✍️পনেরো বা ষোলটি বাক্যে উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৮):
📝1.উনিশ শতকের বাংলায় ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে রামকৃষ্ণদেবের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
👉 উত্তর:
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলায় ধর্মীয় জাগরণ নতুন মাত্রা পায়। রামকৃষ্ণদেব এই সময়ে আধ্যাত্মিকতা, ভক্তি ও মানবপ্রেমকে কেন্দ্র করে এক অনন্য ধারা সৃষ্টি করেন।
১. আধ্যাত্মিক জাগরণ: তিনি মানুষকে শিক্ষা দেন যে ঈশ্বরপ্রাপ্তিই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তাঁর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা সাধারণ মানুষকে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।
২. সর্বধর্ম সমন্বয়: তিনি প্রচার করেন “যত মত, তত পথ”, অর্থাৎ সব ধর্মের উদ্দেশ্য এক। এতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।
৩. সাধারণ ভাষার ব্যবহার: কঠিন ধর্মতত্ত্বকে তিনি সহজ-সরল বাংলায় উপস্থাপন করতেন। তাঁর গল্প, উপমা ও রসিকতা মানুষকে সহজে আকৃষ্ট করত।
৪. ভক্তি ও প্রেমের শিক্ষা: তিনি জ্ঞানচর্চার চেয়ে ভক্তি, প্রেম ও নিষ্ঠার গুরুত্ব দেন। এর ফলে মানুষের মধ্যে মানবপ্রেম ও ঈশ্বরভক্তি গড়ে ওঠে।
৫. অসহিষ্ণুতার বিরোধিতা: তিনি ধর্মীয় ভেদাভেদকে অগ্রাহ্য করে সব ধর্মের সমান মর্যাদা প্রচার করেন। এতে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি হয়।
৬. যুবসমাজে প্রেরণা: তাঁর শিক্ষা তরুণদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে এগিয়ে দেয়। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর আদর্শকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেন।
৭. সামাজিক সংস্কার: তিনি কুসংস্কার, ভণ্ডামি ও আচারবাদের সমালোচনা করেন। সৎ, সরল ও মানবতাবাদী জীবনযাপনকে তিনি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করেন।
৮. স্থায়ী প্রভাব: তাঁর অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষা, চিকিৎসা ও সমাজসেবায় অসাধারণ অবদান রাখে। এর মাধ্যমে ধর্ম ও সমাজকল্যাণের মধ্যে সুসমন্বয় ঘটে।
উপসংহার: রামকৃষ্ণদেব আধ্যাত্মিকতা, সর্বধর্ম সমন্বয় ও মানবপ্রেমের মাধ্যমে উনিশ শতকের বাংলার ধর্ম সংস্কার আন্দোলনকে নতুন দিশা দিয়েছিলেন। তাঁর আদর্শ আজও বিশ্বমানবতার জন্য অনুকরণীয়।
📝 2. সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল? এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হ’ল কেন?
👉 উত্তর:
ভূমিকা: আঠারো শতকের শেষভাগে বাংলায় অর্থনৈতিক শোষণ, দুর্ভিক্ষ ও করনীতির কারণে সন্ন্যাসী ও ফকিররা একত্রিত হয়ে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংগঠিত করেন। এই বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে উপনিবেশবিরোধী প্রথম বৃহৎ গণআন্দোলন হিসেবে বিবেচিত।
ঐতিহাসিক তাৎপর্য:
১.উপনিবেশবিরোধী সূচনা: সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রথম সশস্ত্র আন্দোলন ছিল। এটি পরবর্তীকালে অন্যান্য বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে।
২.কৃষক ও ধর্মীয় নেতার ঐক্য: এই বিদ্রোহে সন্ন্যাসী, ফকির ও কৃষকের মিলিত অংশগ্রহণ দেখা যায়। এতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ উপনিবেশবিরোধী চেতনাকে তীব্র করে।
৩.ব্রিটিশ শোষণের প্রতিবাদ: ইংরেজদের বাণিজ্যনীতি ও রাজস্বনীতি যে জনবিরোধী, তা এই বিদ্রোহ স্পষ্ট করে তোলে। এর ফলে ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত চেহারা জনগণের সামনে উদঘাটিত হয়।
৪.জাতীয় চেতনার বীজ: এই বিদ্রোহ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের বীজ বপন করেছিল। পরবর্তী বিদ্রোহগুলো এই আন্দোলন থেকে প্রেরণা পেয়েছিল।
