইতালি সংগঠন ইতালির তরুণদের মধ্যে একটি একক, অবিভক্ত রাষ্ট্র গঠনের আদর্শ ছড়িয়ে দেয়।
(ii) গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তার: সংগঠনটি ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক নীতির পক্ষে জনমত গড়ে তোলে।
(iii) বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা: সদস্যদের বিপ্লবের মাধ্যমে রাজতান্ত্রিক একাধিকারবাদী শাসন উৎখাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
(iv) জাতীয়তাবাদী লেখার প্রচার: ম্যাৎসিনি তার পত্র-পত্রিকা ও প্রবন্ধের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে ছড়িয়ে দেন।
📝46. ইংল্যান্ড ও ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের অগ্রগতির তুলনামূলক বিচার করো।
✅উত্তর:
(i) সূচনাকাল: ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব শুরু হয় ১৭৬০ সালের দিকে, ইউরোপের অন্যান্য দেশে তা পরে ছড়িয়ে পড়ে।
(ii) প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন: ইংল্যান্ডে জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন, স্পিনিং জেনি ইত্যাদি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দ্রুত অগ্রগতি ঘটে।
(iii) অর্থনৈতিক ও উপনিবেশিক সুবিধা: ইংল্যান্ডে উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল ও বাজারের জোগান থাকায় শিল্পবিপ্লব সফল হয়, ইউরোপে তেমন সুবিধা কম ছিল।
(iv) সরকারি সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতা: ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা শিল্পোন্নয়নের সহায়ক হয়, ইউরোপে বারংবার রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল।
📝47. মেটারনিখ ব্যবস্থা কী? এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কী ছিল?
✅উত্তর:
🔹 মেটারনিখ ব্যবস্থা ছিল ইউরোপে রক্ষণশীল রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক রাজনৈতিক উদ্যোগ। এটি ভিয়েনা কংগ্রেস (1815)-এর মাধ্যমে শুরু হয়।
🔹 এই ব্যবস্থার মূল নায়ক ছিলেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্লেমেন্স ভন মেটারনিখ। তিনি বিপ্লবী ভাবধারাকে দমন করতে উদ্যোগী হন।
🔹 মেটারনিখ ব্যবস্থা উদারতাবাদ ও জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এটি সেন্সরশিপ ও দমনমূলক নীতির মাধ্যমে কাজ করে।
🔹 ইউরোপে শান্তি ও পুরাতন সামন্ততান্ত্রিক শাসন কায়েমই ছিল এর উদ্দেশ্য। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি ব্যর্থ হয়।
📝48. ইতালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির ভূমিকা আলোচনা করো।
✅উত্তর:
🔹 জোসেপ ম্যাৎসিনি ছিলেন ইতালির জাতীয়তাবাদী ঐক্য আন্দোলনের পুরোধা। তিনি ‘ইয়ং ইতালি’ সংগঠন গড়ে তোলেন।
🔹 ম্যাৎসিনি একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ ইতালি গঠনের স্বপ্ন দেখেন। তিনি যুবকদের মধ্যে দেশপ্রেম ছড়িয়ে দেন।
🔹 তাঁর লেখা ও বক্তৃতা জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উজ্জীবিত করে। তিনি বিপ্লবী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
🔹 যদিও তিনি রাজনৈতিকভাবে সফল হননি, তাঁর চিন্তাধারা ভবিষ্যতের নেতা গ্যারিবল্ডি ও ক্যাভুরকে অনুপ্রাণিত করে। তাই তিনি আদর্শগত নেতা হিসেবে স্মরণীয়।
📝49. উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝো?
✅উত্তর:
🔹 উগ্র জাতীয়তাবাদ হল চরম দেশপ্রেম যা নিজের জাতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। এতে অন্য জাতির প্রতি বিরূপতা জন্মে।
🔹 এটি জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্প্রসারণবাদের নীতি প্রচার করে। উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের ভিত্তি রচিত হয় এখান থেকেই।
🔹 বিশ শতকের গোড়ায় ইউরোপে এই মনোভাব তীব্র হয়। বিশেষত জার্মানি ও ইতালিতে এটি ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়।
🔹 এই জাতীয়তাবাদই বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক শান্তি ব্যাহত হয়।
📝50. আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটেছিল?
✅উত্তর:
🔹 ১৯ শতকের শেষে ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে আফ্রিকা দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এটিকে ‘Scramble for Africa’ বলা হয়।
🔹 ১৮৮৪-৮৫ সালের বার্লিন সম্মেলনে আফ্রিকার ভাগ-বাটোয়ারা নির্ধারিত হয়। এতে স্থানীয় জনগণের মতামতের কোন গুরুত্ব ছিল না।
🔹 ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি প্রভৃতি দেশ আফ্রিকার উপনিবেশে পরিণত করে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট শুরু হয়।
🔹 এর ফলে আফ্রিকার ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব পড়ে। অনেক রাজনৈতিক ও জাতিগত বিভাজন সৃষ্টি হয়।