ব্যর্থতার কারণ:
৫.সংগঠনের অভাব: বিদ্রোহীদের মধ্যে দৃঢ় নেতৃত্ব ও স্থায়ী সংগঠন গড়ে ওঠেনি। ফলে আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি।
৬.অস্ত্রশক্তির অভাব: বিদ্রোহীরা মূলত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ সেনাদের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি।
৭.বিস্তৃত সমর্থনের অভাব: বিদ্রোহ মূলত উত্তরবঙ্গ ও বাংলার কিছু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। সর্বভারতীয় জনসমর্থনের অভাবে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
৮.ইংরেজদের দমননীতি: ইংরেজরা কঠোর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বিদ্রোহ দমন করে। এর ফলে বিদ্রোহীদের শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
উপসংহার: সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ সামরিক দিক থেকে ব্যর্থ হলেও ঐতিহাসিকভাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি বাংলার মানুষের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী চেতনা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিল, যা ভবিষ্যতের জাতীয় আন্দোলনের পথ সুগম করেছিল।
📝 3. হ্যালহেডের ‘A Grammar of the Bengal Language’ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কেন? বাংলা ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিন্স-এর ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
👉 উত্তর:
ভূমিকা:
হ্যালহেড ও চার্লস উইলকিন্স ছিলেন অষ্টাদশ শতকের বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার অগ্রদূত। তাঁদের উদ্যোগে বাংলা ভাষা ও ছাপাখানার বিকাশে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
১. বাংলা ব্যাকরণের প্রথম প্রচেষ্টা:
হ্যালহেডের A Grammar of the Bengal Language ছিল বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ। এর মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে বাংলার গঠন ও ব্যাকরণ সহজে বোধগম্য হয়েছিল।
২. বাংলার ভাষাগত মর্যাদা বৃদ্ধি:
গ্রন্থটি বাংলা ভাষাকে স্বতন্ত্র সাহিত্যিক মর্যাদা দিয়েছিল। এর ফলে বাংলা শুধু কথ্যভাষা নয়, একটি সাহিত্য ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. প্রশাসনিক প্রয়োজনে সহায়ক:
কোম্পানির শাসনকালে বাংলাভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা ছিল প্রবল। হ্যালহেডের এই গ্রন্থ ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা শেখার মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে।
৪. উইলকিন্সের মুদ্রণযন্ত্র প্রবর্তন:
চার্লস উইলকিন্স বাংলায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলা হরফ উদ্ভাবন করে মুদ্রণযন্ত্রে তা ব্যবহার করেন।
৫. বাংলা মুদ্রণ সাহিত্যর সূচনা:
উইলকিন্স প্রথম মুদ্রিত বাংলা গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্য মুদ্রণযুগে প্রবেশ করে।
৬. স্থায়ী সাংস্কৃতিক প্রভাব:
হ্যালহেড ও উইলকিন্সের উদ্যোগে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও মুদ্রণ শিল্প নতুন রূপ পায়। এর ফলে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ভিত্তি তৈরি হয়।
উপসংহার:
অতএব, হ্যালহেড বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়নে ও উইলকিন্স বাংলা মুদ্রণযন্ত্র গড়ে তোলায় বিশেষ অবদান রাখেন। তাঁদের অবদান বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
📝 4. উনিশ শতকের প্রথমার্ধে সতীদাহ প্রথা বিরোধী প্রচেষ্টাগুলির পরিচয় দাও। রামমোহন রায় কীভাবে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করেন?
👉 উত্তর:
ভূমিকা:
সতীদাহ প্রথা ছিল উনিশ শতকের শুরুতে বাংলার সমাজজীবনের এক ভয়ঙ্কর অমানবিক রীতি। এই অমানবিক প্রথা রদ করতে বহু চিন্তাবিদ, বিশেষত রামমোহন রায়, অক্লান্ত সংগ্রাম করেছিলেন।
১. প্রাথমিক সতীদাহ বিরোধী প্রচেষ্টা:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কয়েকজন খ্রিস্টান মিশনারি প্রথমে সতীদাহ প্রথার অমানবিকতা নিয়ে সমালোচনা করেন। সমাজের উদারমনস্ক কিছু ব্যক্তি এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে শুরু করেন।
২. মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি:
এই প্রথাকে সমাজের অমানবিকতা ও নারীর প্রতি অবিচারের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়। এর ফলে শিক্ষিত সমাজের একাংশ প্রথাটিকে প্রশ্ন করতে শুরু করে।
৩. রামমোহনের যুক্তিপূর্ণ আন্দোলন:
রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি শাস্ত্রসম্মত ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে সতীদাহ হিন্দু ধর্মে বাধ্যতামূলক নয়।
৪. গ্রন্থ রচনা ও প্রচার:
রামমোহন তাঁর রচনায় সতীদাহের অমানবিকতা তুলে ধরেন। তিনি সমাজে প্রচার চালিয়ে নারীর জীবনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান।
৫. প্রশাসনিক মহলে প্রচেষ্টা:
রামমোহন ব্রিটিশ সরকারের নিকট সতীদাহ প্রথা রদের জন্য আবেদন করেন। তিনি গভর্নর-জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ককে প্রভাবিত করতে সক্ষম হন।
৬. আইনি সাফল্য:
১৮২৯ সালে বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করেন। রামমোহনের প্রচেষ্টাই এই আইনের ভিত্তি স্থাপন করে।
উপসংহার:
অতএব, সতীদাহ প্রথা রদের প্রথম দিকের কিছু সচেতনতার পাশাপাশি রামমোহন রায়ের যুক্তি, প্রচার ও সংগ্রামই এ আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করে। তিনি শুধু বাংলায় নয়, সমগ্র ভারতে সামাজিক সংস্কারের অগ্রদূত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
📝 5. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তা ও শান্তিনিকেতন ভাবনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
👉 উত্তর:
ভূমিকা:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে কবি, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ। তাঁর শিক্ষাচিন্তা ভারতীয় ঐতিহ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার মিশ্রণে গড়ে ওঠে এবং শান্তিনিকেতন ছিল তারই বাস্তব রূপ।
১. শিক্ষার উদ্দেশ্য:
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন শিক্ষা শুধু তথ্য প্রদান নয়, মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি বিকাশের মাধ্যম। তাঁর মতে শিক্ষা ছিল মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার চর্চা।
২. প্রকৃতিনির্ভর শিক্ষা:
তিনি বিশ্বাস করতেন প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাই শান্তিনিকেতনে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চালু হয়েছিল।
৩. সৃজনশীল শিক্ষার গুরুত্ব:
কলা, সংগীত, সাহিত্য ও চিত্রকলার মাধ্যমে সৃজনশীল চর্চাকে তিনি শিক্ষার অংশ করেন। এতে ছাত্রদের কল্পনাশক্তি ও সৃষ্টিশীলতা বিকশিত হয়।
৪. আন্তর্জাতিকতা ও বিশ্বমানবতার বোধ:
রবীন্দ্রনাথ শিক্ষাকে শুধু জাতীয় সীমারেখায় আবদ্ধ রাখতে চাননি। শান্তিনিকেতন থেকে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক শিক্ষার ধারণা বাস্তবায়ন করেন।
৫. শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক:
তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে আন্তরিক ও আত্মিক। বিদ্যালয় হবে গৃহসদৃশ, যেখানে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে জ্ঞান আহরণ সম্ভব।
৬. শান্তিনিকেতনের ভাবনা:
১৯০১ সালে তিনি শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তা বিশ্বভারতীতে রূপান্তরিত হয়ে বিশ্বসংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র হয়ে ওঠে।
উপসংহার:
অতএব, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা ছিল প্রকৃতিনির্ভর, মানবিক ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। শান্তিনিকেতন তাঁর শিক্ষাভাবনার এক উজ্জ্বল বাস্তবায়ন, যা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।
📝 6. বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
👉 উত্তর:
ভূমিকা:
বাংলার সমাজে নিম্নবর্ণ হিন্দুদের প্রতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অবহেলা ও বঞ্চনা চলছিল। এই সামাজিক বৈষম্যের প্রতিবাদ হিসেবেই উনিশ শতকের শেষ ভাগ ও বিশ শতকের শুরুতে নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
১. আন্দোলনের সূচনা:
নমঃশূদ্র আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। পরে তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর এই আন্দোলনকে সাংগঠনিক রূপ দেন।
২. সামাজিক বৈষম্যের প্রতিবাদ:
উচ্চবর্ণ হিন্দুদের অবজ্ঞা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নমঃশূদ্ররা ঐক্যবদ্ধ হন। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে সমঅধিকার অর্জন।
৩. ধর্মীয় চেতনার ভূমিকা:
হরিচাঁদ ঠাকুর মতুয়াবাদ প্রচার করে নমঃশূদ্রদের আত্মসম্মান জাগ্রত করেন। তিনি ভক্তি আন্দোলনের ধারা অনুসরণ করে সমতার বার্তা ছড়িয়ে দেন।
৪. শিক্ষার প্রসার:
গুরুচাঁদ ঠাকুর শিক্ষাকে আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার করেন। তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে নমঃশূদ্র সমাজকে শিক্ষিত করে তোলেন।
৫. রাজনৈতিক প্রভাব:
নমঃশূদ্র আন্দোলনের ফলে বাংলার রাজনীতিতে নিম্নবর্ণদের সংগঠিত শক্তি দেখা দেয়। পরবর্তীতে তারা প্রাদেশিক পরিষদ ও নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. সামাজিক উন্নতি:
আন্দোলনের ফলে নমঃশূদ্র সমাজে আত্মসম্মান ও স্বাধিকারের চেতনা বৃদ্ধি পায়। এতে বাংলার সামাজিক কাঠামোয় পরিবর্তনের স্রোত বইতে শুরু করে।
উপসংহার:
অতএব, নমঃশূদ্র আন্দোলন ছিল বাংলার সামাজিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির আত্মসম্মান ও অধিকার অর্জনের সংগ্রাম হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
📝 7. উনিশ শতকের বাংলায় সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজগুলির কীরূপ ভূমিকা ছিল?
👉 উত্তর:
ভূমিকা:
উনিশ শতকের বাংলায় সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মসমাজ ছিল এক অগ্রগণ্য শক্তি। রাজা রামমোহন রায়ের হাতে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন পরবর্তীকালে সমাজসংস্কারের নানা ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
১. একেশ্বরবাদ প্রচার:
ব্রাহ্মসমাজ হিন্দুধর্মের কুসংস্কার ও বহুদেবতাবাদকে অস্বীকার করে একেশ্বরবাদে বিশ্বাস স্থাপন করে। এতে সমাজে যুক্তিবাদী ধর্মভাবনার বিস্তার ঘটে।
২. সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন:
রামমোহন রায়ের উদ্যোগে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধাচরণে ব্রাহ্মসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ফলে ১৮২৯ সালে আইন করে এই প্রথা রদ হয়।
৩. নারীশিক্ষার প্রসার:
ব্রাহ্মসমাজ নারীশিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। তারা নারীর পুনর্বিবাহ ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেয়।
৪. কুসংস্কার বিরোধিতা:
ব্রাহ্মসমাজ জাতিভেদ, অন্ধবিশ্বাস ও পুরোহিততন্ত্রের বিরোধিতা করে। এতে সমাজে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী মূল্যবোধের প্রসার ঘটে।
৫. সামাজিক ন্যায় ও সমতার প্রচার:
তারা সমাজে সমঅধিকার ও মানবমর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালায়। জাতপাত ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হয়।
৬. রাজনৈতিক ও জাতীয় চেতনা:
ব্রাহ্মসমাজ কেবল সামাজিক নয়, জাতীয়তাবাদী চেতনাকেও উজ্জীবিত করে। তাদের সংস্কারমূলক কার্যকলাপ নবজাগরণের মূল ভিত গড়ে তোলে।
উপসংহার:
অতএব, উনিশ শতকের বাংলায় সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজ ছিল অগ্রণী পথপ্রদর্শক। তারা ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিকতার পথে ভারতীয় সমাজকে এগিয়ে দেয়।
📝 8. বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।
👉 উত্তর:
ভূমিকা:
বিংশ শতকের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেস ও গাঁধীবাদের পাশাপাশি বামপন্থী শক্তিগুলিও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামকে শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহত্তর গণআন্দোলনের রূপ দিতে চেয়েছিল।
১. সমাজতান্ত্রিক ভাবনার বিস্তার:
রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ভারতীয় তরুণদের মধ্যে নতুন চেতনা সৃষ্টি করে। ফলে শ্রমিক শ্রেণিভিত্তিক সংগ্রামের ধারণা জনপ্রিয় হতে থাকে।
২. কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা:
১৯২০-এর দশকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করে কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করে।
৩. শ্রমিক আন্দোলন:
বামপন্থীরা কারখানা ও খনি অঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলে। ধর্মঘট, মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় তারা অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
৪. কৃষক আন্দোলন:
বামপন্থীরা জমিদারি প্রথা ও মহাজনি শোষণের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করে। তেভাগা আন্দোলনসহ একাধিক কৃষক সংগ্রামে তারা নেতৃত্ব দেয়।
৫. ছাত্র ও যুব আন্দোলন:
বামপন্থী সংগঠনগুলো ছাত্র ও যুব সমাজকে জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
৬. কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক:
বামপন্থীরা কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল (CSP) গঠন করে মূলধারার জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত হয়। তারা স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমাজতান্ত্রিক রূপ দিতে চেয়েছিল।
উপসংহার:
অতএব, বামপন্থীরা উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক-কৃষক ভিত্তিক বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তুলে জাতীয় সংগ্রামকে আরও বিস্তৃত করে। তাদের ভূমিকা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমাজতান্ত্রিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
<<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>>